Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ধানের উৎপাদনে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১১:৪৭ AM
আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০১:১৮ PM

bdmorning Image Preview


জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) খাদ্য উৎপাদন এবং প্রবৃদ্ধি সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ধান উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বিশ্বের শীর্ষ অবস্থানটি দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশ।২০১৮ সালের ওপর করা এফএওর এ প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে অন্যতম ধান উৎপাদনকারী হিসেবে যেসব দেশ পরিচিত, সেসব দেশের অধিকাংশেরই প্রবৃদ্ধি এ বছর ছিল নেতিবাচক।

২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডসহ অন্য কয়েকটি দেশের প্রবৃদ্ধির মারাত্মক অবনতি হয়েছে; অর্থাৎ মাইনাসে নেমে এসেছে। ধান উৎপাদনে বিশ্বের বড় দুই দেশ ভারতের প্রবৃদ্ধি ছিল ২ শতাংশ ও চীনের দশমিক ৭৮ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির হারে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যানেলের (আইপিসিসি) চতুর্থ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, চলতি শতকের মধ্যে বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন যথাক্রমে ২০ ও ৩০ শতাংশ কমবে। কিন্তু গত ৫ বছরে কমেনি তো বটেই, বরং ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ হারে বেড়েছে। এফএওর জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষির অভিযোজনবিষয়ক প্রতিবেদন বলছে, আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের যেসব দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়তে পারে, সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বিশ্বব্যাংক এবং এফএওর তথ্য পর্যালোচনা করলে এটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ এখন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির সবদিক থেকেই বিশ্ব পথিকৃৎ ও অনুসরণীয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাত পিছিয়ে যাওয়ায় আমন ধানের জন্য আশীর্বাদ হয়েছে। অথচ আগে খরার জন্য আমন উৎপাদনে ভালো ফল পাওয়া যেত না।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে এখন বিশ্বের অনুসরণীয় উদাহরণ বাংলাদেশ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে ঊর্ধ্বগতিতে।

এফএওর তথ্যানুযায়ী ছয় বছর পর এমন সাফল্য পেল বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭ শতাংশ। ২০১০ সালে তা ৮ শতাংশে নেমে যায়; ২০১২ সালে নেমে হয় ৩ শতাংশ। ৬ বছর পর ২০১৮ সালে ফের বেড়েছে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির হার।

এফএওর তথ্য-উপাত্ত বলছে, বিশ্বে বর্তমানে ধানের গড় উৎপাদনশীলতা প্রায় ৩ টন, আর বাংলাদেশে তা সোয়া ৪ টন। তা ছাড়া ৮৫-৯০ লাখ টন আলু উৎপাদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায়। সাড়ে ১০ লাখ টন আম উৎপাদনের মাধ্যমে বিশ্বে ৯ম স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তা ছাড়া বৈশ্বিক হেক্টরপ্রতি ভুট্টা উৎপাদন গড় ৫ দশমিক ১২ টন। অথচ বাংলাদেশে এ হার ৬ দশমিক ৯৮ টন।

তথ্য-উপাত্ত বলছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে বোরো ধান উৎপাদনে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত তথ্য বলছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের কৃষকরা ৪৮ লাখ ৫৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করে এক কোটি ৯৫ লাখ টন ধান উৎপাদন করেছে, যা পূর্ববর্তী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক কোটি ৮০ লাখ টন উৎপাদনের তুলনায় ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। বোরোর এমন বাম্পার উৎপাদনের বদৌলতে গত বছর মোট ধান উৎপাদন ৩ কোটি ৬২ লাখ টনে পৌঁছে গেছে।

দেশে মোট ধানের চাহিদা ৩ কোটি ৩০ লাখ টন। সেই হিসাবে দেশের মোট চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থেকে যায় ৩০ লাখ টন। ২০১৪ ও ২০১৫ সালের অকাল বন্যায় বোরো চাষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যেখানে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২৫-৩০ লাখ টন। এর পরও গত বছর বোরো চাষের জমির পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। কৃষকরা আউশ ও আমনের আবাদ বাড়িয়ে দেওয়ায় গত বছর আউশ ধান উৎপাদন ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৭ দশমিক শূন্য ৯ লাখ টনে পৌঁছে গেছে। আর আমন ধান উৎপাদন ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেড়ে এক কোটি ৩৯ লাখ টনে পৌঁছেছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আউশ ধানের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে এবং অব্যবহৃত পরে প্রায় ৭ কোটি মানুষের খাদ্য উৎপাদন করতেই হিমশিম খেতে হয়েছে দেশকে। তখন মূলত আমদানি করেই অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে হতো। এখন দেশের লোকসংখ্যা অনুপাতে আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে। বছরে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টনের বেশি আমন, আউশ ও বোরো ধানের ফলনে খাদ্যশস্য উৎপাদনে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। আমরা এখন ধানসহ অন্য ফসলের আরও অধিক উৎপাদন ও খাদ্যশস্য নিরাপদ করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছি। কৃষির এ সাফল্য সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

Bootstrap Image Preview