Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

পাঠাও রাইডারের অপকর্মের শিকার তরুণী!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারী ২০১৯, ০৭:২০ PM
আপডেট: ২৫ জানুয়ারী ২০১৯, ০৭:২০ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


গত ২০ জানুয়ারি হঠাৎ ফেসবুকে নিজের নামের ফেসবুক আইডি দেখতে পান রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সানজিদা রহমান (ছদ্মনাম)। এমনকি সেখান থেকে মেসেঞ্জারে তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টও পাঠানো হয়েছে। পরে ওই আইডি থেকে সানজিদার কিছু 'প্রাইভেট ছবি' মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে তার কাছে টাকা দাবি করা হয়। সেঘটনায় অনেকটাই তাজ্জব বনে যান এই তরুণী।

এরপর টাকা না দিলে ওই ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। উপায়ান্ত না দেখে সানজিদা প্রথমে তাদের দেওয়া একটি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে এক হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন।

ভেবে পাচ্ছিলেন না এই ছবিগুলো অন্যের কাছে গেল কী করে। দুশ্চিন্তায় মাথার চুল ছেঁড়ার অবস্থা। একান্তই ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবিগুলো পাঠিয়ে টাকা দাবি করে। দাবিকৃত টাকা না দিলে ছবিগুলো ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তরুণীকে জানানো হয়, তার পরিচিত জনের কাছ থেকে ছবিগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। কথাগুলো বিশ্বাসযোগ্য না মোটেও। তবে একটি বিষয়ে তিনি নিশ্চিত হন যে, তার ব্যক্তিগত ছবিগুলো অনেকের কাছে চলে গেছে। কি করবেন- ভেবে কূল-কিনারা পাচ্ছিলেন না। ছবিগুলো ভাইরাল হলে কি হবে, মান-সম্মানের ব্যাপার বলে কথা।

এরপর বিষয়টি পুলিশ কর্মকর্তাদের অবহিত করেন সানজিদা। হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা করেন তিনি। পরে মামলাটির তদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। ওই তদন্তে যা উঠে এসেছে, তা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়।

তদন্তের শুরুতেই পুলিশ সানজিদার ছবি নিয়ে যারা প্রতারণা করছিল, তাদের ধরতে গোয়েন্দা ফাঁদ পাতে। সানজিদার মাধ্যমে ওই চক্রের সদস্যের যোগাযোগ করানো হয়। বাকি টাকা দেওয়ার বিনিময়ে ফেরত চাওয়া হয় সানজিদার প্রাইভেট ছবি। এতে রাজিও হয় তারা। ফের একটি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের নম্বর দেয় ওই চক্র। এরই মধ্যে পুলিশ ওই নম্বর কোন জায়গায় ব্যবহার করা হয়, তার ঠিকানা সংগ্রহ করে। তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওই এজেন্ট নম্বরটি মিরপুরে ব্যবহার করা হয়।

এরপর ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর শেওড়াপাড়ার ওই বিকাশের দোকান থেকে টাকা উত্তোলন করতে যায় দুই তরুণ। দোকানের আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের পুলিশ সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের আটক করেন। গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের উপ-পরিদর্শক মহিদুল। শুনানি শেষে আদালত দুই আসামির দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গ্রেফতারের পর জানা যায়, ওই দুই প্রতারকের নাম সাজিদুর রহমান (১৯) ও নাহিদুল ইসলাম (১৯)। অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাও-এর চালক সাজিদুর। আর নাহিদুল তার বন্ধু। তবে পাঠাও থেকে পার্সেল সার্ভিসের কল এলে মাঝেমধ্যে সাজিদুর রিসিভ করার পর তার বন্ধু নাহিদুল মোটরসাইকেলে তা গন্তব্যে পৌঁছে দিত। সাজিদুর ঢাকা কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকের ছাত্র। আর নাহিদুল মিরপুরে একটি পলিটেকনিক কলেজে পড়াশোনা করে।

সম্প্রতি তারা পাঠাও-এর একটি পার্সেল নিয়ে মিরপুর থেকে হাতিরঝিলের একটি ঠিকানায় পৌঁছে দিতে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে পার্সেলটি খুলে তা উল্টেপাল্টে দেখে তারা। ওই সময় পার্সেলে একটি মোবাইল সেট পায়। তাৎক্ষণিকভাবে সেটটি চালুর পর সেখানে এক নারীর বেশ কিছু 'প্রাইভেট ছবি' দেখতে পায়। মোবাইল ফোন থেকে তারা ওই নারীর ফেসবুক আইডিও বের করে। এরপর দ্রুত ব্লুটুথের মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও নিজেদের মোবাইলে নিয়ে নেয়। পরে পার্সেলটি নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেয়। পরে ওই নারীর ছবি ব্যবহার করে দুটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলে সাজিদুর ও নাহিদুল। এরপর তার ছবি ফেসবুক মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে ছবি ভাইরাল করার হুমকি দেয় তারা।

তদন্তে উঠে এসেছে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ূয়া ওই তরুণী সম্প্রতি তাদের হাতিরঝিলের বাসা থেকে বেড়াতে মিরপুরের এক আত্মীয়ের বাসায় যান। সেই বাসায় একটি মোবাইল সেট ভুলে ফেলে আসেন। পরে তার ওই আত্মীয় মোবাইল সেটটি পাঠাও-এর পার্সেল সার্ভিসের মাধ্যমে তরুণীর বাসায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু পথিমধ্যে পার্সেল খুলে পাঠাও-এর এক চালক ও তার বন্ধু তরুণীর ছবি পেয়ে তাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, মেসেঞ্জারে নিজের 'প্রাইভেট ছবি' দেখার পর ওই তরুণীর ধারণা ছিল, হয়তো সম্প্রতি হারানো তার একটি মোবাইল সেট কারও হাতে পড়ায় সেখান থেকে ছবি পেয়েছে কেউ। তবে আত্মীয়ের বাসায় ফেলে আসা মোবাইল ফোন থেকে পার্সেল সার্ভিসের কেউ এভাবে তার ছবি ব্যবহার করে প্রতারণার ফাঁদ পাতবে- এটা তার কল্পনারও বাইরে ছিল।

এ ব্যাপারে পাঠাও-এর লিড মার্কেটিং অফিসার সৈয়দা নাবিলা মাহমুদ বলেন, পাঠাও-এর কোনো সদস্য এ ধরনের অপরাধে জড়ালে তার দায় প্রতিষ্ঠান নেবে না। প্রতিষ্ঠানের সুনাম ধরে রাখতে তারা বদ্ধপরিকর। পুলিশ তদন্তে সহায়তা চাইলে তা করতে প্রস্তুত পাঠাও কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার সৈয়দ নাসিরুল্লাহ জানান, গ্রেফতার দু’জন ছাত্র। সাজিদুর ঢাকা কলেজে ও নাহিদুল পলিটেকনিকে অধ্যয়নরত। তারা কোনো চক্রের সঙ্গে জড়িত কি-না, এ ছাড়াও আরো কোনো অপরাধ করেছে কি-না, এসব বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়াও বিষয়টি বাইক রাউড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। এ বিষয়ে তাদের ভূমিকা সম্পর্কেও জানতে চাওয়া হবে বলে জানান তিনি।

Bootstrap Image Preview