কথায় বলে, ‘মশা মারতে কামান দাগা’।মশার কামড় নিয়ন্ত্রণ করতে এবার নিউইয়র্কের রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ‘ডায়েট ড্রাগস’ বা ওজন কমানোর ওষুধ ব্যবহার করে ভালো সাড়া পেয়েছেন। নতুন এই গবেষণা যদিও এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে।
অনেক দিন ধরে মশা মারতে নানা ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করেও তেমন একটা সফলতা পাওয়া যাচ্ছিল না। কারণ মশারা দিন দিন কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছিল। এ কারণেই ভিন্ন কিছু ভাবছিলেন এই বিজ্ঞানীরা। নতুন গবেষণায় যুক্ত বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি পুরোপুরি সফল হলে জিকা বা ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
পশ্চিমা বিশ্বে ওজন কমাতে বেশ জনপ্রিয় ডায়েট ড্রাগস বা ডায়েট পিল। মানুষের ওজন কমানোর এই ওষুধই নাকি কাজ করেছে মশার ওপরেও। গবেষকরা এডিস মশার উপর পরীক্ষা চালিয়েছেন। সাধারণত স্ত্রী প্রজাতির মশা মানুষকে কামড়ায়। এই প্রজাতির স্ত্রী মশা অন্য প্রাণীর তুলনায় মানুষের প্রতি বেশি আকর্ষণ বোধ করে। কারণ মানুষের রক্তে একটি বিশেষ প্রোটিন রয়েছে যা এডিস মশার ডিম উত্পাদনে সহায়তা করে। ডায়েট পিলের কাজ হল মানুষের খাওয়ার আগ্রহ কমিয়ে দেওয়া।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা যখন মশাকে ‘ডায়েট পিল’ মেশানো স্যালাইন জাতীয় খাবার দিয়েছেন যা মশার রক্ত খাওয়ার রুচি বেশ কমে গেছে। ঠিক মানুষের যেমন খাবার আগ্রহ কমে যায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ঔষধ দেওয়ার ফলে দেখা গেছে মশা বেশ কদিন ধরে রক্ত খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে।
মশাদের রক্ত খাওয়ার মাত্রা পরিমাপ করতে বিজ্ঞানীরা মানুষের শরীরের দুর্গন্ধযুক্ত নাইলনের মোজা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। মশারা সাধারণত এমন মোজার প্রতি খুবই আকর্ষণ বোধ করে, কারণ তারা খাবারের গন্ধ পেতে থাকে এবং রক্ত খেতে উদগ্রীব হয়ে পড়ে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ঔষধ দেওয়ার ফলে দেখা গেছে মশা বেশ কদিন ধরে রক্ত খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, তার অর্থ হল মানুষের প্রতি ও তার রক্ত খাওয়ার প্রতি মশার আগ্রহে পরিবর্তন ঘটেছে। গবেষণাগারে না হয় আটকে রেখে মশাকে ঔষধ খাওয়ানো গেলো কিন্তু প্রকৃতিতে মশাকে এই ঔষধ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন। গবেষকদের একজন লেসলি ভশাল বলেন, নারী মশাকে আকর্ষণ করে এমন ফাঁদ তৈরি করতে হবে।
লেসলি ভশাল বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আমরা আর কোনো বুদ্ধি খুঁজে পাচ্ছি না। কীটনাশকও ব্যর্থ হচ্ছে কারণ মশারা এমনকি কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। তাই এখন একদম নতুন কিছু করতে হবে। তিনি আরও বলেন, মশাদের পুরোপুরি নিধন করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। এই ঔষধ সাময়িকভাবে খাবার রুচি নিয়ন্ত্রণ করে। তাই এর প্রভাব স্থায়ী নয়। ভবিষ্যত্ গবেষণায় বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।