Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

দ্রুত গলছে হিমালয়, সমূহ বিপদে বাংলা, ভারত, চীনসহ ১১ দেশ!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৬:১৪ PM
আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৬:১৪ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে দ্রুত গলে যাচ্ছে গলে যাচ্ছে হিন্দুকুশ হিমালয়ের পাহাড়,পর্বত। গলে যাচ্ছে সেখানকার বড় বড় হিমবাহগুলি (গ্লেসিয়ার)। গলছে এভারেস্ট, কারাকোরামের মতো পৃথিবীর দু’টি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গও। আন্টার্কটিকা ও আর্কটিকের (সুমেরু ও কুমেরু) পর হিন্দুকুশ হিমালয়কেই পৃথিবীর ‘তৃতীয় মেরু’ বলা হয়।

হিমালয় এত দ্রুততার সাথে গলে যাচ্ছে যে, ৮০ বছরের মধ্যেই তার এক-তৃতীয়াংশ বরফ পুরোপুরি গলে যাবে। আর বিশ্ব উষ্ণায়নের তাপমাত্রার বৃদ্ধি যদি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখা যায়,তা হলে অর্ধেক বরফই গলে যাবে হিন্দুকুশ পর্বতমালার। উষ্ণায়নের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে গলে যাবে দুই-তৃতীয়াংশ বরফ।

তার ফলে, ওই অঞ্চলে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেকং-সহ প্রধান যে ১০টি নদী রয়েছে, পুরোপুরি ভেসে যাবে তাদের অববাহিকাগুলি। আর ৪০ বছরের মধ্যেই। তার ফলে, বিপন্ন হয়ে পড়বেন ভারত, পাকিস্তান, চীন, আফগানিস্তান, নেপাল, ভূটান-সহ ৮টি দেশের প্রায় ২০০ কোটি মানুষ।

ভয়াবহ এই রিপোর্ট দিয়েছে আন্তর্জাতিক পর্বত গবেষণা সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট’ (আইসিআইএমওডি)। এই প্রথম তৃতীয় মেরুর বরফ গলার হারের উপর চালানো হল গবেষণা। টানা ৫ বছর ধরে যে গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বিভিন্ন দেশের ২০০-রও বেশি বিজ্ঞানী। তাদের গবেষণা খতিয়ে দেখেছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ৩৫০ জন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী।

উষ্ণায়নের খুব বড় প্রভাব পড়েছে হিন্দুকুশ হিমালয়ে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের (২ হাজার ১৭৫ মাইল) ওই সুবিশাল পার্বত্য এলাকার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে মোট ৮টি দেশ। ভারত, পাকিস্তান, চিন, নেপাল, ভূটান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও মায়ানমারের বড় একটি অংশ। যেখানে গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, মেকং, আমু দরিয়া, তারিম, ইরাওয়াড়ি, সালউইন, ইয়েলো ও ইয়াংঝের মতো রয়েছে ১০টি প্রধান নদী।

পুনের ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর আন্টার্কটিক অ্যান্ড ওশ্‌ন রিসার্চ সেন্টার’ (এনসিএওআর)-এর অধিকর্তা বিশিষ্ট হিমবাহ বিশেষজ্ঞ এম রবিচন্দ্রন জানাচ্ছেন, ১৯৭০ সাল থেকে উষ্ণায়নের খুব বড় প্রভাব পড়েছে হিন্দুকুশ হিমালয়ে। তার ফলে, সর্বোচ্চ শৃঙ্গগুলি-সহ গোটা হিন্দুকুশ হিমালয়ের বরফ যে ভাবে গলছে, যে হারে গলছে, তাতে উষ্ণায়নের তাপমাত্রাকে যদি শতাব্দীর শেষে পৌঁছে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ২.৭ ডিগ্রি ফারনেহাইটের মধ্যে ধরে রাখা সম্ভব হয়, তা হলেও তা হলেও হিমালয়ের বরফ গলার রথের চাকায় রশি পরানো যাবে না। আর ৮০ বছর পর হিমালয়ের এক-তৃতীয়াংশ বরফের পুরোটাই গলে যাবে। আর সেই তাপমাত্রার বাড়-বৃদ্ধি যদি হয় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৩.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট, তা হলে গলে যাবে হিমালয়ের অর্ধেক বরফ। ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৭ থেকে ৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট বাড়লে গলে যাবে দুই-তৃতীয়াংশ বরফ।

রবিচন্দ্রনের কথায়, ‘শুধু হিন্দুকুশের পাহাড়, পর্বতেই থাকেন প্রায় ২৪ কোটি মানুষ। আর ওই অঞ্চলের ১০টি প্রধান নদীর জলের উপর নির্ভর করে আছেন প্রায় ২০০ কোটি মানুষ। জড়িয়ে রয়েছে ভারত, চীন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান-সহ ৮টি দেশের অর্থনীতি, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, কৃষিকাজ, সেচ ও শস্য সংরক্ষণের অত্যন্ত জরুরি ক্ষেত্রগুলি।’

রবিচন্দ্রন এও জানিয়েছেন, ১৯৭০ সাল থেকে গত ৫০ বছরে ইতিমধ্যেই হিন্দুকুশ হিমালয়ের ১৫ শতাংশ বরফ গলে জল হয়ে গিয়েছে। এর ফলে, ২০৬০ সাল নাগাদ পরিস্থিতিটা এমন হবে যখন বার বার ভয়াবহ বন্যা হবে ওই এলাকা ও সেখান থেকে বেরিয়ে আসা নদীগুলির অববাহিকা অঞ্চলে।

পরিসংখ্যান বলছে, ১৯০০ থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত হিন্দুকুশ হিমালয়ের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে, সেখানকার বরফ দ্রুত গলতে শুরু করেছিল। তার পর ১৯৪০ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত, ৩০ বছরে আবার ঠান্ডা হতে শুরু করে হিমালয়। পরে উষ্ণায়নের দৌলতে ১৯৭০ সাল থেকে ফের দ্রুত হারে বরফ গলতে শুরু করেছে হিন্দুকুশ হিমালয়ে।

আইসিআইএমওডি-র ডেপুটি ডিরেক্টর একলব্য শর্মা জানিয়েছেন, সেই বন্যাও কমে যাবে জলের জোগান কমে যাওয়ায়, এই শতাব্দীর শেষে পৌঁছে। ২০৮০ সালের পর হিন্দুকুশ হিমালয়ের প্রধান নদীগুলির বেশির ভাগই যাবে শুকিয়ে। তাদের উৎস হিমবাহগুলি জলহীন শুকনো পাথরে পরিণত হবে বলে। তার ফলে, কৃষিকাজ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, সেচ বেহাল হয়ে পড়বে। যা বিপন্ন করে তুলবে ভারত-সহ এই অঞ্চলের ৮টি দেশের অর্থনীতি। খুব ক্ষতি হবে জীববৈচিত্র্যেরও (বায়োডাইভার্সিটি)।

রবিচন্দ্রন অবশ্য এ কথা মানতে রাজি নন। তার বক্তব্য, নদীর জল তার গতিপথে আরও অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। তার মধ্যে রয়েছে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। তা ছাড়াও ওই নদীগুলি শুকিয়ে গেলে আশপাশের এলাকায় নদীর অন্যান্য উৎসেরও জন্ম হওয়াটা অসম্ভব নয়।

Bootstrap Image Preview