Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

ইজতেমা: ডাক পেলেও আসেনি এক পক্ষ, ফের বুধবার বসবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:৪২ PM
আপডেট: ২১ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:৪২ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


তাবলিগ জামাতের বিবাদমান দুই পক্ষকে ডেকে সরকার সভায় বসলেও এক পক্ষ না আসায় বিশ্ব ইজতেমার অভিন্ন তারিখ নির্ধারণ করা যায়নি। তাই আগামী বুধবার ফের সভা ডাকা হয়েছে।

তাবলিগের এক পক্ষ না আসায় অন্য পক্ষের মতামত নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, এবারের ইজতেমার তারিখ নির্ধারণে বুধবার দুই পক্ষকে নিয়ে বসবেন তারা। সোমবার বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৈঠকে তাবলিগের দিল্লি মারকাজের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা উপস্থিত হয়েছিলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান কামাল ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন এই পক্ষের নেতা কাকরাইল মারকাজের শূরা সদস্য ওয়াসিফুল ইসলাম। কিন্তু দেওবন্দ অনুসারীরা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “আরেকটি পক্ষ সময়মতো জানতে না পেরে আসতে পারেনি। আমরা বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় উভয়পক্ষকে নিয়ে একসাথে বসব এবং তাদেরকে (উভয় পক্ষ) ইজতেমার তারিখ ঠিক করতে বলব।”

এই দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব সংঘাতে গড়ানোর পর এবারের বিশ্ব ইজতেমা স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের টঙ্গিতে এই ইজতেমা হয়ে আসছে।

সভা শেষে সাদপন্থী সৈয়দ আশরাফ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে ইজতেমা করতে রাজি আছি। তবে আমাদের কিছু দাবি রয়েছে।’

যদিও আশরাফ আলী এরপর বলেন, ‘এখন যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে একসঙ্গে ইজতেমা হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না।’

উপমহাদেশে সুন্নী মতাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় সংঘ তাবলিগ জামাতের মূলকেন্দ্র ভারতের দিল্লিতে। মাওলানা সাদের দাদা ভারতের ইসলামি পণ্ডিত ইলিয়াছ কান্ধলভি ১৯২০ এর দশকে তাবলিগ জামাত নামের এই সংস্কারবাদী আন্দোলনের সূচনা করেন।

মাওলানা ইলিয়াছের মৃত্যুর পর তার ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ এবং তারপর মাওলানা ইনামুল হাসান তাবলিগ জামাতের আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। মাওলানা ইনামুলের মৃত্যুর পর একক আমিরের বদলে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দেওয়া হয় একটি শূরা কমিটির উপর।

মাওলানা জুবায়েরের মৃত্যুর পর মাওলানা সাদ আমিরের দায়িত্ব নেন এবং একক নেতৃত্বের নিয়ম ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু মাওলানা জুবায়েরের ছেলে মাওলানা জুহাইরুল হাসান তখন নেতৃত্বের দাবি নিয়ে সামনে আসেন এবং তার সমর্থকরা নতুন করে শুরা কমিটি গঠনের দাবি জানান। কিন্তু সাদ তা প্রত্যাখ্যান করলে বিরোধ বড় আকার ধারণ করে।

নেতৃত্ব নিয়ে দিল্লির মারকাজ এবং দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারীদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে গত বছর জানুয়ারিতে ঢাকায় বিশ্ব ইজতেমার সময়। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করে আসা সাদ কান্ধলভি বিরোধীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত ইজতেমায় অংশ না নিয়েই তাকে ঢাকা ছাড়তে হয়।

তারপর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে।

তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে- আগের মতো নিজামুদ্দিন (নিজামুদ্দিন আউলিয়া) মারকাজের তত্ত্বাবধানে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে হবে। পছন্দমতো বিদেশি মেহমান আনা ও প্রথম ইজতেমা করার সুযোগ দিতে হবে।

তাবলিগ জামাতের দিল্লির আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিভিন্ন সময়ে দেখা বক্তব্য নিয়ে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশের তাবলিগ জামাত। আলেমরা সাদ বিরোধী ও সাদপন্থী দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে।

এই বিভক্তি চরম আকার ধারণ করে গত বছরের জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমার সময় মাওলানা সাদের বাংলাদেশে আসার পর। বিরোধীদের বাধার মুখে ইজতেমায় অংশ না নিয়েই মাওলানা সাদকে ওই সময় বাংলাদেশ ছাড়তে হয়েছিল।

গত ১ ডিসেম্বর ইজতেমা মাঠে দুই পক্ষের হতাহতের ঘটনাও ঘটে। টঙ্গীতে তুরাগ নদীর তীরে বিশ্বের মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় সম্মেলন ‘বিশ্ব ইজতেমা’র আয়োজনও করে আসছিল তাবলিগ জামাত। দুই পর্বে এটি হয়। কিন্তু এবার দু’পক্ষ চলতি মাসে আলাদাভাবে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করে। নির্বাচনের আগে সরকার দুই পক্ষের সঙ্গে সভা করে ইজতেমা স্থগিত করে। সরকারের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়েছিল, নির্বাচন শেষে দু্’পক্ষের সঙ্গে বসে অভিন্ন ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

Bootstrap Image Preview