Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৬ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই

পাভেল সামাদ, বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৫:১৫ PM
আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৫:১৫ PM

bdmorning Image Preview


সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুরনো ভবনে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে সেবা দেয়া হচ্ছে রোগীদের। চিকিৎসক ও ঔষধ সংকটের কারণে সেটাও অনেকটা মানহীন, দায়সারা। মানহীন রোগীদের দেয়া খাবারদাবারও। রয়েছে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টিভ, দালাল ও ভুয়া রোগীদের উৎপাত। এসব নানা কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই উপজেলাবাসীর।

ইতিপূর্বে মেয়াদ উত্তীর্ণসহ অবাধে সরকারি ঔষধ বিক্রি, ডাক্তারের বদলে নার্সের রোগী দেখা, স্থানীয় বখাটেদের দ্বারা মহিলা রোগীদেরকে ইভটিজিংসহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও নানা সমস্যা নিয়ে গণমাধ্যমে অসংখ্য সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও তেমন কোনো পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় নি।

জানা গেছে, বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদের শেষ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট সফরকালে ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। এই বছরের ৩০ জানুয়ারী ৫০ শয্যায় উন্নিত এটি নির্মিত হলেও তাতে এখনও শুরু হয় নি চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। কমপ্লেক্সে ১৫৪টি পদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ৪৪টি পদশূন্য রয়েছে। দীর্ঘদিন এসব শূন্য পদের বিপরীতে জনবল সঙ্কট থাকায় চিকিৎসা সেবাসহ দাফতরিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

বর্তমানে খাতা কলমে ৭ জন চিকিৎসক থাকলেও হাসপাতালে উপস্থিত হন ৫ জন। অনেক সময় চিকিৎসকের অভাব এবং অনুপস্থিতির কারণে নার্স-আয়ারা লেগে যান রোগীদের চিকিৎসা সেবায়। জনবল সংকটের কারণে পুরো কমপ্লেক্স জুড়ে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ লেগেই থাকে। তাতে করে রোগ সারাতে এসে উল্টো আশংকা তৈরি হয় রোগাক্রান্ত হওয়ার। ওয়ার্ডগুলোর বিছানাপত্র যেমন অপরিচ্ছন্ন থাকে, তেমনি সেখানে ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্যে জুটে মানহীন খাবার।

সরেজমিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ঘুরে দেখলে চোখে পড়ে নানা সমস্যা। নানা অভিযোগ মেলে রোগীসহ এলাকাবাসীর। দেখা যায়, কমপ্লেক্সে মহিলা ও শিশু রোগীর সংখ্যা অনেক। পুরুষ রোগীদের বহিঃর্বিভাগ খালি থাকলেও একজন চিকিৎসক পুরষ-মহিলা রোগী দেখছেন জরুরী বিভাগে। আরেকজন চিকিৎসক মহিলা বহিঃর্বিভাগে দেখছেন মহিলা ও শিশুদের। দুটি বিভাগের বাহিরে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টিভ, দালাল ও ভুয়া রোগীদের উৎপাত লেগেই আছে। রোগীদেরকে যে সকল ঔধষ লিখে দিচ্ছেন চিকিৎসক, সেগুলোর অনেকগুলো মিলছে না স্টোরে।

এরই মধ্যে চেরাগ আলী নামে একজন স্থানীয় লোক এ প্রতিবেদকের সামনেই স্লিপ ছাড়াই নিয়ে যান একগাদা ঔষুধ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রোগী জানান, ডাক্তাররা উপজেলা সদরের চেম্বারে যাওয়ার জন্যে তাড়াহুড়ো করে রোগী দেখেন। যে ঔষধ লিখে দেন, তার অনেকগুলোই বাইরে থেকে আনতে হয়। 

এ প্রতিবেদক কমপ্লেক্সের দু'তলায় পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে গেলে শুধুই মহিলা ওয়ার্ডে একজন পুুরুষ ও একটি শিশু রোগীর দেখা পান।

পুরুষ রোগী জানান, তিনি ভর্তি হতে এসেছেন। আপাতত তাকে এখানে রাখা হয়েছে।

শিশু রোগীর পিতা উপজেলার কাটলীপাড়া গ্রামের নিজাম উদ্দিন বলেন, শ্বাসকষ্টজনিত কারণে তার মেয়েকে নিয়ে তিনদিন ধরে এখানে আছেন। রাতে যে খাবার দেয়া হয় সেগুলো খুবই মানহীন, অখাদ্য। দিনের বেলায় চেয়ে নিয়ে আসতে হয় খাবার।

তিনি আরও জানান, তিনদিন ধরে এক বিছানার কাপড়ের মধ্যে রাখা হয়েছে তার মেয়েকে। এটি বদল করে নতুন বিছানার কাপড় দিতে বললেও কেউ তাতে ভ্রুক্ষেপ করে না। 

এ ব্যাপারে কথা বলতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুর রহমানের কক্ষে গেলে ফাঁকা মেলে সেটি। জানানো হয়, তিনি দু’দিনের ছুটিতে গেছেন। ফোনে কথা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার মান আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে এবং আগের তুলনায় কমপ্লেক্সটি অনেক পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন দাবি করে ডা. রহমান বলেন, এটি ৫০ শয্যায় উন্নিতকরণে নতুন যে ভবন নির্মাণ হয়েছে, সেটির অনুমোদন এখনও দেয়া হয় নি।

সরকার থেকে এখানে যে ঔষুধ সাপ্লাই দেয়া হয়, এই ঔষুধের পাশাপাশি রোগীদের প্রয়োজনে অনেক সময় চিকিৎসকরা তার বাইরেও ঔষুধ লিখে দেন। যার ফলে সেটা বাইরে থেকে আনতে হয়। সরকার থেকে সাপ্লাই দেয়া কোনো ঔষুধের সংকট এখানে নেই। আর রোগীদের খাবারের ব্যাপারটা কন্ট্রাক্টরই ভালো বলতে পারবেন। তবে, বিছানা যে প্রতিদিন পাল্টাতে হবে এমন কোনো কথা নেই। যদি ময়লা হয়, তাহলে অবশ্যই পাল্টে দেয়া হয়। 
 

Bootstrap Image Preview