Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে অভিনব পন্থায় চলছে কোচিং

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারী ২০১৯, ১১:১০ PM
আপডেট: ৩০ জানুয়ারী ২০১৯, ১১:২৪ PM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


বিগত কয়েক বছরে ধরে বোর্ড পরীক্ষা আসলেই যে বিষয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তা হচ্ছে প্রশ্নপত্র ফাঁস। আর নতুন শিক্ষামন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পরেই এই বিষয়ের সমাধানের অংশ হিসাবে চলতি মাসের ২০ তারিখে একটি সরকারি নির্দেশনার মাধ্যমে দেশের সকল কোচিং সেন্টারগুলো আগামী একমাস বন্ধের নির্দেশ দেয়। সরকারের নির্দেশনাকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে রাজধানীতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে উঠে বেশিভাগ কোচিংগুলো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে অভিনব পন্থায়।

রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির এলাকায় গিয়ে দেখা যায় আগের মত কোচিং এর সাইনবোর্ড না থাকলেও বিভিন্ন আবাসিক ভবনে গড়ে উঠা কোচিং গুলোতে বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে। কারো কাঁধে ব্যাগ, কারো হাতে খাতা কলম একজন একজন করে ভিতরে প্রবেশ করছে। সবার গন্তব্য ভিতরের কোচিং সেন্টারে।

শুধু যে সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির এলাকার অবস্থা এমন তা নয়। বনশ্রী , মেরুল বাড্ডা , মধ্যবাড্ডা এলাকাতে একই অবস্থা।

মধ্যবাড্ডার চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে উঠা পারফেক্ট কোচিং গিয়ে দেখা যায় ৪র্থ শ্রেণী থেকে শুরু করে এস.এস.সি পরিক্ষার্থী সকল ক্লাসের প্রাইভেট কোচিং কার্যক্রম চলছে এখানে। কিন্তু আগের মত বাইরে সাইনবোর্ড নেই।

এ বিষয়ে কথা বলার কোচিং এর মালিকে খোঁজা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু মালিকের মেয়ে পরিচয়ে দিয়ে একজন কথা বলতে এগিয়ে আসেন। তিনি জানান তাঁর নাম লিজা আক্তার। তিনি বর্তমানে এই কোচিং এর দায়িত্বে আছে। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, “সরকারের বন্ধ নির্দেশনা পরেও কেন কোচিং খোলা রেখেছে ?”

তিনি বলেন, আমরা তো ছোট ক্লাসের ছাত্রদের নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছি। আর সরকার শুরু এস.এস.সি পরিক্ষার্থীদের জন্য বন্ধ রাখতে বলেছে।

এ সময় ভিতরের প্রবেশের চেষ্টা করলে বাঁধা দেয়া হয়।  হুমকি দিয়ে বলেন ভিতরে প্রবেশের জন্য বেশি জড়াজড়ি করলে সমস্যা করবেন । 

রাজধানীর বাণিজ্যিক কোচিং এর কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে খ্যাত মোহাম্মদপুর, মিরপুর, ফার্মগেট, মৌচাক, বেইলীরোডে এলাকায় থাকা কোচিং সেন্টারগুলোর সামনে সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী কোচিং বন্ধের নোটিশ থাকলেও বেশি ভাগ কোচিং গুলোতে বিকল্প ভাবে চালিয়ে নিচ্ছে কার্যক্রম।

এছাড়া শুধু মাত্র বোর্ড পরীক্ষাকে কেন্দ্রে করে গড়ে উঠা বাণিজ্যিক কোচিং গুলো স্থায়ী ঠিকানা থেকে সরে গিয়ে এক মাসের জন্য ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

মিরপুরের জনতা হাউজিং এর এক কোচিং সেন্টারের মালিক নাম ও পরিচয় না প্রকাশের শর্ত দিয়ে বিডিমর্নিং কে জানান, ভাই আমরা তো এসএসসি পরিক্ষার্থীদের ৪৫ দিনের প্যাকেজে ভর্তি নিয়েছি। এখন আমরা বন্ধ রাখলে অভিবাকরা আমাদের সাথে ঝামেলা করবে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা একমাসের জন্য অধিক অর্থ ব্যয় করে অন্যস্থানে ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছি।  

কোচিং চালিয়ে যাওয়া একাধিক কোচিং সেন্টারের কর্তৃপক্ষদের সাথে কথা হলে তারা দাবি করেন এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস করাচ্ছেন না।  এছাড়া অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে সরকারের কোনো নিষেধ নেই। তাই ক্লাস কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

মিরপুর সনি সিনেমা হলের পাশে কোচিংয়ের লাইব্রেরী চালু রাখার নামে ‘নিউ আইডিয়াল কোচিং সেন্টার’  তাদের কার্যক্রম চালু রেখেছে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ভিতরে প্রবেশ করলে কথা হয় নিউ আইডিয়াল কোচিং সেন্টারের একজন মালিক মানিক বিশ্বাসের সাথে। তিনি বলেন, বাচ্চারা যাতে নিজেরা নোট তৈরিতে আগ্রহী হয় এর জন্য লাইব্রেরীর ব্যবস্থা রেখেছি। আর এর অংশ হিসাবে প্রতিদিন  দুপুর ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা রাখি। আর ভিরতে যাদের ক্লাস চলছে তারা কেউ এস এস সি পরিক্ষার্থী না।

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিকক্ষরাও এ কায়দা বেছে নিয়েছেন প্রশাসনকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য। মোঃপুরে বেঙ্গলী মিডিয়াম হাই স্কুলের পরিক্ষার্থী ছাত্র জাবেদের সাথে কথা হলে জানান,  তিনি স্কুলের এক শিক্ষকের কাছে পড়েন। আগে তাঁদের কোচিং ক্লাস হত তাজমহল রোডের একটি বাসাতে। কিন্তু এখন ক্লাস হচ্ছে স্যার এর বাসাতে। 

অ্যাসোসিয়েশন ফর স্যাডো এডুকেশন অব বাংলাদেশের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহামুদুল হাসান সোহাগ সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের তালিকা ভুক্ত সকল কোচিং বন্ধ আছে। আর কেউ যদি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে কোচিং সেন্টারগুলোর কার্যক্রম চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।

Bootstrap Image Preview