Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাংলাদেশের জন্য নতুন হুমকি 'ফল আর্মি ওয়ার্ম'

শামসুজ্জোহা পলাশ, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারী ২০১৯, ০৯:৫৩ PM
আপডেট: ২২ জানুয়ারী ২০১৯, ০৯:৫৩ PM

bdmorning Image Preview


আমেরিকা মহাদেশের মারাত্নক ক্ষতিকারক পোকা 'ফল আর্মি ওয়ার্ম' (গরমের পোকা)। ফসলের জন্য বিধ্বংসী এই পোকা আমেরিকা, আফ্রিকার পর ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে আফ্রিকায় তো দুর্ভিক্ষেরই সৃষ্টি করেছে পোকাটি।

গত ২২ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দহুদা গ্রামের একটি ভুট্টা ক্ষেতে ভয়াবহ এ পোকার অস্তিত্ব ধরা পড়ে। পোকাটি এতটাই ভয়াবহ যে মুহূর্তেই ক্ষেতের পর ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ক্ষেতের পরিমাণ। কোনো প্রতিষেধক ব্যবহার করেই প্রতিকার মিলছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পোকাটির কারণে প্রথমেই ধ্বংসের মুখে পড়বে দেশের ভুট্টা চাষ। এরপর ছড়িয়ে পড়বে ধান-গমসহ অন্য ফসলে। অল্প সময়ে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে ‘ফল আর্মি ওয়ার্ম’ (গরমের পোকা)। তবে, কৃষি বিভাগ বলছে, ফল আর্মি ওয়ার্ম প্রতিরোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছে তারা।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দহুদা গ্রামের কৃষক সাবেক মেম্বার আব্দুল করিম জানান, গত কয়েক বছর ধরে নেক ব্লাস্টের কারণে গম আবাদ করা যাচ্ছে না। ধান ও পাটের আবাদে ধারাবাহিক লোকশান গুণতে হচ্ছে।

তিনি জানান, শুধুমাত্র ভুট্টা আবাদই তার মতো হাজার হাজার কৃষকদের বাঁচিয়ে রেখেছিল। কিন্তু, এখন ‘ফল আর্মি ওয়ার্মে’ (গরমের পোকা) সেটিও ধ্বংস হলে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে।

পার্শ্ববর্তী চিৎলা গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, এখনই ফসলের জন্য এ পোকা দমনে সরকারি পদক্ষেপ দরকার। তা না হলে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে কৃষকদের।

কৃষি অফিস সূত্র জানায়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. খন্দকার শরিফুল ইসলাম তাদের জানিয়েছেন, ফল আর্মি ওয়ার্ম বাংলাদেশে একেবারেই অপরিচিত পোকা। এতদিন দেখা যেত আমেরিকা আর কানাডায়। এই পোকা পাতা ও কাণ্ড খেয়ে ফেলে নষ্ট করে ফসল। পাড়ি দিতে পারে দিনে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ। ২০১৭ সালে আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বেশ কয়েকটি দেশে খাদ্যশস্য নষ্ট করে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির জন্যও দায়ী পোকাটি। তিনি আরোও জানান, পোকাটির সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর দিক হলো, এরা দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। একদিনে জন্মগ্রহণ করে কয়েক হাজার বাচ্চা।

দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিউর রহমান জানান, ফল আর্মি ওয়ার্ম (গরমের পোকা) নির্মূলে তারা দিনরাত কাজ করছেন। স্থানীয় কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তার মতে, পোকাটি গরমকালে দ্রুতবেগে বংশ বিস্তারে সক্ষম হলেও শীতে ভয়াবহতা কম। আর এ কারণে আক্রান্ত হওয়ার পরও পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে আতঙ্কিত না হবার পরামর্শ দিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক ড. মো. আব্দুল মুঈদ জানান, পোকাটি দমনে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সুফি রফিকুজ্জামান জানান, গত বছরের ৩০ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দহুদা গ্রামের কৃষক গোলাম মল্লিকের ভুট্টা ক্ষেতে প্রথম ধরা পড়ে এ ভয়াবহ পোকার অস্তিত্ব। পরে পোকাটির নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর ২২ ডিসেম্বর নিশ্চিত হওয়া যায় এটিই ভুট্টা-ধানসহ ৮০ ধরনের ফসলের জন্য মরণঘাতী ‘ফল আর্মি ওয়ার্ম'।

Bootstrap Image Preview