দীর্ঘ নয় বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে গেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাদের এ অবস্থান দেখা যায়। এ সময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আজ সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে মধুর ক্যান্টিনে প্রবেশ করেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া, সহ-সম্পাদক মামুন খান প্রমুখ।
এদিকে ছাত্রদলের মধুর ক্যান্টিনে যাওয়ার খবর পেয়ে সকাল ১০টার পর থেকেই মধুর ক্যান্টিনে যেতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হল পর্যায়ের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধুর ক্যান্টিনে স্বাগত জানান।
ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা টেবিলে বসে চা পান করেন। তবে সেখানে তাদের তিন দিক থেকে ঘিরে বিরতিহীনভাবে স্লোগান দিতে থাকেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি প্রায় নয় বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল করে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল। ওই দিন সকালে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে মিছিল বের করেন তারা। ওই দিনের মিছিলে কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে ছাত্রদল সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল ও সমাবেশ করে। ওই বছরের ১৮ জানুয়ারি ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল বের করলে ছাত্রলীগের হামলার মুখে পড়ে। এতে সে সময়ের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। এরপর আর ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে মিছিল করতে দেখা যায়নি। তবে এর পরের বছর ওই হামলার এক বছর পূর্তিতে হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে ছাত্রদল শাহবাগ থেকে থেকে মিছিল বের করে ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করে। তবে পুলিশি বাধার কারণে ছাত্রদলের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
গত সোমবার সকালে ঢাবির নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১১ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়ন বিতরণ শুরু ১৯ ফেব্রুয়ারি। চলবে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মনোনয়ন ফরম জমা দিতে হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি।
মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘নিজ নিজ হল থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে হবে এবং হলেই জমা দিতে হবে।’
তিন দশক পর আদালতের নির্দেশে ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে, তারপর আর নির্বাচন হয়নি।
দীর্ঘদিন পর এবার ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়ার সাথে থেকে ভোটগ্রহণ কোথায় হবে, তা নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়।
আগের মতো হলগুলোতে ভোটকেন্দ্র স্থাপনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তকে ছাত্রলীগ স্বাগত জানালেও ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগগুলো একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবি তোলে।
দীর্ঘদিন ধরে না হওয়া ডাকসুর নির্বাচন চেয়ে আদালতে রিট আবেদন হয়েছিল, তাতে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশনা আসে গত বছর হাই কোর্ট থেকে।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনে ওই আদেশ স্থগিত করেছিল আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। আপিল বিভাগ গত ৬ জানুয়ারি সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিলে নির্বাচন আয়োজনের বাধা কাটে।
এরপর নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমানকে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং আরও পাঁচজনকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কারা কারা ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন তা ঘোষণা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যারা প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে অনার্স, মাস্টার্স, এমফিলে অধ্যয়নরত তারাই কেবল ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন। এক্ষেত্রে কারও বয়স ৩০ বছরের ওপরে হলে তারা ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন না।
এ ছাড়া সান্ধ্যকালীন বিভিন্ন কোর্স, প্রোগ্রাম, প্রফেশনাল এক্সিকিউটিভ, স্পেশাল মাস্টার্স, ডিপ্লোমা, এমএড, পিএইচডি, ডিবিএ, ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স, সার্টিফিকেট কোর্স অথবা এ ধরনের কোর্সে অধ্যয়নরতরা ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। প্রত্যেক হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।