Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৬ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

গাইবান্ধায় পেট্রোল বোমা হামলার চার বছর আজ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৩:২৯ PM
আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৩:২৯ PM

bdmorning Image Preview


গাইবান্ধায় পেট্রোল বোমা হামলার ৪ বছর আজ। ২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিএনপি-জামায়াতের অনির্দিষ্টকালের ডাকা অবরোধের সময় গাইবান্ধা সদর উপজেলার তুলশীঘাট গ্রামে চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা হামলায় ৮ জন নিহত এবং ৩২ জন দগ্ধ হন। হতাহত এসব পরিবারের মধ্যে আজও থামেনি কান্না। সুদীর্ঘ ৪ বছরেও এই মামলার বিচার কাজ না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে নিহতের স্বজনরা।

ওইদিন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের পাঁচপীর বাজার থেকে নাপু এন্টার প্রাইজের একটি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে পুলিশি পাহারায় যাবার পথে রাত সাড়ে ১০টার দিকে গাইবান্ধা সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউনিয়নের তুলশীঘাট গ্রামে পৌঁছালে যাত্রীবাহী বাসটিতে পেট্রোল বোমা ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। এসময় বাসে থাকা ৬০ জন যাত্রীর মধ্যে ৮ জন মারা যান ও প্রায় ৪০ জন আগুনে দগ্ধ হন। সুস্থ হলেও এখনো রোদে কোন কাজ করতে পারেন না এসব দগ্ধ ব্যক্তিরা।

পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনায় নিহত হয় গাইবান্ধা সদর উপজেলার মালিবাড়ি ইউনিয়নের আব্দুল গফুর মিয়ার ছেলে আবুল কালাম আজাদ (৩০), খোলাহাটি ইউনিয়নের পশ্চিম কোমরনই গ্রামের জিলহজ আলী (৩৫), সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কালীর খামার গ্রামরে খয়বর হোসেন দুলুর ছেলে সৈয়দ আলী (৪২), পশ্চিম সীচা গ্রামের সাইব মিয়ার মেয়ে হালিমা বেগম (৪২), চন্ডিপুর গ্রামের শাজাহান আলীর ছেলে সুমন মিয়া (২২) একই গ্রামের বলরাম দাসের মেয়ে শিল্পী রাণী দাস (১০), চন্ডিপুর গ্রামের তারা মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া (১০) ও তার স্ত্রী সোনাভান বিবি (৪৫)।

সাইফুল ইসলামের বড় ভাই সাজেদুল ইসলাম সুজন বলেন, আমরা দুই ভাই আগে থেকেই ঢাকা ও গাজীপুরে গার্মেন্টেসে কাজ করতাম। পরে আমার স্ত্রীকে নিয়ে যেতে ধরে বাসে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আমরা তিনজন গুরুতর আহত হই। আমি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন মাস, ছোটভাই সাইফুল ইসলাম ২০ দিন ও আমার স্ত্রী জোসনা বেগম ২৬ দিন ভর্তি ছিলাম। এখন সুস্থ হলেও রোদে কোন কাজ করতে পারি না। অল্পতেই মাথা গরম হয়ে যায়। এজন্য সরকারের কাছে আমি ও আমার ভাইয়ের জন্য চাকরি চাই। 

একই গ্রামের মনজুরুল ইসলাম বলেন, আগুনে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর এখন আর ঠিকমতো কোন কাজ করতে পারি না। রোদে বেশিক্ষণ থাকতে পারিনা। মাথা ঝিমঝিম করে। এখন সামান্য ব্যবসা করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কষ্ট করে দিন কাটাচ্ছি। একটা চাকরির ব্যবস্থা করলে ভালো হতো।  

একই ইউনিয়নের ফারাজিপাড়া গ্রামের দিনমজুর তারা মিয়া বলেন, আমি ঢাকায় দিন মজুরের কাজ করতাম। আমার স্ত্রী অন্যের বাড়িতে কাজ করতো। বড় ছেলে-মেয়ে দুটো গার্মেন্টেসে কাজ করতো। আর ছোট ছেলেমেয়ে দুটো পড়াশোনা করতো। সেদিন ঢাকায় যেতে ধরে পেট্রলবোমা হামলায় আমার স্ত্রী সোনাভান বেগম ও ছোট ছেলে সুজন মিয়া আগুনে পুড়ে মারা যায়। আমি ও আমার ছোট মেয়ে তানজিনা আক্তার আগুনে পুড়ে দগ্ধ হই। এরপর থেকে রোদে কোন কাজ করতে পারিনা। মাথা ঝিমঝিম করে, শরীর ঘেমে যায়। আমাদের জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করলে ভালো হয়।

চলন্ত বাসে পেট্রলবোমা হামলার এই ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৩০ জনকে আসামি করে মামলা হয়। পরবর্তীতে ৭৭ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

মামলার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি শফিকুল ইসলাম শফিক জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন এবং এই মামলার স্বাক্ষীগ্রহণ হয়েছে। আশাকরি মামলাটি খুব দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। নাশকতার এই মামলায় গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আনিসুজ্জামান খান বাবু, গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদের  চেয়ারম্যান মো. আব্দুল করিমসহ আরও অনেকে রয়েছেন এই মামলায়। বর্তমানে এই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে সব আসামি জামিনে রয়েছেন।  
 

Bootstrap Image Preview