Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যে প্রভাবে ট্রাফিক পুলিশ পেটালেন সেই তানজিল

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারী ২০১৯, ০৭:০১ PM
আপডেট: ২৭ জানুয়ারী ২০১৯, ০৭:০১ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


উলটো পথে গাড়ি যেতে বাধা দেওয়ায় ট্রাফিক পুলিশকে পেটানো সেই সরকারি কর্মকর্তা বি এম তানজিল আহমদকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৫ টায় সিলেট নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্টে দায়িত্ব পালনকালে এক ট্রাফিক সদস্যকে বেধড়ক পেটান তানজিল আহমদ। এরপর থেকেই সিলেটসহ সারাদেশের মানুষের কাছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন এই সরকারি কর্মকর্তা।

তানজিল সুনামগঞ্জ জেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক। তিনি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার উত্তর দুবাগ গ্রামের ফরিদ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা ব্যবস্থাপক পদ নিয়ে বদলি হয়ে আসেন সুনামগঞ্জে।

তার বিরুদ্ধে রয়েছে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ। বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় খাতে প্রয়োজন দেখিয়ে নিয়েছেন টাকা, রয়েছে সরকার দলীয় ক্ষমতা। ছাত্র জীবনে করেছেন ছাত্রলীগ। এছাড়াও তার কর্মস্থলের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে তার কাছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষরা হয়েছেন হয়রানির শিকার। তিনি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন সব সময়।

অভিযোগ উঠেছে, উনাকে কেউ ভাই বা আঙ্কেল বললে খুব ক্ষেপে যান তিনি। এনিয়ে তিনি ওই কর্মকর্তা বা সাধারণ মানুষকে খুব কথা শুনান বলে অভিযোগ উঠেছে। যার ফলে এক কর্মকর্তাকে প্রত্যন্ত উপজেলায় বদলি করেন তিনি।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে বদলি হওয়া পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, উনি অফিসের বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের জন্য টাকা তুলেছেন। আসবাপত্র কিনলেও নিম্নমানের। প্রতিবাদ করায় তাকে বদলি করে দিয়েছে।

এ ব্যাপারে বদলি হওয়া ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা সরকারি কর্মচারী। যা হবে আমাদের সরকারকে জানাতে হয়। কিন্তু তানজিল সাহেব ব্যবস্থাপক হয়ে আসার পর কর্মস্থানের দৃষ্টপট বদলে যায়। অবশ্য তার আগে যিনি ছিলেন তিনিও দুর্নীতির মধ্যে ছিলেন এবং তানজিল সাহেবের ভালো বন্ধু ছিলেন। তার অনিয়মের মধ্যে অন্যতম হল বিভিন্ন আবসবাপত্র যেমন কম্পিউটার ক্রয়, চেয়ার, টেবিল, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কিন্তু তার মধ্যে অধিকাংশই তিনি কিনেননি। ভুয়া কাজ দেখিয়ে টাকা নিয়েছেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, উনার সঙ্গে দেখা করা যায় না। প্রায় সময় উনি অফিসেই থাকেন না। যদিও তার সঙ্গে দেখা হয় কিন্তু উনাকে ভুলবশত একবার ভাই বলায় উনি আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছেন। উনাকে স্যার বলতে হবে। স্যার না বললে খুব খারাপ ব্যবহার করেন।

অফিসের অন্য এক কর্মকর্তা জানান, উনাকে সবাই হাফ মেন্টাল (আধা পাগল) বলে ডাকেন। কারণ উনার রাগ নাকি সবচেয়ে বেশি। আর একবার তার রাগ উঠলে উনি কি করেন না করেন তিনি নিজেও জানেন না। তাছাড়া এতই ক্ষমতা যে কোনো কিছু করে বলেন আমি সরকারি লোক। আমার কিছু করা এত সহজ না। ছাত্রলীগ করে এসেছি।

এদিকে এ ঘটনায় আহত ট্রাফিক সদস্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে তানজিল আহমদ মোটর সাইকেল যোগে চৌহাট্টা থেকে জিন্দাবাজার অভিমুখে ওয়ানওয়ে রাস্তা দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ সময় সিলেট মহানগর পুলিশের দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্য মো. আলী তার মোটরসাইকেলকে সিগন্যাল দিলে সে তা অমান্য করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ অবস্থায় ট্রাফিক সদস্য আলী একটু এগিয়ে গিয়ে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করলে মোটরসাইকেল থেকে নেমে ট্রাফিক সদস্যের হাতের লাঠি কেড়ে নিয়ে তাকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করেন তানজিল।

এক পর্যায়ে উপস্থিত জনতার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে ট্রাফিকের অন্যান্য সদস্যরা এসে তানজিলকে আটক করে। এ সময় তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটিও জব্দ করা হয়।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের (ট্রাফিক) উপ পুলিশ কমিশনার ফয়সাল মাহমুদ জানান, জনসমক্ষে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়া তার মোটরসাইকেলটি জব্দ করা হয়েছে।

Bootstrap Image Preview