অতিরিক্ত শ্রেণি শিক্ষক জিয়াসমিন মেয়েকে নিয়ে ভালোই কাটাতে চেয়েছিলেন দিনগুলি, ‘‘কিন্তু এখন! এখন কি নিয়ে ফিরবো?’’ বলতেই অনিশ্চয়তার বেদনায় ভিজে থাকা বা চোখের কোণা থেকে গড়িয়ে পড়লো চোখের জল। ভেতরে থাকা নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে থাকলেন। বলতে থাকলেন, ‘এখন আমার কি হবে? কি জবাব দেবো আমার পরিবারকে? নিজেকেই কি জবাব দেবো? আত্মহত্যা ছাড়া আমার কোনো পথ খোলা নেই!’ চাপা কষ্টে কাঁদতে থাকলেন..।
জিয়াসমিনের চোখের জল সব প্রশ্নের জবাব, কেমন চলছে তাদের জীবন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে জিয়াসমিনের মতো ৪০ জন শিক্ষিকা এসেছেন ঢাকায়। যাদের দাবি, এমপিও অথবা এসইপিডি প্রোগ্রামে তাদেরকে অন্তর্ভুক্তি করা।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শান্তিপুর্ন অনশন কর্মসূচির আজ ১০ম দিন। ৪০ জন শিক্ষিকার অধিকাংশই অসুস্থ্য হয়ে গেছেন। ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আছেন ৬ জন। অথচ তাদের এই ন্যায্য দাবিতে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগই লক্ষ করা যায়নি। তবে কি জিয়াসমিনের মতো প্রায় ২ হাজার শিক্ষিকাদের আকুতি কেউ বুঝবে না?
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা জিয়াসমিন বিডিমর্নিংকে বলেন, আমরা এতজন মেয়ে ১০ দিন ধরে প্রেসক্লাবের এই রাস্তায় বসে আছি। ঢাকায় আমাদের থাকার জায়গা নেই, হোস্টেলে কিংবা নিজেদের মতো যে যেখানে পারে থেকে এই দাবি জানিয়ে আসছি। গাড়ির শব্দ আর ধুলোবালিতে যেখানে কেউ ১ ঘন্টাও বসে থাকতে পারবে না সেখানে আমরা দিনের পর দিন বসে আছি। আমাদের এই দাবি জানিয়েই যাচ্ছি অথচ প্রসাশনের কারও কোনো সাড়া পাইনি। প্রধানমন্ত্রী সবার দাবি মেনে নেয়, বেতন বাড়ায়, অথচ আমাদেরকে কোনো জবাব দিচ্ছে না।
‘বাংলাদেশ অতিরিক্ত শ্রেণি শিক্ষক (এসিটি) অ্যাসোসিয়েশন’ এর আওতায় ৫ হাজার ২শ জনের মধ্যে প্রায় ২ হাজার শিক্ষিকা রয়েছেন। চাকরি স্থায়ী ও বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে চলমান অনশনে ২৬ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে ৬ জন নারী শিক্ষকও রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সরকার ২০১৫ সালে মানসম্মত শিক্ষকের ঘাটতি মেটানোর লক্ষ্যে সেকায়েপ দেশের ২৫০টি উপজেলার ২ হাজার ১০০ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানে মেধাবী ও নিজ জেলার সর্বোচ্চ নাম্বারধারী ৫ হাজার ২০০ জন তরুণকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ওই নিয়োগে মডেল শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার পাশাপাশি প্রকল্প শেষে ম্যানুয়ালের ৩৬নং ধারায় চাকরি স্থায়ী করার কথাও উল্লেখ ছিলো।
প্রকল্প শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাকরি স্থায়ী করার বিষয়ে চিঠি পাঠানোর ১৪ মাস পার হয়ে গেলেও সেটি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে ১৪ মাস ধরে বিনা বেতনে ৩৭ লাখ ২০ হাজার ৯৪টি অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হয়েছে এসিটি শিক্ষকদের।
এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় এসিটির শিক্ষকদের বাদ দিয়ে নতুন করে ১২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। বিনা বেতনে পাঠদানের ফলে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন ও অস্তিত্ব সংকটে ভুগছেন এসিটির শিক্ষকরা।