Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রকৃত ইসলামের বিবাহ এবং বর্তমান সময়ের বিকৃতিসমূহ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০১:৪৭ PM
আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০১:৫০ PM

bdmorning Image Preview


ইসলামে বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিবাহ হচ্ছে ইসলামে নারী ও পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের আল্লাহ প্রদত্ত বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা। বিয়ে পুরুষ ও নারীর মাঝে সামাজিক পরিবেশে ও সমর্থনে শরীয়ত মোতাবেক অনুষ্ঠিত এমন এক সম্পর্ক, যার ফলে দু’জনে একত্রে বসবাস ও পরস্পরে দাম্পত্য সম্পর্ক ও সন্তান উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে বৈধ হয়ে যায় এবং পরস্পরের উপর অধিকার ও দায়িত্ব কর্তব্য অবশ্য পালনীয় হয়ে দাঁড়ায়।

এ ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ দাম্পত্য সম্পর্ককে নৈকট্য ও আত্মীয়তার মাধ্যম হিসেবে নির্ধারণ করেছেন এবং এটাকে অবশ্যকীয় বিষয় করেছেন যার কারণে আত্মীয়তার বন্ধন মজবুত হয়। সমগ্র মানব মানবীর মধ্যে এই বিষয়ে আকর্ষণ ও অনুরাগকে সহজাত করেছেন এবং বংশের দ্বারা সম্মানিত কোরেছেন। 

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, তিনি সেই সত্তা যিনি অপবিত্র পানি হতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং বৈবাহিক সম্পর্ককে বংশও আত্মীয়তার অন্যতম মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন। আর আপনার প্রতিপালক প্রবল পরাক্রমশালী (সুরা ফোরকান ৫৪)।

ইসলামে বিয়ের শর্ত মূলত তিনটি। প্রথমত: ছেলে এবং মেয়ে দু’জন দু’জনকে অবশ্যই পছন্দ হতে হবে। সাক্ষী থাকবে দু’জন এবং মেয়েকে দেনমোহর দিতে হবে। ছেলের সমর্থন অনুযায়ী যে দেনমোহর দিতে সক্ষম তা মেয়ে যদি মেনে নেয় তাহোলেই হবে ইসলামের বিয়ে। কিন্তু আমরা যদি সমাজের দিকে তাকিয়ে দেখি তাহলে দেখতে পাই যে, ইসলামের সম্পূর্ণ বিপরীত। আমাদের সমাজে একজন পাত্রের অবিভাবক কোরবানির হাটের গরুর মত পাত্রের দাম হাঁকেন। যে যত দাম বেশি দিবে বিয়েটা শেষ পর্যন্ত সেখানেই হয়। এখানে অবিভাবকরা পাত্র পাত্রীর পছন্দ অপছন্দের মূল্যায়ন করে না। আর মেয়ের অভিভাবকরা একটা মেয়েকে পার করার জন্য পাত্র পক্ষের চাহিদা পূরণ করার জন্য সাধ্যের বাইরে চেষ্টা করেন, অনেক সময় দেখা যায় পাত্র পক্ষের এই চাহিদা পূরণ করার জন্য জায়গা-জমি, সহায়-সম্পত্তিও বিক্রি করতে হয়। তারপরও যদি শ্বশুর বাড়ির নির্যাতন থেকে নিস্তার পাওয়া যেত! নববধূর হাতের মেহেদীর রং মুছতে না মুছতেই শুরু হয় নতুন উৎপীড়ন। প্রতিদিন যৌতুকের বলী হচ্ছেন অনেক নারী, কাউকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হচ্ছে। কতগুলো ঘটনা আমরা জানি আর কতগুলো ঘটনা আমাদের অজানাই থেকে যায়।

