Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

আমার অনেক বান্ধুবীদের বাবা বিদেশ থাকে,তারা দেশে আসে তুমি আসো না কেনো?

সাইফুল ইসলাম রনি, ‌‌‌‌‌দক্ষিণ আফ্রিকা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:০৫ PM
আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:০৫ PM

bdmorning Image Preview


সন্ধ্যা গড়িয়ে মধ্য রাত। বাহিরে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিলো। মোবাইলে ইমু ম্যাসেঞ্জারের রিং বেজে উঠলো। হাতে নিয়ে দেখি ফুটফুটে লাল জামা পরিহিত ৬-৭ বছর বয়সের একটা মেয়ের ছবি এবং কাঠপেন্সিলে আঁকাবাঁকা শব্দে লেখা মোচড়ানো একটি চিঠি। পাঠিয়ে ছিলেন আমার প্রতিবেশী ও খুব কাছের প্রবাসী বন্ধু সাইফ সাহেব। তিনি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিজ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। সেদিন ওনার খুব মন খারাপ চোখে পড়লো। সকালে আমাকে ফোন করে রাতে পাঠানো ছবি ও চিঠির ব্যাখ্যা দিতে অনেকটা অশ্রুসজল হলেন।

তিনি বলেন, একসময় ওনার দোকানে চাকরি করতেন মোঃ আনোয়ার হোসেন নামে এক বাংলাদেশী প্রবাসী।

এবার মূল কথায় আসি, মোঃ আনোয়ার হোসে। ২০০৮ সালে প্রিয়জনের সুখের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা আসেন। শুরুর দিকে সাইফ সাহেবের দোকানে চাকরি করতেন। এতে উভয়ের মধ্যে বিশ্বস্ততা ও ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রত্যেকেই পারিবারিক বিষয়ে খোঁজখবর রাখতেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় আসার পর একবারের জন্যেও যেতে পারেননি বাড়িতে। দেখা হয়নি আদরের সোনামুখী মেয়েটিকেও। একদিন সাইফ সাহেবকে তার বাড়ি থেকে পাঠানো মেয়ের একটি ছবি এবং নরম হাতের কাঠপেন্সিলে লেখা একটি চিঠি দিয়ে সজোরে কান্না জড়িয়ে দিলেন। খুব ইচ্ছা করে দেশে গিয়ে তার নয়নের মনিকে কোলে তুলে আদর করার। কিন্তু পারিবারিক দারিদ্রতার কাছে সেই ইচ্ছা হেরে যায়।

মেয়ের লেখা ঐ চিঠিটি ছিলো এমন "চিঠি' আমার প্রিয় বাবা, আশা করি আল্লাহর রহমতে ভলো আছ। আমিও ভালো আছি। তোমার কথা খুব মনে পড়ে, I Miss You Baba. তুমি কবে আসবে! আমাকে আদর করার জন্য। আমি যখন স্কুলে যাই তখন আমার বান্ধবীদের বাবা ওদের স্কুলে নিয়ে আসে। তখন আমার তোমার কথা খুব মনে পড়ে। আমারও ইচ্ছে করে তোমার সাথে স্কুলে যেতে। কতদিন তোমার কোলে উঠি না, তোমার আদর পাই না। আমার বান্ধবীদের বাবা যখন তাদের কোলে নিয়ে আদর করে তখন আমার খুব খারাপ লাগে। আমার জন্মদিনে আমার অনেক বান্ধুবীরা আসে তাদের বাবার সাথে। কিন্তু আমার পাশে তুমি ছিলে না। শুধু আমার মা ছিলো। তখন আমার অনেক খারাপ লেগেছে। আমার অনেক বান্ধবীদের বাবা বিদেশে থাকে। তারা বিদেশ থেকে আসে তুমি আসো না কেন? তুমি তাড়াতাড়ি আসো। আমার আগামী জন্মদিনে তুমি থাকবে। আমি তোমাকে অনেক অনেক মিস্ করছি আমার আদরের বাবা।

'ইতি তোমার অবন্তি"

ভাগ্যের নির্মম বাস্তবতা, ঐ বাবা জীবিত আর বাড়িতে ফিরতে পারেন নাই। ২০১২ সালের শেষের দিকে সাইফ সাহেবের পরামর্শ ও সহযোগিতায় পৃথক একটি দোকানে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করেন। শুরু থেকে ভালোই যাচ্ছিলো। কিন্তু ২০১৫ সালের ২৮শে মার্চ। হঠাৎই হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। চলে যান না ফেরার দেশে। পড়ে থাকে শুধুই মোঃ আনোয়ার হোসেনের নিথর প্রাণহীন দেহ। দেশে ফিরে অবন্তি মামুনিকে কোলে তুলে আদর করা আর হলো না। বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছে পূরণ হলো না অবন্তির।বাবার সাথে একসাথে জন্মদিনের কেক কাটা আর কক্ষনো হলো না।

একজন প্রবাসী তার হৃদয়ের ব্যথাগুলো দেশের পরিবার-পরিজনদের কখনো বুঝতে দেয় না। কেবল প্রবাসীরাই বুঝে জীবন মানে কি। দেশের মায়া ছেড়ে দূর বহুদূরে নিজের মনের বিরুদ্ধে বসত ঘড়ে পরিবাররে হাসির জন্য। কখন যে নিজেই হাসতে ভুলে যায় তা খেয়ালই থাকে না। আসুন আমাদের দেশের প্রত্যেক প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধাদের জানাই সশ্রদ্ধ সালাম। তারা দেশের মানুষের কাছে একটু সম্মান-শ্রদ্ধা ছাড়া আর কিছুই চায় না।                               

Bootstrap Image Preview