Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

হারিয়ে যাচ্ছে মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী খেজুরের গুড়

মেহেদী হাসান সোহাগ, মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারী ২০১৯, ০২:৫৭ PM
আপডেট: ৩১ জানুয়ারী ২০১৯, ০২:৫৭ PM

bdmorning Image Preview


ঐতিহ্যের দিক দিয়ে খেজুর রস আর খেজুরের গুড়ের দক্ষিণের দ্বার বলা হয় মাদারীপুরকে। আদিকাল থেকেই খেজুরের রস ও গুড়ের দিক দিয়ে বেশ ঐতিহ্য রয়েছে মাদারীপুরের। তবে বর্তমানে হারিয়ে যাচ্ছে মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী খেজুরের গুড়।

বানিজ্যিকভাবে অন্য অঞ্চলে রফতানি না হলেও রাজধানীসহ দেশ-বিদেশে স্বজনদের নিকট পাঠানো হয় এ গুড়। এ অঞ্চলের পাটালি গুড় ভাঙলে কাচা রসের মদিরা গন্ধ এবং লাল-খয়েরী স্ফটিকের মতো রঙ আর অতুলনীয় স্বাদ পাওয়া যায়। তবে আগের মত রস না থাকায় চড়া দামেই বিক্রি হয় রস ও গুড়। খাটি গুড় পেতে দামের দিকে নজর দেয় না ক্রেতারা। তবে মাদারীপুুরের এই খেজুরের গুড়ের ঐতিহ্য যাতে হারিয়ে না যায় সে জন্যই জেলা প্রশাসন বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

শীতকাল এলেই মাদারীপুরের খেজুর রস ও গুড়ের ব্যাপক চাহিদা দেখা যায়। স্বজনদের নিকট গুড় পাঠানো, মেয়ে জামাই, আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে বিভিন্ন পিঠা-পায়েস তৈরী করে খাওয়ানোর ধুম পড়ে এ অঞ্চলে। বছরের বাকি সময় এখানে আপনজনেরা বেড়াতে না আসলেও শীতের মৌসুমে খেজুর রস ও গুড়ের স্বাদ গ্রহণ করতে ছুটে আসেন। এ সময় ব্যস্ত থাকে শেয়ালির (গাছি) পরিবারের সদস্যরা।

সকাল হওয়ার আগেই তাপালে রস ঠেলে আগুনের আঁচে ধীরে ধীরে সোনালি, কমলা অবশেষ রক্তিম তার রং। তখন তার কয়েকটি নামে গুড় তৈরি করা হয়। যেমন ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, খানডা গুড়, নলের গুড়। খুব সকালে গাছ থেকে রস নামিয়ে সেই রস জ্বালিয়ে তৈরী করা হয় সুস্বাদু এই গুড়। বাজারে দেখা যায় গুড়ের ক্রেতা বিক্রেতার ভিড়। তবে খাটি গুড় পাবে কিনা তা নিয়ে সংকিত থাকে বেশীরভাগ ক্রেতারা।

সচেতনমহল ও এলাকাবাসী  আব্দুর সাত্তার, ফরিদ, আরিফ, মাসুদ, অজয়, মাসুদ জানান, রস কম হওয়া ও খাটি গুড় পাওয়া গেলেও দাম অনেক। সাধ্যের মধ্য দামটা থাকা উচিৎ। আর খেজুর গাছ বেশী থাকলে রস বেশী পাওয়া যাবে তার সাথে দামটাও কমে আসবে। সাধ্যের মধ্যে কেনা যাবে  খেজুর গুড়। মাদারীপুরের খেজুরের গুড়ের ঐতিহ্য বাচিয়ে রাখার জন্য প্রশাসনের এালাকাভিত্তিক খেজুর লাগানোর  উদ্যোগ নেয়া উচিত, এমনটাই প্রত্যাশাই সচেতন মহলের।

খেজুর গুড় ক্রেতা আফজাল, রহিম, সাওদা, সাইম, রেদেওয়ান, সামিরা আরাফাত, আবির ও  বিক্রেতা আজিজুল, দুলাল, কুদ্দুস বলেন, মাদারীপুরের মস্তফাপুর ভালমানের গুড় পাওয়া যায় তাই আমরা অনেক দূর থেকে গুড় কিনতে এসেছি। তাছাড়া মহসড়কের পাশে মস্তফাপুর হওয়ায় দেশের বাড়িতে যাওয়া-আসার সময় সহজেই কিনে নেয়া যায় এবং বিক্রি করা যায়।

শেয়ালী (গাছি) মানিক মোল্লা জানান, ৪৭ বছর যাবৎ গুড় তৈরী করি আমি। খাটি গুড় বিক্রি করি দাম বেশি নেই, আমার গুড় দেশ বিদেশে যায়। আমার এই খেজুর গাছ কেটে রস বের করে গুড় তৈরি করে সংসারসহ সন্তানের পড়াশুনা করাতে হয়। এ সময় ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় পরিবারের অন্য সদস্যদের।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা মাদারীপুরের ব্রান্ডিং করেছি খেজুর রস খেজুর গুড় দক্ষিণের দ্বার মাদারীপুর। এই অঞ্চলে খেজুর গুড় উৎপাদন করে কিছু মানুষের যেন অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আসে, তাই এরজন্যই ইতি মধ্যেই আমার জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছি।

Bootstrap Image Preview