Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

মোদির কড়া বার্তায় যুদ্ধের আশঙ্কা, পারমাণবিক হামলা চালাতে পারে পাকিস্তান!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৯:০৭ PM
আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৯:০৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


জম্মু-কাশ্মীরে সামরিক বহরে সিআরপিএফের বাসে আত্মঘাতী হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। এমন ভয়াবহ হামলার সমুচিত জবাবের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারত। ধারণা করা হচ্ছে পাকিস্তানে হামলার ঘটনা ঘটলে দেশটিও পাল্টা হামলা চালাতে দ্বিধা করবে না। কারণ ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। আর পাকিস্তান তো বারবারই সতর্কবার্তা দিয়ে রেখেছে যে, হামলা হলে তারা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিতীয়বার ভাববে না।

বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) কাশ্মীরের পুলওয়ামার অবন্তীপুরায় চালানো এই হামলায় দেশটির কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীর (সিআরপিএফ) ৪০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪০ জনেরও বেশী। এ হামলার দায় ইতিমধ্যে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী জয়েশ-এ-মোহাম্মদ স্বীকার করেছে।

এরপর এক বিবৃতিতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, জঙ্গি হামলার যোগ্য জবাব দেবে ভারত। এই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে তিনি বলেন, যারা যারা জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেবে না ভারত।

তিনি আরো জানান, আমরা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, নিশ্চিন্ত থাকুন হামলার যোগ্য জবাব দেওয়া হবে।

হামলার ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, পুলওয়ামায় সিআরপিএফ জওয়ানদের ওপর হামলার ঘটনা নিন্দনীয়। আমি এই ধরণের কারপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা করছি। আমাদের বীর নিরাপত্তাকর্মীদের বলিদান বিফলে যাবে না।বীর শহিদদের পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে গোটা দেশ।আহতরা দ্রুত আরোগ্যলাভ করুন।

কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেছেন, সিআরপিএফ জওয়ানদের ওপর এভাবে কাপুরুষোচিত হামলায় তিনি অত্যন্ত বিরক্ত। পুলওয়ামায় হামলা নিয়ে তিনি ট্যুইটে লিখেছেন, শহিদদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।এমন হামলায় দেশটির সকল রাজনৈতিক নেতারা সরব হয়ে উঠেছেন। সকলে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরেই নয়াদিল্লী দাবি করে আসছে পাকিস্তান তার দেশে সক্রিয় এ জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। জইশ-ই-মোহম্মদের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাও চেয়ে আসছে তারা। জঙ্গিগোষ্ঠীটির নেতা মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসীর তালিকায় রাখতেও ভারত অনেক দিন ধরেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে চাপ দিয়ে আসছে। তবে হামলার নিন্দা করলেও মাসুদ আজহারকে বিশ্ব সন্ত্রাসী ঘোষণা না করার ব্যাপারে আগের অবস্থানেই অনড় রয়েছে চীন।

নরেন্দ্র মোদী পাকিস্তানকে ইঙ্গিত করে বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ যে রাস্তা দিয়ে চলছে তা তাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। সারা ভারতবাসী এই হিংসাত্মক ঘটনার উপযুক্ত জবাব দেবে। পৃথিবীর বহু দেশ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। এই আতঙ্কবাদী সমূলে উৎপাটিত করার জন্য সারা পৃথিবীকে একত্রে লড়াই করতে হবে।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ঘটনার পরে প্রধানমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার শুরু হয়ে গিয়েছে। দেশটির অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়েছেন, পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে যা যা দরকার সমস্তটাই করবে ভারত। অপরাধীদের যোগ্য শাস্তি দেওয়া হবে।

ইতোমধ্যে পাকিস্তানকে ১৯৯৬ সালে দেওয়া মোস্ট ফেভারড নেশনের তকমা প্রত্যাহার করে নিয়েছে ভারত। শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর এ ঘোষণা দেন অরুণ জেটলি। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ রূপে একঘরে করে দেওয়া হবে পাকিস্তানকে।

সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে ভারতীয় আরেকটি অনলাইন গণমাধ্যম এবেলার খবরে বলা হয়েছে, হামলার ঘটনায় জাতীয় নিরাপত্তা বৈঠক করেছেন মোদী। এনএসএস প্রধান অজিত ডোভালও বৈঠকে বসেছেন।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, জম্মু-কাশ্মীরে হামলার ঘটনায় দেশটিতে অবস্থিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত সোহায়েল মাহমুদকে তলব করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে কঠিন শাস্তি দিতে প্রস্তুত আছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। কিন্তু প্রতিশোধ নেওয়ার এই পরিকল্পনা মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে বলা হচ্ছে। কারণ ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। আর পাকিস্তান তো বারবারই সতর্কবার্তা দিয়ে রেখেছে যে, হামলা হলে তারা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবে না।

এদিকে ইসলামাবাদ কাশ্মীরে হামলার তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে এবং হামলা নিয়ে তাদের ওপর আসা সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, হামলার ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে ভারতের সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন মোদী। তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনীকে অবাধ ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাল্টা আঘাত কবে করা হবে, কীভাবে করা হবে এবং কোথায় করা হবে, সে বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীকে।

মোদীর এই মন্তব্যে ফের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর জল্পনা শুরু হয়েছে। যেভাবে সেনা প্রত্যাঘাত করতে চায়, সেভাবেই করতে পারে- এ কথায় আবার অনেকে মনে করছেন এবার অন্য কোনও ধাঁচের সামরিক পদক্ষেপ নেবে কিনা ভারত। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে চলছে আলোচনা ও বিশ্লেষণ।

প্রসঙ্গত, আড়াই বছর আগে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে উরি সেনা ছাউনিতে হামলার পর ভারতজুড়ে এক সুরে নিন্দার ঝড় উঠেছিল। আমজনতা থেকে রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রী, সাবেক সেনা কর্মী-কর্মকর্তা মহলে জন্মেছিল তীব্র ক্ষোভ। সেসময় নিহত হয়েছিলেন ১৯ সেনাকর্মী।

Bootstrap Image Preview