দরজায় কড়া নাড়ছে বসন্ত। আর কিছুদিন পরেই দেশব্যাপী পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হবে। এই দিবসগুলো উপলক্ষে সময় মতো বাজারে ফুল সরবরাহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলের রাজ্যখ্যাত যশোরের গদখালি এলাকার ফুল চাষীরা।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে, এবার যশোরে পাইকারি পর্যায়ে ৭০ কোটি টাকা মূল্যের ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যশোরে প্রায় ৬ হাজার ফুল চাষী ১৫'শ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষের সাথে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় গ্যালোরিয়াস, যা শতকরা ৪০ ভাগ চাষ করে থাকে এখানকার ফুল চাষীরা। এরপরই শতকরা ২০ ভাগ চাষ হয় রজনীগন্ধা ও শতকরা ১৫ ভাগ গোলাপ চাষ হয়। এছাড়াও এখানে চাষকৃত জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল সারাদেশে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
সরেজমিনে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলা এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, জমিতে সেচ প্রদান, গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরানো, সার-কীটনাশক, আগাছা পরিস্কার করাসহ ফুলের আনুষাঙ্গিক পরিচর্যা করছেন চাষীরা।
পানিসারা মাঠপাড়া এলাকার ফুল চাষী তবিবর জানান, বংশপরমপরায় তিনি ফুল চাষ করে আসছেন। আমার বাবা ফুল চাষ করতো, এখন আমিও ফুল চাষের সাথে সম্পৃক্ত আছি। আমি এবার ৪ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছি। তার মধ্যে রজনীগন্ধা ২ বিঘা ও ১ বিঘা গোলাপ ও ১ বিঘা জারবেরা ফুলের চারা লাগিয়েছি। সামনে ফুলের বড় বাজার তাইতো বাজার ধরতে সকাল-বিকেল ফুলের পরিচর্যা করছি।
গদখালিতে কথা হয় তরুণ ফুল চাষী আশরাফুল ইসলাম চান্দুর সাথে তিনি বলেন, ৪ বিঘা গোলাপ, ২ বিঘা জারবেরা ও ১ বিঘা জমিতে গ্যালোরিয়াস ও রডস্টিক ফুলের চাষ করেছেন। আমরা গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখি, যাতে ফুল একটু দেরি করে ফোটে। বসন্ত দিবস, ভালবাসা দিবস আর একুশে ফেব্রুয়ারিতে যাতে ফুল বাজারে দেওয়া যায়। প্রতিটি গোলাপে ক্যাপ পরানোসহ খরচ প্রায় ৪ টাকার মতো। যদি ৭-৮ টাকা বিক্রি করা যায় তাহলে মুনাফা বেশি পাবো বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নাভারণ ফুল চাষী ও ব্যবসায়ী নজরুল আলম জানান, তিনি ফুলের ব্যবসার পাশাপাশি চাষও করছেন। এর মধ্যে জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রজনীগন্ধাসহ বেশ কয়েকটি ফুল চাষ করে তিনি লাভবান হয়েছেন। কিন্তু তার জারবেরা ফুলে পোকামাকড় বিস্তার করেছে। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক দিয়ে এসব পোকামাকড়ের আক্রমণ থামানোর চেষ্টা করছি। গত দুই-তিন মাস ব্যবসা কিছুটা খারাপ গেছে। সময় মতো সামনের দিবসগুলোতে যদি বাজার ধরতে পারি তা হলে ৩-৪ লক্ষ টাকার মতো ফুল বিক্রয় করতে পারবো।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলাসহ এ জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। ১৯৮৩ সালে গদখালীতে মাত্র ৩০ শতক জমিতে ফুল চাষ শুরু হয়। এখন চাষ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে। দেশে উৎপাদিত ফুলের মোট চাহিদার ৭০ ভাগই যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশের গন্ডি পেরিয়ে এই ফুল এখন যাচ্ছে দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়াতে।
বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে ৩০ লক্ষ মানুষের জীবিকা এই চাষ বা ফুলকে কেন্দ্র করে। প্রায় ২০ হাজার কৃষক ফুল চাষের সাথে সম্পৃক্ত আছে। এর মধ্যে কেবল যশোরেই প্রায় ৬ হাজার ফুল চাষী রয়েছেন। সামনের দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে প্রায় ৭০ কোটি ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সারাবছর টুকটাক ফুল বিক্রি হলেও মূলত ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে নানা উৎসবকে সামনে রেখেই জোরেশোরে এখানকার চাষীরা ফুল চাষ করে থাকেন।