আমরা যদি মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোর দিকে তাকাই তাহলে আমাদের উপমহাদেশের বিপরীত চিত্র দেখতে পায়। সেখানে পাত্রীর অভিভাবকরা মোটা অংকের দেনমোহর হাঁকেন, যা একজন পাত্রের সাধ্যের বাইরে। তাই সেখানে একজন ছেলে বিয়ে করার আগেই প্রৌঢ়ত্বে পদার্পণ করেন, অনেকে বিবাহে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, অনেকে তাদের চাহিদা পূরণ করতে হয় আরব উপমহদেশের বাইরে গিয়ে অবৈধ উপায়ে।

পাশ্চাত্য সমাজের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, সেখানে নারী পুরুষরা বিয়েকে একটা বোঝা হিসাবে মনে করে। ওদের দর্শন হল, অর্থ উপার্জন করো এবং যত পারো ভোগ করো। যতদিন যৌবন থাকে এই দর্শনে তারা বিশ্বাসী থাকে, পরে যখন জীবন বার্দ্ধক্যের দিকে ঝুঁকতে থাকে এই দর্শনের প্রতি আস্থাও কমতে থাকে, লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ পড়ে অনিশ্চয়তায়। কোনো পরিবার নেই, মনের ভাব আদান-প্রদান করার কেউ নেই। প্রচণ্ড হতাশায় দিন কাটাতে হয়। এই হতাশা কাটাতে নির্ভর করতে হয় মাদকের উপরে, জীবনের উপার্জিত সম্পদ ব্যয় হতে থাকে মাদক আর বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। একসময় অনেকগুলি জারজ সন্তান দুনিয়াতে রেখে হাসপাতালে বা বৃদ্ধাশ্রমে প্রাণত্যাগ করে। ইদানিং তো এই বিয়ে ব্যবস্থা ভেঙ্গে দেওয়ার ভয়াবহ পরিণতি অন্যদিকে গড়িয়েছে। সেটা হচ্ছে সমকামীতা যা কিনা পশুও পশুর সঙ্গে করে না। কী জঘন্য, কী ভয়াবহ, কী নিকৃষ্ট! অথচ এই সমকামীতা অনেকগুলি উন্নত (!) দেশে আইনসিদ্ধ।

হিন্দু শাস্ত্রে বিয়েটা এমনই জটিল যে আধুনিক ভারতীয় হিন্দুরাও পুরাতন ধ্যান ধারণা ছুঁড়ে ফেলে পাশ্চাত্যের ‘অবাধ বা ফ্রি-সেক্স’ জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়ে পড়ছে এবং বিয়েকে ‘তথাকথিত’ ‘প্রথাগত’ ইত্যাদি বিশেষণে আখ্যায়িত করছে।

পুরুষের বহু বিবাহের প্রয়োজনীয়তা

বর্তমান যুগের নারীরা পুরুষের বহু বিবাহের ব্যাপারটি মানতে রাজি না, তারা মনে করে ইসলাম এই অপমানজনক পুরুষতান্ত্রিক প্রথাটিকে নারীর উপরে চাপিয়ে দিয়েছে। কিন্তু পৃথিবীর জনসংখ্যা জরিপে দেখা যায় যে, পুরুষের চেয়ে নারীদের সংখ্যা অনেক দেশেই বেশি। এখন একজন পুরুষ যদি একটি বিয়েই করে তাহোলে বাকী নারীদের কি হবে? হয় তাদের বিয়ে ছাড়া জীবন কাটিয়ে দিতে হবে, না হয় অবৈধ পথ বেছে নিতে হবে। 

অন্যভাবে বলা যায়, সংসারের আশ্রয় না পাওয়ায় সমাজই তাকে বাধ্য করবে ‘অসতী’ হতে। তার চেয়ে কি ভাল নয় যৌথ পরিবারে ঐক্যবদ্ধভাবে অন্য নারীর সঙ্গে স্ত্রীর অধিকার ও সম্মান নিয়ে সহমর্মী হয়ে বসবাস করা? 

