Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

এক বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার: জিএফআই

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারী ২০১৯, ০৫:২৩ AM
আপডেট: ২৯ জানুয়ারী ২০১৯, ০৫:২৩ AM

bdmorning Image Preview


আমদানি ও রফতানির আড়ালে বাংলাদেশ থেকে ২০১৫ সালে ৫৯১ কোটি ৮০ লাখ ডলার পাচার হয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যার পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক রিপোর্টে এ প্রাক্কলন করা হয়েছে। জিএফআই গতকাল ১৪৮টি উন্নয়নশীল দেশকেন্দ্রিক অবৈধ অর্থের প্রবাহ (২০০৬-২০১৫) নামে এ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।

রিপোর্টে ২০১৫ সালে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বেশি মূল্য ও পরিমাণ দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং) ও রফতানির ক্ষেত্রে কম মূল্য ও পরিমাণ দেখানোর (আন্ডার ইনভয়েসিং) মাধ্যমে কোন দেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থ বাইরে পাচার হয়ে গেছে এবং অন্য দেশ থেকে একইভাবে কী পরিমাণ অর্থ এসেছে, তার প্রাক্কলন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, টাকা পাচার হয়েছে এমন শীর্ষ দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশসহ এশিয়ার চারটি দেশ। অন্য তিন দেশ হলো- ভারত, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইন। আবার অন্য দেশ থেকে পাচার হয়ে এসেছে এমন শীর্ষ ৩০ দেশের মধ্যেও রয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে পাচার হয়ে এসেছে ২৮০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যার পরিমাণ প্রায় ২৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

২০১৪ সাল পর্যন্ত জিএফআই বাণিজ্যের পাশাপাশি অন্য উপায়ে পুঁজি পাচারের প্রাক্কলন করত। ২০১৫ সালের প্রাক্কলনে তারা শুধু বাণিজ্যের আড়ালে পাচারের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এ কারণে আগের তুলনায় ২০১৫ সালের যথার্থ তুলনা করা যাচ্ছে না। জিএফআইর প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হয় ৯১০ কোটি ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় ৭৬ হাজার কোটি টাকা। ২০১৩ সালে পাচার হয় ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

আমদানিকারক ও রফতানিকারক দেশের তথ্যের মধ্যে গরমিল এবং ব্যালেন্স অব পেমেন্টের অসামঞ্জস্যতা থেকে জিএফআই অর্থ পাচারের প্রাক্কলন করে। জিএফআই বলেছে, এর বাইরেও নানা প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচার হয়। ফলে প্রকৃতপক্ষে তাদের হিসাবের চেয়ে বেশি অঙ্কের টাকা পাচার হয়ে থাকে। জিএফআইর হিসাবে গত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ৭০ বিলিয়ন বা ৭ হাজার কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার বিবেচনায় নিলে যার পরিমাণ ৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। আইএমএফের কাছে প্রত্যেক দেশের পাঠানো আমদানি-রফতানির ডাটা বিশ্নেষণ করে যে গরমিল পাওয়া যায়, তা থেকেই এ প্রাক্কলন করা হয়েছে।

অর্থ পাচার নিয়ে গবেষণা করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম। মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার বাংলাদেশের পুরনো সমস্যা। যা পাচার হয়, তার অর্ধেকের বেশি এ পদ্ধতিতে হয়। কাস্টমস, ব্যাংক ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অদক্ষতার কারণে অর্থ পাচার হচ্ছে। আর অন্য দেশ থেকে টাকা কী কারণে বাংলাদেশে পাচার হয়ে আসছে, তা নিয়ে পর্যালোচনা না করে বলা কঠিন।

জিএফআইর রিপোর্টে বলা হয়, উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ অর্থ আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব দেশের সঙ্গে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ৩ হাজার ৩৭৩ কোটি ডলার। আমদানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েসিং হয়েছে ১ দশমিক ১ শতাংশ। আন্ডার ইনভয়েসিং হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। রফতানি বাণিজ্যে ওভার ইনভয়েসিং হয়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং আন্ডার ইনভয়েসিং হয়েছে ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ।

প্রতিবেদনটি দৈনিক সমকালের

Bootstrap Image Preview