Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পরকীয়া: বয়সে বড় জেরিনের মুখ মশালের আগুনে ঝলসে দেন নাঈম

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০২:৪২ PM
আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০২:৪২ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


বোরকা পরেই চার বছরের শিশুর সামনে মা জেরিন আক্তার মিলির (২৬) মুখ মশালের আগুনে ঝলসে দেন তার প্রেমিক দাবিদার নাঈম ইসলাম। গতকাল শনিবার ভোর ৫টার দিকে ঢাকার ধামরাই উপজেলার বাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কর্মকর্তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ স্বীকারোক্তি দেন তিনি।

গত ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটান তিনি। পিবিআই প্রধান কার্যালয়ের সহায়তায় রাজশাহী পিবিআই সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করেন। গতকাল রাজশাহী পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আযাদ এসব তথ্য জানান।

ঢাকার ধামরাই থানার আইনগঞ্জের বাসিন্দা নাইম ইসলাম (২৩) ধামরাই কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের (সম্মান) শেষবর্ষের ছাত্র। তার বাবার নাম হাসান আলী। পোড়া মুখ নিয়ে প্রেমিকা মিলি এখন ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জেরিন আক্তার মিলি (২৬) রাজশাহী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। স্বামী-সন্তানের সঙ্গে পুঠিয়ার বানেশ্বরে থাকেন মিলি।

পিবিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ের বিশেষায়িত একটি দলের সহায়তায় ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ধামরাইয়ের বাড়ি থেকে নাইমকে গ্রেফতার করে রাজশাহী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনও-পিবিআই। এ অভিযানে ছিলেন রাজশাহী পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মহিদুল ইসলাম, জামাল হোসেন ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আসাদ এবং রাসেল। এ ঘটনায় করা মামলার তদন্ত করছেন পুঠিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক মহিনুল ইসলাম। পাশাপাশি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনও (পিবিআই) মামলাটির ছায়া তদন্ত করছিল। নাইমের বরাত দিয়ে এসআই মহিদুল ইসলাম জানান, মিলির স্বামী মিজানুর রহমান একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। পাঁচ বছর আগে তিনি ঢাকায় ছিলেন।

তখন স্বামীর সঙ্গে মিলি ঢাকায় থাকতেন এবং ইডেন কলেজে অনার্সে পড়তেন। এ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ধামরাই কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র নাইমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে কথাবার্তা চলতে থাকে। একপর্যায়ে প্রেম হয়ে যায়। স্বামীর অজান্তে নাইমের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতেন মিলি। এরই মধ্যে তিনি একটি সন্তানের জন্ম দেন। প্রায় তিন বছর আগে মিজানুর তার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে পুঠিয়ার বানেশ্বরে চলে আসেন। এরপরও নাইমের সঙ্গে মিলির যোগাযোগ থাকে। গেল বছরের নভেম্বরে নাইম বানেশ্বর থেকে ঘুরে যান। এসবের কিছুই জানতেন না মিলির স্বামী মিজানুর।

নাইম পিবিআইকে জানিয়েছেন, মিলি তার প্রথম প্রেম। বয়সে বড় হলেও স্বামী-সন্তান রেখে পালিয়ে এসে তাকে বিয়ে করার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু মিলি এতে রাজি না হয়ে তাকে ফেসবুকে ব্লক করে দেন। ফোনকল ধরাও বন্ধ করে দেন। তখন তিনি জানতে পারেন, আরও কয়েকজন ছেলের সঙ্গে মিলির সম্পর্ক রয়েছে। এই ক্ষোভ থেকে তিনি তার মুখে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২৮ জানুয়ারি তিনি ঢাকা থেকে পুঠিয়ার বানেশ্বরে আসেন। এরপর বানেশ্বরের হোটেল রূপসার ২২ নম্বর কক্ষে ওঠেন। ওইদিন সন্ধ্যায় দুই বোতল অকটেন কেনেন। আর ঢাকার এক বান্ধবীর কাছ থেকে একটি বোরখা নিয়ে আসেন।

সেটি পরে পরদিন ভোরে মিলির বাড়ির সামনে ওঁৎ পেতে থাকেন। এরপর মিলি সে পথে এলে একটি মশালে অকটেন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে সেটি তার মুখে আঘাত করে পালিয়ে যান। এ সময় মিলি তার সন্তানকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলেন। মশালের আগুনে সন্তানের সামনেই তার মুখ ঝলসে যায়। মিলির চিৎকারে প্রতিবেশীরা গিয়ে মুখে পানি ঢেলে আগুন নেভান। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। তার অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে থানায় মামলা করেন তার ভাই জিসান হোসেন।

রাজশাহী পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আবুল কালাম আজাদ জানান, বোরখা পরে আক্রমণ করায় এ ঘটনার কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছিল না। তারা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নাইমকে শনাক্ত করেন। তিনি সব স্বীকার করেছেন।

Bootstrap Image Preview