Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘ক্লিনিক্যালি ডেথ’ থেকে রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন হচ্ছে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৬:৪৬ PM
আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৬:৪৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে (চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ক্লিনিক্যালি ডেথ বা ব্রেইন ডেথ) অনেক রোগী থাকে। চিকিৎসকরা যাদের বাঁচার আশা ছেড়ে দেন। এমন ‘ক্লিনিক্যালি ডেথ’ মানুষ নিজেরা না বাঁচলেও মৃত্যুর পূর্বক্ষণে নিজেদের কিডনি, লিভারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করে বাঁচিয়ে দিতে পারেন অন্যদের। উন্নত বিশ্বে ‘ব্রেইন ডেথ’ রোগীদের কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা হলেও দেশে প্রথমবারের মতো এ প্রক্রিয়াটি শুরু হতে যাচ্ছে। এর ফলে বিপুলসংখ্যক কিডনি রোগীর কিডনি চাহিদা পূরণ হবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ওই বিশেষজ্ঞ দল ঢাকার পাঁচটি হাসপাতাল পরিদর্শন করবেন। জানা গেছে কোনো ক্লিনিক্যালি ডেথ রোগী পাওয়া গেলে ওই দলটি দেশের কিডনি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তার কিডনি প্রতিস্থাপন করবে।

হাসপাতালগুলো হলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), বারডেম, কিডনি ফাউন্ডেশন ও সিএমএইচ।

উপমহাদেশে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় ক্লিনিক্যালি ডেথ রোগীদের থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন আগে থেকেই হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা মনে করছেন, নতুন এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশে চালু হলে অনেক কিডনি রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।

সাধারণত দুইভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন করা যায়। জীবিত মানুষের থেকে এবং ক্লিনিক্যালি ডেথ বা ব্রেইন ডেথ রোগীর থেকে।

তবে কিডনি রোগীর সংখ্যা বেশি থাকায় জীবিত দাতা বা লিভিং ট্রান্সপ্ল্যান্ট থেকে এ ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব নয়। এ কারণে ক্লিনিক্যালি ডেড বা ব্রেইন ডেড রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপনের দিকে চিকিৎসকরা। ১৯৮২ সাল থেকে বাংলাদেশে এই লিভিং ট্রান্সপ্ল্যান্ট শুরু হয়।

মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) আইন-২০১৭ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।

এ আইনানুযায়ী যদি চিকিৎসকরা কোনো রোগীকে ক্লিনিক্যালি ডেথ ঘোষণা করেন এবং ওই রোগীর নিকটাত্মীয়রা যদি রোগীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অন্যকে দেয়ার লিখিত অনুমোদন দেন তাহলে ট্রান্সপ্লান্ট টিম ওই রোগীর শরীর থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে পারবে।

চিকিৎসকরা জানান, বাংলাদেশে প্রতি বছর পাঁচ হাজার মানুষের কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট প্রয়োজন। এর বিপরীতে মাত্র ১২০ জন মানুষ কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের সুযোগ পায়। বিশ্বের সব দেশে মরদেহ থেকে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করে চাহিদা পূরণ করা হয়। বাংলাদেশে যদি সেটি শুরু করা যায়, তাহলে হাজার হাজার কিডনি রোগী এ সুবিধা পাবে।

‘ব্রেইন ডেথ’ রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া ডা. এএসএম তানিম আনোয়ার বলেন, ‘ব্রেইন ডেথ’ দাতা পেতে হলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। কুসংস্কার ও আবেগের কারণে মানুষ অঙ্গ দান করতে চায় না। রক্ত দানের মতো কিডনি বা লিভার দানের বিষয়েও মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। তাহলে বিপুল সংখ্যক কিডনি রোগীর জীবন বাঁচবে।

জানা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বিশেষজ্ঞ টিম এলে ঢাকার চার-পাঁচটা আইসিইউ খুঁজে দেখা হবে। ‘ব্রেইন ডেথ’ রোগী পাওয়া গেলে এবং রোগীর আত্মীয়স্বজনের সম্মতি পেলে তাহলে অস্ত্রোপচার করা হবে। যদি ‘ব্রেইন ডেথ’ রোগী পাওয়া না যায়, তাহলে পরবর্তীতে আবার উদ্যোগ নেয়া হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), বারডেম, কিডনি ফাউন্ডেশন ও সিএমএইচ এ পাঁচ হাসপাতালের যেকোনো একটিতে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা হতে পারে। এ হাসপাতালগুলোর যেখানেই দাতা পাওয়া যাবে, সেখানে অস্ত্রোপচার করা হবে।

ব্রেইন ডেথ ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনো দাবিদার না থাকলে ঘোষণাকারী হাসপাতালের প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রদানের অনুমতি দিতে পারবেন।

বাংলাদেশে কোরিয়া-কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট টিমের কো-অর্ডিনেটর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. এএসএম তানিম আনোয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে বছরে ৫০০০ কিডনির চাহিদা থাকলেও কিডনি মেলে মাত্র ১২০টি। এই নগণ্য সংখ্যক কিডনি প্রতিস্থাপন করা হতো জীবিত মানুষের শরীর থেকে। যাদের বেশিরভাগই রোগীর নিকট আত্মীয়।

তিনি বলেন, আর যারা কোনো দাতা পান না তাদের ধুকে ধুকে মরতে হয়। না হলে দেশের বাইরে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে চিকিৎসা করাতে হয়। সূত্র: বিবিসি বাংলা

Bootstrap Image Preview