এতে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পেলো, একাকীত্ব দূর হোল, জীবনের অবলম্বনও হলো, অবিচার অনাচারের পথও রুদ্ধ হলো।

তাছাড়া একজন পুরুষের স্ত্রী যদি সন্তান ধারণে অক্ষম হয়, তখনও তার স্বামী কি আরেকজন স্ত্রী গ্রহণ করতে পারবে না? অথবা প্রথমা স্ত্রী অসুস্থ হলে তখন সেই পুরুষ কি দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করে পরিবারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারবে না? মহান আল্লাহর দেওয়া কোনো বিধানই একপেশে বা অন্যায় হতে পারে না, আল্লাহর সকল বিধান হচ্ছে চূড়ান্ত ন্যায় ও ভারসাম্যে পূর্ণ এবং প্রাকৃতিক। 

আমরা অনেকেই মনে করি, পুরুষের বহু বিবাহ কেবলমাত্র পুরুষেরই প্রয়োজনে, কিন্তু আসলেই কি তাই? একাধিক নারী একটি সংসারে যদি সহোদরার ন্যায় অবস্থান করতে পারেন, সন্তানদেরকে মানুষ করার ক্ষেত্রে, পারস্পরিক সেবাযত্নে এবং সংসারকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করার ক্ষেত্রে তারা কেমন অবদান রাখতে পারেন, তা কি ভেবে দেখেছেন?

বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে একটা বিয়ে মানেই পাত্র এবং পাত্রী উভয় পক্ষের অর্থের অপচয়। অথচ রসুল (সা.) আদরের মেয়ে জান্নাতের রানী ফাতেমাকে (রা.) বিয়ে দিলেন তাঁর চাচাতো ভাই আলীর (রা.) সঙ্গে। বিয়ে ঠিক হবার পর রসুলাল্লাহ আলীকে (রা.) জিজ্ঞাস করলেন তার কাছে কি আছে? আলী (রা.) জবাব দিলেন টাকা পয়সা কিছুই নেই। থাকার মধ্যে আছে একটি ঘোড়া, একটি তলোয়ার আর একটি লোহার বর্ম। 

মহানবী তাকে বললেন, ‘আর যখন কিছুই নেই তখন বর্মটি বন্ধক দিয়ে টাকা নিয়ে এসো।’ তাই করা হলো এবং ঐ টাকা দিয়ে বিয়ের খরচ চালানো হলো। এবং দেনমোহর হলো চারশত মিসকাল রূপা। আরেকটি উদাহরণ দিই। 

একজন সাহাবীর বিয়ের প্রশ্ন উঠলে রসুলাল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘দেন মোহর দেওয়ার মত তোমার কি আছে?’ সাহাবী বললেন, ‘আমার কোনো কিছুই তো নেই।’ 

রসুলাল্লাহ জিজ্ঞেস কোরলেন, ‘তুমি কি কোর’আনের কোনো আয়াত জান?’ সাহাবী বললেন, ‘হ্যাঁ। আমি কোর’আনের এতগুলি আয়াত জানি।’ 

রসুলাল্লাহ বোললেন, ‘তোমার দেনমোহর হচ্ছে তুমি এই আয়াতগুলি তোমার স্ত্রীকে শিক্ষা দিবে।’ তখন এভাবেই বিয়ে হলো।

প্রিয় পাঠকগণ একটু চিন্তা করে দেখুন, ইসলামের বিয়ে কত সাধারণ ও সহজ! আল্লাহর রসুল কি পারতেন না তাঁর আদরের কন্যার বিয়ে অতি জাঁকজমকপূর্ণভাবে দিতে। কিন্তু প্রকৃত ইসলাম বর্তমান সমাজের এই অপচয় মোটেও সমর্থন করে না। আরেকটি প্রতারণামূলক ও দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে আমাদের সমাজে মোটা অংকের টাকা দেনমোহর হিসাবে ধার্য করা হয় কিন্তু সেই দেনমোহরের টাকা স্ত্রীকে জীবনেও আর পরিশোধ করে না অথচ দেনমোহরের টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত— স্ত্রী কোনো পুরুষের জন্য বৈধ হয় না। 

