Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

খোপীর নদী আজ মরা খাল, অনাহারে জীবনযাপন করছে জেলেরা

সাইফুল  ইসলাম রুদ্র, নরসিংদী প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৯:২৬ PM
আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৯:২৬ PM

bdmorning Image Preview


নরসিংদী জেলার একমাত্র মেঘনা নদী থেকে মাছ ধরে ও বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো এই সাবিকুন্নেছার স্বামী। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় নদীর পাশে থাকা বাড়ির আঙিনায় বসে থেকে মাছ ধরার নৌকার দিকে তাকিয়ে থাকে সাবিকুন্নেছা। 

অপরদিকে, তারই ননদ কুলসুম বেগম একটি বরশি দিয়ে ছোট ছোট মাছ ধরে হাট-বাজারে নিয়ে দৈনিক ৫০০-৭০০ টাকা বিক্রি করে ছয় ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছে। কিন্তু সাবিকুন্নেছা গর্ভবতী হওয়ায় নতুন সন্তান পৃথিবীতে আসার প্রহর গুনছে। 

তার স্বামী জয়নাল মিয়া বিভিন্ন হাট-বাজারে কুলির কাজ করে দৈনিক ৪ কেজি চাউল ১ কেজি আলু, আধা কেজি ছয়াবিস বাড়ি আনে। এতে তার দুই ছেলে শাহিন মিয়া ও আব্দুল্লাহকে নিয়ে খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। 

জেলেদের মাছ ধরতে ৬-৭ দিন নদীতে থাকতে হয়। এ সময় নদীতেই কাজ, খাওয়া ও ঘুম। ফেরার পর এই কয়দিনের ব্যবহৃত জিনিস নৌকা থেকে বাড়ি নিয়ে আসতো জেলেরা। কিন্তু আজ নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে বাড়ির পাশে পড়ে আছে মাছ ধরার নৌকাগুলি।

এক সময়ের খরস্রোতা সদর উপজেলার মেঘনা নদীটি এখন মৃতের পথে। প্রায় ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৩'শ থেকে ৪'শ ফিট প্রস্থ মেঘনা নদীর শাখা নদী খোপীর নদী রূপ-লাবণ্য আর মৎস সম্পদে ছিল সমৃদ্ধ। কয়েক বছর আগেও এই নদীপথ দিয়ে চলতো ছোট-বড় অসংখ্য মাছ ধরার ট্রলার।

কিন্তু কালের পরিবর্তনে খোপীর নদীতে এখন আর দেখা মিলে না বাহারি সব মাছ ধরার নৌকা চলাচলের দৃশ্য। অথচ এক সময় এই নদীতে মাছ ধরে জেলেরা জীবিকা নির্বাহ করতো। নদীপথের বাণিজ্যকে কেন্দ্র করেই তখন খোপীর নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল ইউএমসি ঘাট। আজ অতীতের স্মৃতি ধারণ করে কালের সাক্ষী হয়ে ‘ইউএমসি বাজার’ শুধু রয়েছে গেছে।

বর্ষা মৌসুমে কয়েক মাস খোপী নদীর বুকে কিছুটা পানি প্রবাহ থাকে। এছাড়া সারাবছরই খোপী আর নদীরূপে থাকে না। মরা খালে পরিণত হয়। নদীর বুক জুড়ে তৈরি হয়েছে অসংখ্য বীজতলা। কোথাও কোথাও চাষ করা হয়েছে ধান ও সরিষাসহ নানারকম ফসল।

নদীর এমন করুণ দুর্দশার প্রভাব পড়েছে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর কৃষকসহ জেলে পরিবারগুলোর জীবনেও। বোরো মৌসুমে এই নদীর পানির মাধ্যমে সেচ দিয়ে কৃষকরা তাদের জমি চাষাবাদ করতেন। কিন্তু নদীতে পানি না থাকায় কৃষকরা তাদের বোরো চাষ করতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

অপরদিকে, এই মেঘনা নদীই ছিল নদী তীরবর্তী জেলে পরিবারগুলোর জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায়। কিন্তু দখল, দূষণ ও নাব্যতা সংকটসহ নানাবিধ কারণে নদীর এমন বেহালদশায় জেলেরাও হয়ে পড়েছে কর্মহীন।

নদী তীরবর্তী জেলে পরিবারগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে নিবন্ধনের মাধ্যমে জেলেদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সরকারের পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

Bootstrap Image Preview