১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসেই আড়ম্বরপূর্ণ এক বিয়ের অনুষ্ঠানের সাক্ষী হয়েছে যশোরের বাঘারপাড়াবাসী। কারণ এ দিনে আড়াইশ’ কিলোমিটার দূর থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে এলেন বরের বাবা অসুস্থ মুজিবুর রহমান। আর তার ছেলে প্রকৌশলী মহিদুল ইসলাম মিশান দেড়শ’ বরযাত্রী নিয়ে এলেন সড়কপথে।
জানা যায়, বরের বাবা প্যারালাইজড। কিন্তু ‘নিজে ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে থেকে পুত্রবধূকে তুলে নেবেন’ এমনই ইচ্ছে ছিল তার। আর ছেলে ও পুত্রবধূর ইচ্ছা, ‘ভালোবাসা দিবসে হোক তুলে নেয়ার এই আনুষ্ঠানিকতা। এমন অবস্থায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হল ভালোবাসা দিবসে আর অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও উপস্থিত ছিলেন বরের বাবাও।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার লেবুতলা গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে এক্সিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মহিদুল ইসলাম মিশান। ছয়মাস আগে পারিবারিক পছন্দে তিনি বিয়ে করেন যশোরের বাঘারপাড়া সদরের মহিরণ গ্রামের ঠিকাদার জামসেদ খান চঞ্চলের মেয়ে নাদিরা খান জেমিকে। বিয়ের সময় তেমন আনুষ্ঠানিকতা হয়নি। জেমি বরিশাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করেন।
জেমি জানিয়েছেন, তার পরীক্ষা আর বিশেষ দিনের অপেক্ষায় দেরিতে তুলে নেয়ার অনুষ্ঠান করতে হয়েছে। মিশান ও জেমি সিদ্ধান্ত নেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসেই অনুষ্ঠান হবে। এ জন্য ছয়মাস ধরেই এদিনটির অপেক্ষায় ছিলেন তারা।
কিন্তু অসুস্থ বাবা মুজিবুর রহমান নিজে অনুষ্ঠানে থাকতে চান। তাকে কীভাবে নেবেন মিশান? সেই সমাধান মিলল ভাড়া করা হেলিকপ্টারে।
মিশান জানিয়েছেন, দূরের পথ হওয়ায় তিনি আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু বান্ধব নিয়ে বুধবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জ থেকে যাত্রা শুরু করেন। যশোর শহরে পৌঁছে কয়েকটি আবাসিক হোটেলে রাত্রিযাপন করেন তারা। বৃহস্পতিবার যশোর থেকে এসে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ছয়মাস আগে তার বাবা ব্রেইনস্ট্রোকে প্যারালাইজড হয়েছেন। সড়ক পথে বাবাকে অনুষ্ঠানে আনা সম্ভব ছিল না। যে কারণে হেলিকপ্টারযোগে তাকে আনা হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে মিশান দেড়শ লোকের বহর নিয়ে হাজির হন জেমির বাড়িতে। আর দুপর ১টায় হেলিকপ্টারযোগে আসেন মিশানের বাবা মুজিবুর রহমান। বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে অবতরণ করে হেলিকপ্টার। এ সময় হাজারো উৎসুখ মানুষ সেখানে উপস্থিত হয়। সেখান থেকে হুইল চেয়ারে করে পাঁচ’শ মিটার দূরে অনুষ্ঠানস্থলে যোগ দেন তিনি।