এ বিষয় আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে বলেছেন, “স্ত্রীদের মোহর স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও সন্তুষ্টচিত্তে প্রদান কর। অবশ্য তারা নিজেরা যদি খুশিমনে মোহরের কিছু অংশ মাফ করে দেয়, তবে তা তোমরা সানন্দে গ্রহণ করতে পার (সুরা নিসা-৪)। 

আয়াতটি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, মোহরানার টাকা অবশ্যই আদায় করতে হবে। তারপর স্ত্রী যদি সন্তুষ্টচিত্তে কিছু অংশ ক্ষমা করে দেয় তাহলে গ্রহণ করতে পারবে। অথচ আমাদের পুরুষ সমাজ বিশাল অংকের টাকা মোহরানা প্রদানের শর্তে বিয়ে করে কিন্তু পরিশোধ করেন না, বিবাহিত জীবনের শুরুতেই “মোহরানার টাকা মাফ করে দাও” বলে আজীবন স্ত্রীর কাছে ছোট হয়ে থাকে। কারণ যদি কোনো কারণে বিয়ে ভেঙ্গে যায় ঐ মোহরানার টাকা তাকে তখন বাধ্য হয়ে পরিশোধ করতে হবে, যার সামর্থ্য অনেক সময়ই স্বামীর থাকে না।

বর্তমানে সারা পৃথিবীতেই রেওয়াজ প্রচলিত আছে যে, পাত্রীকে অবশ্যই পাত্রের চেয়ে বয়সে ছোট হতে হবে। এই ধারণা ইসলাম সমর্থন করে না। রসুলাল্লাহর প্রথমা স্ত্রী খাদিজা রসুলাল্লাহর চেয়ে বয়সে ১৫ বছরের বড় ছিলেন। আমাদের সমাজে কোনো ছেলে যদি বয়সে বড় কাউকে বিয়ে করে তাকে কেউ সহজে মেনে নিতে পারে না। 

পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ‘আইয়্যিম’ তাদেরকে বিয়ে দিয়ে দাও (সুরা নূর ৩২)।’ আইয়্যিম বলতে যে প্রাপ্তবয়ষ্কা নারীর স্বামী নেই বা যে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের স্ত্রী নেই, সে কুমারী, অবিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত, বিধবা বা বিপত্নিক যাই হোক না কেন। এখানে আল্লাহ কোনো বয়সের সীমারেখা দেন নি।

বর্তমান আমাদের সমাজে বিধবা অথবা তালাক প্রাপ্ত মহিলাকেও কেউ বিয়ে করতে চায় না, এবং বিধবা তালাকপ্রাপ্ত মহিলা আজীবন কষ্টে দিন পার করেন কিন্তু বিয়ে করেন না, কিন্তু ইসলামে এই ধারণা সমর্থন করে না। আমাদের সমাজে কোনো বিধবা তালাকপ্রাপ্ত মহিলাকে কেউ বিয়ে করলে তার পরিবারের সদস্যরা কিছুতেই মেনে নেয় না। অথচ ইসলামে বিধবাদেরকে বিবাহ করার ক্ষেত্রে উৎসাহ দেওয়া হোয়েছে, বিয়ের জন্য অনেক সময় আপন সন্তানদের মাধ্যমেও প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ইসলাম কোনো পুরুষ বা নারীর নিঃসঙ্গ থাকা সমর্থন করে না। কারণ প্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষ অবিবাহিতভাবে থাকলে সমাজে অপরাধ বিস্তারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়, পাশাপাশি তারা সমাজের একটি বোঝাতেও পরিণত হয়। বর্তমান সমাজেই এর ভুরি ভুরি প্রমাণ পাওয়া যায়। এখন সময় এসেছে আমাদের সমাজের প্রচলিত এই ভুল ধারণাগুলো থেকে বেরিয়ে আসার।

