Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

দর্শকের ভূমিকায় প্রশাসন, অবাধে চলছে কোচিং বাণিজ্য!

ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারী ২০১৯, ০১:০৯ PM
আপডেট: ২৫ জানুয়ারী ২০১৯, ০১:০৯ PM

bdmorning Image Preview


নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবাধে চলছে কোচিং বাণিজ্য। নীতিমালা থাকলেও এ বিষয়ে প্রশাসন দর্শকের ভূমিকায় চুপচাপ থাকায় শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা এখন একটি কাগুজি আদেশে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা।

উপজেলার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সবচেয়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে কোচিং বাণিজ্য। শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে কয়েক দফা নীতিমালা করলেও শিক্ষা কর্মকর্তাদের রহস্যজনক নিরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অভিভাবক মহলে।তারা এ বাণিজ্য রোধে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিয়মিত অভিযান কামনা করছেন।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে স্কুল কলেজের ক্লাস শুরু হলেও রাত পোহালেই ব্যাগ ভরা বই কাঁধে দেখা মিলে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের। আবার বিকেল চারটায় স্কুল ছুটি হলেও সন্ধ্যার পরও বই নিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের আসা যাওয়া করতে দেখা যায় যা বিশেষ করে ছাত্রীদের জন্য একেবারেই নিরাপদ নয়। নানাবিধ সমস্যা ছাড়াও প্রতিটি বিষয়ে অভিভাবকদের গুনতে হচ্ছে ৩শ’ থেকে ৫’শ টাকা এতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহ হারাচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রছাত্রী। একজন শিক্ষার্থীকে একাধিক বিষয়ে প্রাইভেট পড়তে হয় যা মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে অসম্ভব।

শিক্ষার্থীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষক কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব শিক্ষক নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং করান। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি মাসে মাথাপিছু ৩’শ থেকে ৫’শ টাকা করে ফি নেয়া হয়। এক ঘণ্টা করে একাধিক দলে (ব্যাচ) শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো হয়। একেকটি দলে ১৫ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী থাকে। কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম শুরুর আগে ও পরে শ্রেণীকক্ষ ব্যবহার করেও কোচিং করান।

বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাইভেট-কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের তাদের কাছে পড়তে বাধ্য করেন কিংবা চাপ দেন। নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকের কাছে কোচিং না করলে ওই শিক্ষকেরা তাদের বকাঝকা করেন। পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়ার হুমকি-ধমকি দেন। এতে শিক্ষার্থী-শিক্ষকের সম্পর্কের অবনতির পাশাপাশি পাঠদান ও পাঠগ্রহনে ধারাবাহিকতা বিঘ্ন ঘটছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, ‘শ্রেণীকক্ষে ভাল পড়ালেখা হয় না। তাই কোচিং সেন্টার কিংবা শ্রেণী শিক্ষকের নিকট ছেলে মেয়েদের প্রাইভেট পড়াতে হয়। যে সব ছাত্র ছাত্রীরা ক্লাস স্যারের নিকট প্রাইভেট পড়েন তারা স্যারদের অতি নজরে থাকেন এমন কি পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের সময়ও তাদের উপর স্যারদের সুনজর থাকে। যার ফলে বাধ্য হয়েই ছেলে মেয়েদের কোচিং করতে অথবা প্রাইভেট পড়াতে পাঠাতে হয়।’

কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ২০১২ সালে প্রণীত নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৭-এ উল্লেখ আছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি কোচিং বাণিজ্য রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোচিং বাণিজ্য বন্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রয়োজনীয় প্রচারণা ও অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। অনুচ্ছেদ ১৪-এর ‘ক’ উপ-অনুচ্ছেদে বলা আছে, এমপিওভুক্ত কোন শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তার এমপিও স্থগিত, বাতিল, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, বেতন এক ধাপ অবনতিকরণ, সাময়িক বরখাস্ত, চূড়ান্ত বরখাস্ত ইত্যাদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

একই অনুচ্ছেদের ‘খ’ উপ-অনুচ্ছেদে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের এমপিও বিহীন শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তার প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত বেতন ভাতাদি স্থগিতসহ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য একই ধরনের শাস্তি  প্রদানের কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে অনুচ্ছেদের ‘ঙ’ উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫ প্রয়োগ করা হবে। আইন জানা সত্বেও শিক্ষকরা ঝুকে পড়ছেন প্রাইভেট ও কোচিং ব্যবসায়। ২০১২ সালের জুন মাসের নীতিমালা অনুযায়ী কোন শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবে না। শুধুমাত্র বাইরের শিক্ষার্থীদের পড়াতে পারবে তাও ১০ জনের বেশি নয়। কিন্তু বর্তমানে মহাদেবপুরে বিশেষ কিছু বিষয়ের শিক্ষকরা নীতিমালাকে বৃদ্ধা আঙ্গুলী দেখিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের শিক্ষা বাণিজ্য।

নীতিমালায় আরও বলা  হয়েছে, কোন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ের ব্যাপারে উৎসাহিত বা বাধ্য করতে পারবে না। এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরুর আগে ও পরে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন।

তবে এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাথাপিছু ১’শ ৫০ টাকা করে ফি রসিদের মাধ্যমে আদায় করতে হবে। ওই ফি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের নিয়ন্ত্রণে একটি আলাদা তহবিলে জমা থাকবে। এর থেকে প্রতিষ্ঠানের পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সহায়ক কর্মচারীদের ব্যয় বাবদ ১০ শতাংশ কর্তন করে বাঁকি টাকা অতিরিক্ত ক্লাসে নিয়োজিত শিক্ষকদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে।

সম্প্রতি একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জানা গেছে, এসব নিয়ম না মেনেই চলছে প্রাইভেট ও কোচিং। এ বিষয়ে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছে জানতে চাইলে তারা কোন মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. হাবিবুর রহমান জানান, ‘কোচিং বাণিজ্য অবশ্যই নিষিদ্ধ। তবে লুকায়িত ভাবে কে কোথায় কিভাবে কোচিং বাণিজ্য করছে আমার জানা নেই।’

Bootstrap Image Preview