যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি (অগ্রাধিকারমূলক বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা) ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেনবাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত টিকফা চুক্তি অর্থবহ করতে হলে বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
অপরদিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার বলেন, জিএসপি ফিরে পাওয়া ও টিকফার আওতায় বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে আরও আলোচনা হবে। তবে আমি বাংলাদেশের পক্ষে একজন ভালো সেলসম্যান হতে চাই। মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে টিপু মুনশির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিলার।
সাক্ষাৎকার শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চায় এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানি বাড়ানোর আরও সুযোগ রয়েছে। যে কোনো পরিমাণ তৈরি পোশাক রফতানির সামর্থ্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তবে এজন্য জিএসপি ফিরে পাওয়া জরুরি।
এটি ফিরে পাওয়ার মতো সব ধরনের যোগ্যতা বাংলাদেশের রয়েছে। বাংলাদেশে এখন শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তায় সুনির্দিষ্ট পরিবর্তন এসেছে। অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও ন্যাশনাল ইনেশিয়েটিভ কারখানাগুলো পরিদর্শন করেছে। এখন পর্যন্ত ৯০ ভাগের বেশি কারাখানা পরিদর্শনসম্পন্ন হয়েছে।
তৈরি পোশাক কারখানাগুলো সংস্কার করা হয়েছে। নতুন নতুন গ্রিন ফ্যাক্টরি গড়ে উঠছে। শ্রমিকদের মজুরি সময়োপযোগী করা হয়েছে। আমরা এ সংসদে শ্রমআইন পাস করতে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে আমরা টিকফার বেশিরভাগ শর্ত পূরণ করেছি।
পোশাকের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নানা কর্মকাণ্ডে তৈরি পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। এসব পণ্যের উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তাই জিএসপি ইস্যু পোশাকের মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় এ দেশে বিনিয়োগের পরিবেশও সৃষ্টি হয়েছে। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরকার বিনিয়োগকারীদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। এগুলোর কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। এগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ করলে লাভবান হবে। বিনিয়োগের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) এদেশে এনার্জি, পাওয়ার, শিপিং, এলএনজি এবং এয়ারলাইন্স সেক্টরে প্রায় দুই বিলিয়নের বেশি বিনিয়োগ করেছে।
এ বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধির সুযোগ এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ালে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানির সুযোগ পাবে। অবকাঠামো, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে আরও বিনিয়োগের সুযোগ তাদের রয়েছে। বিনিয়োগ বাড়লে স্বাভাবিক নিয়মে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান কমে আসবে।
এতে করে উভয় দেশ লাভবান হবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও উচ্চতায় পৌঁছাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোয় কাজের পরিবেশ সুনির্দিষ্টভাবে উন্নত হয়েছে।
শ্রমিকদের নিরাপদ কাজের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, ইলেকট্রিসিটি সিকিউরিটি নিশ্চিত হয়েছে। শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশ। বাণিজ্য বৃদ্ধি পেলে উভয় দেশ উপকৃত হবে।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাকের বাজার। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান অনেক। জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে।
একই সময়ে বাংলাদেশ প্রায় এক দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। ২০২১ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রফতানিতে ৫০ বিলিয়ন ডলার ধরা হয়েছে।