আল্লাহর দেওয়া ন্যায়-নীতিতে পূর্ণ, ভারসাম্যপূর্ণ, শান্তিময় জীবনবব্যস্থাকে নির্বাসন দিয়ে দাজ্জাল আজ এমন এক সভ্যতা কায়েম করেছে যা পুরো মানবজাতিকেই ভারসাম্যহীন করে ফেলেছে। মানুষ শুধুমাত্র জাতীয় ও রাষ্ট্রীয়ভাবেই চরম অশান্তিতে নেই বরং ব্যক্তি-জীবনেও ভয়াবহ দুর্বিসহ জীবন অতিবাহিত করছে।

আল্লাহর দেওয়া বিয়ের ব্যবস্থা ও পারিবারিক জীবনযাপন পদ্ধতি পরিহার করে কোথাও যৌতুকের বিয়ে, কোথাও Live together, কোথাও সমকামীতা, কোথাও বহুবিবাহের নামে যথেচ্ছাচার করা হোচ্ছে। পরিণতিতে সারা দুনিয়াতেই মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন সাংঘাতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হোয়েছে। কিছুদিন আগেও দাদা-দাদী, নানা-নানীরা বার্ধ্যক্যে এসে নাতি, পুতি, সন্তান, প্রতিবেশীদের মধ্যে আনন্দে, গল্পে জীবন অতিবাহিত করত, বয়স্ক হিসাবে সকলে তাদের শ্রদ্ধা করত, যে কোনো খানাপিনা, পোশাক আশাক আগে বয়স্কদের দেওয়া হত, যে কোনো কাজ শুরুর আগে তাদের থেকে দোয়া আশীর্বাদ নেওয়া হত, ফলে ঐ তারা নিজেদেরকে সম্মানিত বোধ করতেন। তারা মারা গেলে সঙ্গে সঙ্গে কান্নার রোল উঠতো, শোকের পরিবেশ বিরাজিত থাকতো অনেকদিন। তার আত্মার মাগফেরাতের জন্য মিলাদ, দরিদ্র মানুষকে আহার করানো ইত্যাদি অনুষ্ঠান হত।

কিন্তু আজ সর্বত্র বিপরীত চিত্র। সন্তানরা অল্প বয়স থেকে বাবা-মাকে উপেক্ষা কোরতে আরম্ভ করে। পাঠবইয়ের সিলেবাসে কোথাও আদব কায়দা না শেখানোয় নতুন প্রজন্ম হয়ে উঠছে বে-পরোয়া। বৃদ্ধরা এ সমাজে Old fool. যারা আরও আধুনিক তারা বাবা-মাকে নির্বাসন দিচ্ছে বৃদ্ধাশ্রম নামের কারাগারে। বৃদ্ধাশ্রম তো পরিবার নয়, সেখানকার কর্মচারীদের পেশাদারিত্ব থাকতে পারে ভালোবাসা নেই। সরকার এই বৃদ্ধদেরকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে বার্দ্ধক্য ভাতা হিসাবে ২০০/৩০০ টাকা কখনও সখনও দিতে পারে, কিন্তু সেই টাকায় কোনো মমতা বা শ্রদ্ধার স্পর্শ থাকে না, তাকে শুধুই অবহেলা।

দরিদ্র বাবা-মাকে ফেলে বহু শিক্ষিত, উপার্যনক্ষম সন্তান যার যার পথ বেছে নিচ্ছে। এমন দৃশ্য আমরা প্রায়ই দেখি যে গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে ঘর্মাক্তে কলেবরে রিক্সা চালাচ্ছেন একজন সত্তরোর্ধ বৃদ্ধ আর তার রিক্সায় বসে শীস দিয়ে গান গাইছে নতুন প্রজন্মের ‘শিক্ষিত’ যুবক। জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন ঐ বৃদ্ধেরও আছে জোয়ান ছেলে মেয়ে। এই বৃদ্ধ একদিন সেই ছেলেমেয়েদের অজ্ঞাতেই হয়তো দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবেন। তারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বোলবে, বুড়ো মরে বাঁচলো।

আসুন বর্তমানে এই সব ভ্রান্ত আধুনিকতা ভুলে ইসলামের আলোকে আমরা আমদের জীবনকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করি। আমিন।

Bootstrap Image Preview