Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ইয়েমেন সীমান্তে বাংলাদেশি সেনা নিয়োগ,সংসদে ক্ষোভ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১০:৪৬ PM
আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১০:৪৬ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


ইয়েমেন সীমান্তে বাংলাদেশের সেনা নিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও বিরোধী দল জাতীয় পর্টির সদস্য ফখরুল ইমাম।

সৌদি আরবের সঙ্গে ওই চুক্তিতে সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা পরীক্ষা করার দাবিসহ বিষয়টি নিয়ে সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি ও স্পিকারের রুলিং চেয়েছেন তারা।

আজ বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, বিবিসি গত পরশু সংবাদ দিয়েছে যে, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশ ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিরক্ষা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করছে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করে নাই। ওই সমঝোতা চুক্তির আওতায় ইয়েমেন সীমান্তে বাংলাদেশের ১৮০০ সেনা নিয়োগ দেওয়ার কথা।

তিনি বলেন, সৌদি আরবে ইসলামী সেনাবাহিনী কাউন্টার টেরোরিজম কমিশন-আইএমসিটিসি বাংলাদেশ থেকে একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলসহ ৪ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগের জন্য নামও দেওয়া হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। ২০১৫ সালে যখন সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী জোটে বাংলাদেশ নাম লিখিয়েছিলো তখনই আমরা বলেছিলাম- আমাদের জন্য কতটা ইতিবাচক হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ জরুরি, খটকা ছিলো তখনই।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি আরো বলেন, সেই সময় সৌদি আরব যেটাকে ৩৪ জাতি সামরিক জোট বলেছিলো, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইনিয়ে বিনিয়ে তখন বলেছিলো- এটা একটি সন্ত্রাসবিরোধী সমন্বিত উদ্যোগ। সেই সময় জনগণের উদ্বেগ এবং আশঙ্কাকে নিরসন করে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, সৌদি আরবে যে দুটি মসজিদ রয়েছে মক্কা এবং মদিনায় হাদেম শরীফ— যদি আক্রমণের মুখে পড়ে তখনই কেবল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাঠাবে। এর বাইরে কখনো কোনো সেনাবাহিনী পাঠাবে না।

তিনি বলেন, আমরা জেনেছি এই চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হওয়ার পর্যায়ে। এরমধ্য দিয়ে আমাদের সংবিধানের ২৫ বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না সেটা অবশ্যই পরীক্ষা করা প্রয়োজন। দুই দিক দিয়ে বিষয়টি পর্যালোচনার দাবি রাখে। প্রথমটি হচ্ছে— এই সেনাবহিনী মোতায়েন জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের সাথে সঙ্গিতপূর্ণ কিনা। দ্বিতীয়ত, আমাদের সেনাবাহিনীর বিদেশে উপস্থিতিতে আমাদের রাজনৈতিক ভাবমুর্তি কী হবে। আমরা জানি ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্ব যে সমঝোতা এবং যুক্তরাষ্ট্র মিলে সেখানে প্রতিমুহূর্তে আক্রমণ চালাচ্ছে বিদ্রোহীদের দমন করতে। আমরা জানি, আরব দেশের বসন্তের বিকৃত প্রয়োগ ঘটিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে কি ধরনের পরিণতি সৃষ্টি করেছিলো এবং সৌদি আরব সেখানে কোন সুবিধা নিতে যাচ্ছে।

মেনন আরো বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব স্পষ্ট করে বলেছেন— ইয়েমেনের ঘটনা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানবিক বিপর্যয়। সেখানে আমাদের সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়ে সীমান্তে মাইন অপসারণ করবে। আমাদের সেনাবাহিনী একদিন কুয়েতে মাইন অপসারণ করে সুনাম অর্জন করেছিল ইরাকি আগ্রসনের বিরুদ্ধে। তারা কেন মাইন অপসারণের নামে নিজেদের জীবন দেবে? যেটা সংবিধান অনুমোদন করে না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি ও স্পিকারের রুলিং চেয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, যখন ইয়েমেন সীমান্তে আমাদের সেনাবাহিনী থাকবে খবু স্বভাবিকভাবেই একটি বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি হবে। আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট করে বলেছে— কোনো বিরোধপূর্ণ ঘটনায় আমাদের সেনাবাহিনী বা বাংলাদেশ অংশ নেবে না। আমরা এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো বিবৃতি পাইনি। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৩০০ বিধিতে একটি বিবৃতি দেবেন এবং আপনিও স্পিকার হিসেবে বিষয়টি সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কি না, আপনার কাছ থেকে রুলিং আশা করছি।

এরপর ফখরুল ইমাম বলেন, আমি এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত। সংসদ রাষ্ট্রের একটা সাংঘাতিক অঙ্গ। এই যে চুক্তিটা ১৪৫ (ক) বলা আছে, কোনো বৈদেশিক চুক্তি হয় তাহলে সেটা রাস্ট্রপতির কাছে জমা দেবেন এবং রাষ্ট্রপতি সেটা সংসদে দেবেন। এটা আলোচনা করলে কী অসুবিধা ছিল? এটা নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করলে কী অসুবিধা হতো? আমাদের না জানিয়ে সংসদকে পাশ কাটিয়ে এটা কেন করা হচ্ছে? যদি সংসদের অধিবেশন না চলতো তাহলে এক কথা। সংসদকে পাশ কাটিয়ে, সংসদকে মূল্যহীন ভেবে সরকারের এই চুক্তি করা কতটুকু যুক্তযুক্ত হয়েছে সেটা আপনার ওপর বিবেচনার জন্য ছেড়ে দিলাম।

Bootstrap Image Preview