নওগাঁর রাণীনগর শ্রীমতখালী খালের উপর নির্মিত ব্রিজটির কাজে অনিয়ম করায় নির্মাণের কিছুদিনের মাথায় ভেঙ্গে যায়। এরপর দীর্ঘ আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও ব্রিজটি এখনো পুন:নির্মাণ করা হয় নি। এখন প্রতিদিনই ওই এলাকার মানুষের ব্রিজ নয় বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হয়। এতে চরম দুর্ভোগে রয়েছে ওই এলাকার প্রায় ১৬টি গ্রামের মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ ভেঙ্গে যাওয়া ব্রিজটির কাজের প্রথম থেকেই ঠিকারদার অফিসের সাথে যোগসাজগ করে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ব্রিজটি নির্মাণ কাজ করানো হয়। ফলে তা কিছুদিনের মধ্যে ভেঙ্গে পরে যায়। অন্যদিকে ওই স্থানে গড়ে ওঠা বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে প্রতিদিনই ইজারাদারকে টাকা দিতে হচ্ছে পথচারীদের। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতি ও মালামাল পরিবহনে চরম দুর্ভোগে পড়ছে এলাকাবাসীরা।
জানা গেছে, বান্দায়ঘাড়া থেকে মিরাট বিলের মধ্য বয়ে চলা রাস্তাটি নওগাঁ জেলা সদরের সাথে যুক্ত হয়েছে। খাল খননের পর থেকেই মিরাট ইউনিয়নের মিরাট রাস্তার শ্রীমতখালি খালের উপর হামিদপুর নামকস্থানে বাঁশের সাঁকো দিয়ে এক সময়ের অবহেলিত ও দূর্গম এলাকা খ্যাত প্রায় ১৬ টি গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে চলাচল করতো।
এতে উৎপাদিত ফসল সময় মতো বাজারে বিক্রি এবং মালামাল পরিবহন করতে না পারায় ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে চরম দুর্ভোগে জীবনযাপন করতো এলাকাবাসী। ওই এলাকার মানুষের চলাচল ও যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে রাণীনগর উপজেলা এলজিইডি'র আওতায় গত ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে সেখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য টেন্ডার দেয়া হয়। টেন্ডারে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়ে ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
এরপর ব্রিজ নির্মাণ কাজ শেষে নির্ধারিত সময় পর সাটারিং খুলে দিলে মাত্র কিছুদিনের মাথায় ব্রিজের মাঝের পিলার ডেবে গিয়ে ব্রিজটি ভেঙ্গে পরে যায়।
নিম্নমানের সামগ্রী, দুর্বল অবকাঠামো ও অদক্ষ মিস্ত্রী দিয়ে কাজ করার কারণে ব্রিজটি ভেঙ্গে গেছে। এরপর পুরো ব্রিজ অপসারণ করে সেখানে নতুন করে গত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে প্রায় ১ কোটি ৭৯ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ব্রিজ নির্মাণের জন্য টেন্ডার দেয়া হয়।
এরপর গত ৮ মাস আগে ব্রিজটির পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু করলেও শুধুমাত্র খালের দুই পাড়ে ব্রিজের দৃশ্যমান দু'টি মুখ নির্মাণ করে কাজ বন্ধ রেখেছে সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদার। এখন খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নতুন ঠিকাদার আবার ব্রিজের কাজটি শুরু করেছেন।
এ কাজেও অনিয়ম হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় অনেকেই। তাই ব্রিজটির নির্মাণ কাজ চলা পর্যন্ত সংস্লিষ্ট ঊদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের ব্রিজটি কাজের প্রতি সুদৃষ্টি রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন অনেকেই।
ওই এলাকার ভ্যান চালক মো: আব্দুস ছাত্তার জানান, প্রতিদিন সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে ৮-১০ টাকা করে ইজারাদারকে দিতে হচ্ছে।
পথচারী মো: সেকেন্দার আলী, খোরশেদ আলম, আবু হাসানসহ আরো অনেকেই জানান, প্রতিদিন সাঁকো দিয়ে পায়ে হেটে পারাপার হতে ইজারাদারকে ২-৩ করে টাকা দিতে হয়। তাই এই ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করে জনদুর্ভোগ থেকে মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
ঘাট ইজারাদার সুমিত্রা রাণী চৌধুরী বলেন, তিনি স্থানীয় মিরাট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এক বছরের জন্য ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছেন। সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে প্রতিজন ৩ টাকা, প্রতিটি মোটরসাইকেল-ভ্যান ১০ টাকা এবং বাইসাইকেল থেকে ৫ টাকা নেন। প্রায় ৩০ বছর ধরে এ ব্যবসা করে আসছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা এলজিইডি'র প্রকৌশলী মো: শাইদুর রহমান মিঞার বক্তব্য নিতে গেলে তিনি বলেন, ব্রিজটি নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। আশা করছি আগামী জুন মাসের মধ্যে ব্রিজটি করা হয়ে যাবে।