Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

অবশষে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেল জাহালম

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০১:৩১ PM
আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০১:৩১ PM

bdmorning Image Preview


দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় ভুল আসামি জাহালমকে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে মুক্তির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

রবিবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

নিরীহ শ্রমিক জাহালমকে গ্রেফতার ও কারাগারে রাখার ঘটনায় দুদকের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, বিনা দোষে জাহালামকে কারাগারে রাখা আরেকটি জজ মিয়ার নাটকের মতো ঘটনা। এ বিষয়টির প্রতি কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন আদালত।

আদালত আরও বলেন, ঘটনার সঙ্গে কোনো সিন্ডিকেট জড়িত থাকলে খুঁজে বের করতে হবে।

সম্প্রতি বিভিন্ন দৈনিকে  ‘৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে' শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি গত সোমবার আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট অমিত দাসগুপ্ত।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ দুদকের মহাপরিচালক (আইন) মইনুল ইসলাম, দুদকের মামলার বাদী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল জাহিদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়রে সচিবের একজন প্রতিনিধি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের মনোনীত প্রতিনিধিকে তলব করে।

আজ রোববার সকালে ওই চারজন হাইকোর্টে হাজির হন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি চিঠির মাধ্যমে জাহালমের ঝামেলা শুরু। জাহালমের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঠিকানায় দুদকের একটি চিঠি যায়। সেই চিঠিতে ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় জাহালমকে হাজির হতে বলে দুদক। জাহালম তখন নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

দুদকের চিঠিতে বলা হয়, ভুয়া ভাউচার তৈরি করে সোনালী ব্যাংকের ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত আবু সালেক নামের এক লোক, যার সোনালী ব্যাংক ক্যান্টনমেন্ট শাখায় হিসাব রয়েছে। আবু সালেকের ১০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ভুয়া ঠিকানাগুলোর একটিতেও জাহালমের গ্রামের বাড়ির কথা নেই। রয়েছে পাশের আরেকটি গ্রামের একটি ভুয়া ঠিকানা। কিন্তু সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ালো জাহালমের জীবনে।

নির্ধারিত দিনে দুই ভাই হাজির হন দুদকের ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। জাহালম বুকে হাত দিয়ে বলেছিলেন, ‘স্যার, আমি জাহালম। আবু সালেক না। আমি নির্দোষ।’

দুদকে হাজিরা দিয়ে জাহালম সোজা চলে যান নরসিংদীর জুট মিলের কর্মস্থলে। এর দুই বছর পর টাঙ্গাইলের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে জাহালমের খোঁজ করতে থাকে পুলিশ। সেখান না পেয়ে ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর ঘোড়াশালের মিল থেকে জাহালমকে আটক করা হয়।

জাহালম তখন জানতে পারেন, তার নামে দুদক ৩৩টি মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের ১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে, তিনি বড়মাপের অপরাধী। পুলিশের কাছেও জাহালম একই কথা বলেন, ‘স্যার, আমি জাহালম। আবু সালেক না। আমি নির্দোষ।’ তবে তখন কেউ শোনেনি তার এই আকুতি। তার ঠাঁই হয় কারাগারে।

কারাগারে কেটে যায় আরও দুটি বছর। জাহালমকে যতবার আদালতে হাজির করা হয়, ততবারই তিনি বলেন, ‘আমি জাহালম। আমার বাবার নাম ইউসুফ আলী। মা মনোয়ারা বেগম। বাড়ি ধুবড়িয়া গ্রাম, সাকিন নাগরপুর ইউনিয়ন, জেলা টাঙ্গাইল। আমি আবু সালেক না।’

তার ভাই শাহানূর দিনের পর দিন আদালতের বারান্দায় ঘুরতে থাকেন। হাজতখানার পুলিশ থেকে শুরু করে আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাকে পান, তাকেই বলতে থাকেন, ‘আমার ভাই নির্দোষ।’ অথচ ব্যাংক, দুদক, পুলিশ ও আদালত-সবার কাছেই জাহালম হলেন ‘আবু সালেক’ নামের ধুরন্ধর ব্যাংক জালিয়াতিকারী।

এই চারটি পক্ষের ভুলেই হারিয়ে গেছে তার জীবনের তিনটি বছর। জাহালমের স্ত্রী থাকেন নরসিংদীতে। তিনিও সেখানকার একটি কারখানার শ্রমিক। বৃদ্ধা মা থাকেন গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুরের ধুবড়িয়া গ্রামে। ছেলে আর টাকা পাঠাতে পারেন না। তাই মনোয়ারা বেগম প্রতিদিন অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতে বাধ্য হচ্ছেন।

Bootstrap Image Preview