Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

ফরিদপুরে নামে বেনামে গড়ে উঠেছে ভেজাল ফুড ইন্ডাষ্ট্রিজ

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৯:৩২ PM
আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৯:৪৮ PM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


শখ করে আমরা প্রতিদিনই দোকান থেকে নানা রকমের খাবার শিশুদের কিনে দিচ্ছি। এসব খাবারের মান কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত সেটার বিষয়ে আমরা কিন্তু সচেতন নই। দোকানে সাজানো রঙ্গিন প্যাকেটে পাওয়া যাচ্ছে চিপস, চানাচুর, বিস্কুট, চকলেটসহ নানা ধরনের প্যাকেটজাত খাবার। ফরিদপুর জেলা সদর ও শহরতলীতে নামে বেনামে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ফুড ইন্ডাষ্ট্রিজ। সেখানে নোংরা পরিবেশে ভেজাল কাঁচামাল ও বিভিন্ন ক্যামিকেলের সংমিশ্রণে তৈরি করা হচ্ছে এসব খাবার। 

সরেজমিনে গিয়ে কয়েকটি কারখানায় এর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়। ফরিদপুর জেলার শহরতলীর গেরদা ইউনিয়নের জোয়ারের মোড় এলাকায় গড়ে উঠেছে এফ কে ফুড নামে একটি কারখানা। সেখানে চাতালে রোদে শুকাতে দেওয়া হচ্ছে চিপস। চাতালে কোনো পলিথিন না দিয়ে ধুলার মধ্যেই কাঁচামাল শুকানো হচ্ছে। কারখানার ভিতরে তৈরি করছে চিপস, বিস্কুট, চানাচুরসহ নানা রকমের খাদ্য পণ্য।

সেখানে দেখা যায় আটার সাথে রং মিশিয়ে চিনির পরিবর্তে সেকারিন দিয়ে সাথে আন-ফুডগ্রেড কেমিক্যাল মিশিয়ে পোড়া তেল দিয়ে খাবার পক্রিয়াজাত করছে। যেসব শ্রমিক কাজ করছে তাদের নিয়ম অনুযায়ী কোনো লেবার বডি ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। খালি গাঁয়ে থাকার ফলে শরীরের ঘাম খাবারের মধ্যে পড়ছে। এছাড়াও বিএসটিআই এর লোগো ব্যাবহার করলেও তাদের কোনো অনুমোদিত কাগজপত্র নেই।

জানা যায়, ফরিদপুর জেলা ভোক্তা অধিকার সহকারী পরিচালকসহ ফরিদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা দুই বার ঐ প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেন। প্রথমবার অনিয়মের কারণে ২০,০০০ টাকা এবং পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় ও ভেজাল কাঁচামাল আর নোংরা পরিবেশে খাবার তৈরি করার অপরাধে ১০,০০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন। কিন্তু তাতেও প্রতিষ্ঠানটির ভেজাল খাদ্য পণ্য উৎপাদন বন্ধে টনক নড়েনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এফকেফুড নামে সাইনবোর্ড টাঙানো কিন্তু কারখানার ভিতরে বিভিন্ন নামের প্যাকেটজাত খাদ্য উৎপাদন করছে। সাইন বোর্ডে উল্লেখ করেছে বিভিন্ন মোবাইল পাইকারী বিক্রয় প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন নামি দামী কোম্পানীর খাবারে ফয়েল ভেজাল খাবার দিয়ে প্যাকেটজাত করে বাজারে সরবরাহ করছে।

অপরদিকে, ফরিদপুরের কানাইপুর বিসিক শিল্পনগরীর মধ্যে গড়ে উঠেছে একটি নারিকেল তেল ইন্ডাষ্ট্রিজ। সেখানে তৈরি করা হচ্ছে ভেজাল নারিকেল তেল। একটি নামে লাইসেন্স করে একাধিক নামিদামি কোম্পানীর বোতলজাত করা তেল কতটুকু মানসম্মত এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের কেউ কোনো কথা বলতে বাধ্য নয় বলে সাংবাদিকদের জানান।

স্থানীয়রা জানায়, ক্ষতিকর কেমিক্যাল র‍্যাপসিন আর কোকোনাট ফ্লেভার মিশিয়ে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের নামে নকল তেল প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। প্যারাডাইস, চ্যালেঞ্জার, দুই ডায়মন্ড, গন্ধরাজ, ভাটিকা, নিহার, ডাব মার্কাসহ নানা ব্র্যান্ডের তেল প্যাকেটজাত করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার এক শ্রমিক জানান, প্রতিদিন রাত ১০টার সময় এখানে তেল প্যাকেটজাত করার কাজ শুরু হয় আর ভোর রাতে সেই মাল জেলার বিভিন্ন বাজারে এবং অন্য জেলায় ডিষ্ট্রিবিউশন করার জন্য গাড়িতে লোড করা হয়।

দীর্ঘদিন ধরে এসব কারখানায় ভেজাল পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। জেলা ভোক্তা অধিকার ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করলেও ভেজাল উৎপাদন বন্ধ করা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে সচেতন মহল মনে করেন, ভেজাল খাবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ না করলে সাধারণ মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। 

 

Bootstrap Image Preview