ক্ষুদে কীটনাশক ব্যবসায়ী সংখ্যালঘু এক নারীর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে এমপির হস্তক্ষেপে ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন পুলিশের এক এসআই। বরিশালের বানারীপাড়ার এ ঘটনায় প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বানারীপাড়া থানার বিতর্কিত এসআই মোশারেফ হোসেন শনিবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় উপজেলার বিশারকান্দি ইউনিয়নের মুড়ারবাড়ি বাজারের ক্ষুদে কীটনাশক ব্যবসায়ী সীমা পান্ডের দোকানে হানা দিয়ে মেয়াদোর্ত্তীণ দুই বোতল কীটনাশক পাওয়ার অজুহাতে তাকে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে থানায় নিয়ে আসার ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে একপর্যায়ে তাকে ছেড়ে দেওয়ার শর্তে অর্ধলাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন।
দরিদ্র ওই কীটনাশক ব্যবসায়ীর স্বামী ও স্বজনরা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সুদে ৩০ হাজার টাকা এনে এসআই মোশারেফ হোসেনের হাতে তুলে দিয়ে বাকী ২০ হাজার টাকা রোববার (২৭ জানুয়ারি) সকালে দেওয়ার অঙ্গিকারে তাকে ছাড়িয়ে নেন। দরিদ্র ওই নারী ঘুষ দাবির বাকি ২০ হাজার টাকা কোনোভাবেই ম্যানেজ করতে না পেরে এবং টাকা চেয়ে এসআই মোশারেফ হোসেনের অব্যাহত ফোনের কারণে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। এরপর স্থানীয়দের পরামর্শে রোববার সকালে তিনি বানারীপাড়ায় মাদক, ঘুষ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণাকারী নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমের বাড়িতে হাজির হয়ে বিষয়টি তাকে জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ওই সময় বানারীপাড়ায় অনুষ্ঠিত পুলিশের সেবা সপ্তাহের র্যালিতে অংশগ্রহণ করতে আসা জেলা সহকারী পুলিশ সুপার (উজিরপুর সার্কেল) মো. আকরামুল হাসানকে সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম বিষয়টি অবহিত করে ঘুষের ওই টাকা ফেরত দেওয়াসহ ঘুষখোর এসআই মোশারেফ হোসেনের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। র্যালি শেষে ভুক্তভোগী ওই সংখ্যালঘু নারীকে থানায় ডেকে জেলা সহকারী পুলিশ সুপার (উজিরপুর সার্কেল) মো. আকরামুল হাসান বিষয়টি শুনে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে এসআই মোশারেফ হোসেনকে ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিলে তাৎক্ষণিক ৩০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
এদিকে পুলিশের কাছ থেকে দরিদ্র নারীকে ঘুষের টাকা ফেরত এনে দেওয়ায় সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমকে এলাকাবাসী সাধুবাদ জানিয়েছেন। এসআই মোশারেফ হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা যায়, হতদরিদ্র ওই নারী ছোট একটি দোকানে কীটনাশক বিক্রি করে নিজ সংসার চালানোর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত দুই মেয়েকে লেখাপড়ার খরচ চালান বলে। নারী পুলিশ ছাড়া ওই নারীকে পুরুষ এসআই নিজেই আটক করে হ্যান্ডকাপ পড়ানোর বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এছাড়া সার ও কীটনাশকের দোকানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অভিযান চালানোর নিয়ম থাকলেও অসৎ উদ্দেশ্যে পুলিশের ওই এসআই অভিযান চালিয়েছেন।
বানারীপাড়া থানার ওসি মো. খলিলুর রহমানের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি একটি অনুষ্ঠানে রয়েছেন, থানায় এসে জানাবেন বলে জানান।
জেলা সহকারী পুলিশ সুপার (উজিরপুর সার্কেল) মো. আকরামুল হাসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছেন বলে জানান।