Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

রাজীব আল আরাফাত, গাজীপুর প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৯:৩৭ PM
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৯:৪৪ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীদের উদ্দেশে বলেছেন, আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে সকলকে কঠোর পরিশ্রম ও সততার সঙ্গে একযোগে কাজ করতে হবে। দেশের সর্ববৃহৎ বাহিনী হিসেবে আপনাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সততা, সাহস ও আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করবেন।

মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুরের সফিপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৯তম জাতীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, দ শের সামগ্রিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হল শান্তিপুর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ। আপনারা এ পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপুর্ণ অংশীদার। আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চাই। তাই আসুন আমরা সন্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান ভাষা আন্দোলনের মাসে শুরুতেই আমি ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। এ বাহিনীর গর্বিত সদস্য আনসার কমান্ডার আব্দুল জব্বার ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য আত্মাহুতি দেন। আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি ভাষা আন্দোলনের পথিকৃত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যার নেতৃত্বে পেয়েছি আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি জাতীয় চার নেতার প্রতি। স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনদের। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আনসার বাহিনীর ৬৭০ জন সদস্য শহীদ হন। আমি আনসার বাহিনীর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। এ বাহিনীর ১২ জন বীর সদস্য ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার প্রধানকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করেন। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা এ বাহিনীকে একটি শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। সময়ের পরিক্রমায় আনসার এবং ভিডিপি বাহিনী একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের সর্ববৃহৎ জনসম্পৃক্ত বাহিনী। এ বাহিনীর প্রায় ৫৫ হাজার পুরুষ এবং মহিলা আনসার সদস্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ স্থাপনায় জনসম্পদ রক্ষা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। অন্যদিকে ২টি পুর্নাঙ্গ মহিলা ব্যাটালিয়নসহ ৪১টি ব্যাটালিয়নের প্রায় ১৭ হাজার সদস্য পার্বত্যঞ্চল ও সমতলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত স্ট্রাইকিং ফোর্স ‘এএসএফ’ দেশের অভ্যন্তরে কূটনৈতিক জোনের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোট কেন্দ্রে প্রায় ৫ লাখ আনসার-ভিডিপি সদস্যগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে ভোটকেন্দ্র ও ভাটারদের নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্বপালন করেছেন। দায়িত্ব পালনের সময় ৫ জন আনসার সদস্য জীবন দিয়েছেন। আমি তাদেরও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আজকের সমাবেশ অনুষ্ঠানে তাঁদের ‘মরনোত্তর সাহসিকতা’ পদক দেওয়া হয়েছে। দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এ বাহিনীর সদস্যগণ খেলাধুলা ও দেশীয় চর্চার মাধ্যমে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছেন। জাতীয় সঙ্কটকালে এবং জরুরী মূহুর্তে আপনারা কর্মদক্ষতা ও সফলতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। প্রতি বছর দেশের জাতীয় সামাজিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসবে ব্যাটালিয়ন ও অঙ্গীভুত আনসার সদস্যগণ আইনশৃঙ্খলা ও জন নিরাপত্তা রক্ষা, জঙ্গীবাদ এবং মাদক প্রতিরোধে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার। আমাদের সরকার বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে এবং তা অব্যাহত আছে।

'উল্লেখযোগ্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আনসার বাহিনীকে ১৯৯৮ সালে সর্বোচ্চ সম্মান জাতীয় পতাকা প্রদান, বিসিএস কর্মকর্তাগণের পদেও মনোন্নয়ন, ৬৭২ জন মহিলা আনসারের পদ স্থায়ীকরণ এবং তাদেরও চাকরিকাল শতভাগ গণনা নির্দেশনা জারী। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ, কক্সবাজারেও সম্পুর্ণ নতুন একটি ব্যাটালিয়ন গঠন ও ২টি গার্ড ব্যাটালিয়ন গঠনের কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। ঐতিহাসিক মুজিব নগরের নিরাপত্তা রক্ষায় ১টি ব্যাটায়িন গঠন করা হবে।'

এ ছাড়াও ‘সেবা ও সাহসিকরা’ পদক প্রবর্তন, আনসার সদস্যদেরও ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধি, ১৫টি মডেল আনসার ব্যাটালিয়ন সদরদফতর নির্মাণ, ১১ হাজার ৬৬ জন উপজেলা আনসার কোম্পানী কমান্ডার এবং ইউনিয়ন আনসার প্লাটুন কমান্ডারের মাসিক ভাতা অনুমোদন। জননিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে আপনারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। আপনাদের যে কোন সমস্যা সমাধানে আমাদের সরকার সব সময় আন্তরিক এবং সহানুভূতিশীল, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। জাতিসংঘের মানদন্ডে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে স্বীকৃত। মাথা পিছু আয় ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.৮৬ এ উন্নীত হয়েছে। মাত্র ১০ বছরে শিক্ষার হার ৪৫ থেকে ৭৩ শতাংশে পৌঁছেছে। দারিদ্রের হার ২১.৮ শতাংশে নেমে এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার ৮০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাচ্ছে। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটালাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল নির্মাণ, কর্ণফুলি টানেল স্থাপনের কাজ চলছে।

এ ছাড়া নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। পুরুষ ও নারী সমতার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থা বিশ্বে ৪৭তম এবং ৩ বছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। গত ১০ বছরে আমাদের সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। আমাদের লক্ষ হচ্ছে দেশকে দারিদ্রের অভিশাপ হতে মুক্ত করা। এ লক্ষ্যে জনগণের সঞ্চয় বাড়ানোর বিষয়ে সরকার বদ্ধ পরিকর। জনগণ যাতে সঞ্চয় বাড়াতে পারে সে লক্ষ্যে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প এখন আমার বাড়ি আমার খামারে এ রুপান্তরিত হয়েছে। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে নিয়োজিত সদস্যদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য আনসার-ভিডিপি ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। এ ব্যাংক থেকে সদস্যগণ স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে বিভিন্ন আয় বর্ধনমূলক কাজে নিয়োজিত হতে পারেন বলে তিনি জানান।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী সকাল পৌনে এগারোটায় সুসজ্জিত অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে সেখানে স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি, আনসার ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ এনডিসি, পিএসসিজি অভ্যর্থনা জানান।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এমপি, গাজীপুর মহানগরের মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ, গাজীপুর জেলা প্রসাশক ডঃ দেওয়ান মোঃ হুমায়ুন কবীর, জিএমপি কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান , গাজীপুর পুলিশ সুপার শামছুন্নাহার প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণ দেয়ার আগে একটি খোলা জীপে করে মাঠ পরিদর্শন করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে সুসজ্জিত কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন। এসময় ৬ শতাধিক আনসার সদস্যের উপস্থাপনায় মনোজ্ঞ ডিসপ্লে প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রী সাহসিকতা ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য আনসার সদস্যদের পদক প্রদান করেন।

Bootstrap Image Preview