সাবেক পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী ভোলা-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মাননীয় সংসদ সদস্য যে এলাকার কথা বলছেন, ওখানে কিন্তু “জ্যাকব টাওয়ার” হয়ে গেছে। আমার মনে হয়, সেই “জ্যাকব টাওয়ার” দেখতেই বহু লোক যায়। আমার মনে হয়, এটা নিয়েই উনার সন্তুষ্ট থাকা উচিত।’
বুধবার জাতীয় সংসদে আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সম্পূরক প্রশ্নে সাংসদ জ্যাকব তার নির্বাচনী এলাকায় অতীতে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি দাবি করে সেখানে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান করার কথা বলেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোলার বিবরণ দিয়েছেন। যখনই যে সরকার এসেছে ভোলায় কিন্তু কেউ না কেউ মন্ত্রী থেকেছেন। আর ভোলার উন্নয়ন হয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। মাননীয় সংসদ সদস্য যে এলাকার কথা বলছেন, ওখানে কিন্তু “জ্যাকব টাওয়ার” হয়ে গেছে। আমার মনে হয়, সেই “জ্যাকব টাওয়ার” দেখতেই বহু লোক যায়। আমার মনে হয়, এটা নিয়েই উনার সন্তুষ্ট থাকা উচিত।’
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুরে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যখনই আমি রাজনীতি থেকে অবসর নেব, আমি আমার গ্রামে চলে যাবো এবং এটিই আমার সিদ্ধান্ত। এরপর আজ বুধবার জাতীয় সংসদে গ্রামে থাকতে চাওয়ার কারণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সংসদে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের (ময়মনসিং-৮) সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে গ্রামে জন্মেছি ও বেড়ে উঠেছি সে গ্রামের স্মৃতি বড় মধুর। গ্রামের কাদা মাটি মেখে বড় হয়েছি। এ স্মৃতি কোনো দিন ভোলা যায় না, মোছা যায় না। গ্রামের নির্মল বাতাস এখনও আমাকে টানে। ইট পাথরের এই নগরী আর ভালো লাগে না। গ্রামের নির্মল বায়ু, খোলা মেলা আকাশ। প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নেয়া যায়। এ কারণে অবসরে গ্রামে থাকা আমার খুব আকাঙ্ক্ষা।
শেখ হাসিনা বলেন, সবুজ শ্যামল সুন্দর পরিবেশ সবসময় আমাকে টানে। কাজেই আমার একটা ইচ্ছা আমি মনে করি গ্রামের নির্মল বাতাস, সুন্দর পরিবেশ এটা মানুষকে স্বাভাবিকভাবেই অনেক সুস্থ রাখে। মন ভালো থাকে। শহরের ইট-কাঠের বদ্ধ আবহাওয়া পরিবেশ থেকে গ্রামের উন্মুক্ত পরিবেশটা সব সময় আমাকে টানে।
অবসরে গ্রামে গিয়ে বসবাসের ব্যাপারে তিনি বলেন, আসলে আমাদের গ্রাম আমাদের প্রাণ। গ্রামের মানুষদের আমরা যেমন নাগরিক সুবিধা দিতে চাই, অবস্থা একটু ভালো হলেই সবাই গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসতে চাই, এটা আমার পছন্দ না। আমি ছোটবেলায় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছি। আমি বড় হয়েছি গ্রামের কাদামাটিতে। বড় হয়েছি খালে ঝাঁপ দিয়ে, গাছে উঠে নানাভাবে খেলাধুলা করেই গ্রামে বড় হয়েছি। হয়ত একটা পর্যায়ে চলে এসেছি । কিন্তু গ্রামের টান কখনও মুছে যায়নি। মুছে যাবে না। এখনও মনটা পড়ে থাকে প্রিয় গ্রামে। সবসময় একটা আকাঙ্ক্ষা- যখন আমি অবসর নেব তখনই গ্রামের বাড়িতে গিয়ে থাকব।
বিএনপির নির্বাচিত প্রার্থীদের সংসদে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ১০ বছরের যে উন্নয়ন, সেই উন্নয়নের সফলতার জন্যই জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে অল্প সিট পেয়েছে, সেই অভিমানে তারা সংসদে আসছেন না। আমি মনে করি, এটা একটি রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ ভোটের মালিক জনগণ। তারা যাকে খুশি তাকে ভোট দেবেন। সেভাবেই তারা দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, যদি তারা পার্লামেন্টে আসে আর তাদের যদি কোনো কথা থাকে তা বলার সুযোগ পাবেন। এই সুযোগটা শুধু সংসদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এখন মিডিয়ায় সংসদের সবকিছু প্রচার হয়। তার মাধ্যমে সারা দেশবাসী তা জানতে পারবে। এই সুযোগটা কেন তারা হারাচ্ছে তা আমি জানি না। তবে আমি তাদের আহ্বান করব- যারা নির্বাচিত সংসদ সদস্য তারা সবাই পার্লামেন্টে আসবেন, বসবেন এবং যার যার কথা তারা বলবেন। এটাই আমি আশা করি। কাজেই আমি তাদের সেই আহ্বান জানাচ্ছি।