সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও আইন অমান্য করে প্রশাসনের নাকের ডগায় রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে চলছে রমরমা কোচিং-প্রাইভেট বাণিজ্য। পুরানো কৌশল পরিবর্তন করে শিক্ষকরা নতুনভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের এই শিক্ষা বাণিজ্য।
শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে গোদাগাড়ী সদরে অবস্থিত জিনিয়াস কোচিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায় খোলামেলা ভাবেই কোচিং পরিচালিত হচ্ছে। যেখানে বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস করছে আর গোদাগাড়ী আফজি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক মোঃ আমিনুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন।
এ সময় ছবি তোলার বিষয়টি স্কুল শিক্ষক মোঃ আমিনুল ইসলাম জানতে পেরে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে এই প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ ও গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামীলীগের এক নেতার নাম বলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে গোদাগাড়ী মডেল থানায় নিরাপত্তা চেয়ে সাংবাদিক আব্দুল বাতেন সাধারণ ডায়েরী করেছে।
উপজেলার সরকারি স্কুল কলেজ ও এমপিওভুক্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বাসা ভাড়া নিয়ে বেনামে চালাচ্ছেন এই কোচিং বাণিজ্য। কোন কোন শিক্ষক নিজের বাড়িতে ৩০/৩৫ জোড়া বেঞ্চ তৈরী করে ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। একদিন পর পর এক একটি ব্যাচ পড়ানো হয়। এভাবে ৭/৮টি ব্যাচ পড়ানো হচ্ছে। ফলে ওই সব স্কুলের শিক্ষকরা বিভিন্ন অজুহাতে অনুপস্থিত থেকেও দেদারসে চালাচ্ছে কোচিং প্রাইভেট বাণিজ্য।
কেউ কেউ ক্ষমতাসীন দলের নেতা সেজে কোচিং সেন্টার চালাচ্ছে এবং বীরদাপটে বলছেন সারাদেশে অভিযান চললেও আমাদের কোচিং সেন্টারে কেউ অভিযান চালাতে পারবেন না, সব ম্যানেজ করা আছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব অবৈধ কার্যক্রম চলায় দরিদ্র শিক্ষার্থী, অভিাবক ও সচেতন মহলের প্রতিনিধিরা হতাশা জানিয়েছেন। আর এসব কোচিং সেন্টারে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ও বিকেলে এমন কি সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে শিক্ষকদের প্রাইভেট পাঠদান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা সদরেই রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক কোচিং সেন্টার। এর মধ্যে উপজেলার পশু হাসপাতাল রোর্ড, সততা ক্লিনিকের গা ঘেষে রাজকীয় ভবনে চলছে কোচিং সেন্টার, ড্যাংপাড়া বিদ্যুৎ অফিস এলাকায়, গোদাগাড়ী বালিকা বিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকায়, সুলতানগঞ্জ, মহিশালবাড়ী, শিবসাগর, পিরিজপুর, বিদিরপুর, প্রেমতলী, রাজাবাড়ী, বাসুদেবপুর, ফরিদপুর, কাশিমপুর, কাঁকনহাটসহ পাড়া মহল্লার বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকরা গড়ে তুলেছেন তাদের নিজস্ব প্রাইভেট কোচিং সেন্টার। গোদাগাড়ী পৌরসভা, কাঁকনহাট পৌরসভা ও উপজেলায় রয়েছে দেড় শাতাধিক কোচিং সেন্টার। আইন থাকলেও এর বাস্তব প্রয়োগ না থাকায় দিনে দিনে কোচিং, প্রাইভেট সেন্টার ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ‘স্কুল কলেজ মাদরাসাগুলোতে ঠিকভাবে ক্লাস হয় না। বছরের শুরুতে বিনামূল্যে বই সরকার দিলেও সময়মত ক্লাস শুরু হয় না। বিভিন্ন অজুহাতে জানুয়ারি মাস পার করে ফেব্রুয়ারি মাসেও অনেক স্কুল কলেজে ফুল ক্লাস শুরু হয়নি। কলেজগুলোতে শিক্ষকদের কথিত অফডের কারণে সপ্তাহের ৩/৪ দিন পালা করে শিক্ষকগণ কলেজে আসেন না। কলেজে ৯টায় ক্লাস শুরু করে দুপুরের আগে তালা ঝুলিয়ে দেন’।
কোচিংয়ে পড়ানোর বিষয়ে একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে অনেকেই বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই যার ২/৪ জন্য শিক্ষক প্রাইভেট কোচিং বাণিজ্যের সাথে যুক্ত নেই। কিন্তু আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনা। কারণ তারা দলীয় ছত্রছায়ায় অনেক প্রভাবশালী। কিছু কিছু শিক্ষক তাদের বাসা বাড়িতে প্রকাশ্যে প্রাইভেট পড়িয়ে থাকেন।’
এ বিষয় নিয়ে ফেব্রয়ারি মাসের আইন শৃংঙ্খলা সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আলোচনাও হয়। তবে এত কিছুর পরেও চলছে কোচিং সেন্টার।
কোচিং সেন্টার চালানো ও সাংবাদিককে হুমকির বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শিমুল আকতারকে জানালে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।