Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমেনা বেগমের খোলা চিঠি

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারী ২০১৯, ০৪:৪৫ PM
আপডেট: ২১ জানুয়ারী ২০১৯, ০৪:৪৫ PM

bdmorning Image Preview


আসন্ন জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনে ফরিদপুর সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট শামসুল হক ভোলা মাষ্টারের সহধর্মিনী, ফরিদপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য, 'রত্নগর্ভা' সম্মাননায় ভূষিত আলহাজ্ব আমেনা বেগম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। কেন তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর একটি খোলা চিঠি লিখেছেন।

পাঠকদের জন্য তার চিঠিটি তুলে ধরা হলো-

ফরিদপুরের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ছিল বিএনপি-জামাত তথা আওয়ামী লীগ বিরোধীদের ভোট ব্যাংক। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে এ অঞ্চলের ৪টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা খুবই নগণ্য সংখ্যক ভোট পায়। ১৯৭৩-এর সাধারণ নির্বাচনে এ অবস্থার কিছুটা পরির্বতন ঘটলেও ৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন নির্বাচনে চরাঞ্চলের অনেক কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ভোটের সংখ্যা নেমে আসে বিশ-কুড়িরও নিচে। চরাঞ্চলে আওয়ামী রাজনীতির এ দৈন্যদশা থেকে মুক্তির জন্য অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়েছেন, এমনকি শরীরের রক্ত ঝরিয়েছেন যিনি তিনি আমার স্বামী এডভোকেট মোঃ শামসুল হক ভোলা মাস্টার। তিনি মানষের দুঃখ-দুর্দশা ও যেকোন দুর্যোগে পাশে দাঁড়িয়েছেন।

১৯৮৮’র প্রলয়ঙ্করী বন্যার সময় তিনি সমগ্র চরাঞ্চলের বন্যা-দুর্গতদের মাঝে ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রচুর ত্রাণ বিতরণ করেছেন। আমার স্বামীর ব্যাপক গণযোগাযোগ ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে চরাঞ্চলে আওয়ামী রাজনীতির যতই উন্নতি হতে থাকে ততই বাড়তে থাকে তাঁর ও তাঁর কর্মী-সমর্থকদের ওপর বিএনপির সাবেক মন্ত্রী কামাল-ইবনে-ইউসুফের অত্যাচারের মাত্রা।

১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলের পুরোটা সময়ই আমার স্বামীসহ পরিবারের অনেক সদস্য ও আমাদের অনুসারী আওয়ামী লীগের কর্মীদের হয় কারাগারে, নয়তো ফেরারি কাটাতে হয়েছে। ১৯৯১ সালে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে এক দিনে সর্বোচ্চ ১৩টি জিডি এন্ট্রির ঘটনা ঘটেছে যার প্রতিটিতে তৎকালীন বিএনপি সরকারের মন্ত্রী কামাল-ইবনে-ইউসুফের সুপারিশ ছিল মামলা হিসেবে নেয়ার জন্য। ফরিদপুর জেলার তৎকালীন সৎ ও সাহসী পুলিশ সুপার সাত্তার সাহেবের পেশাদারী ও বিচক্ষণ ভূমিকার কারণে নিরপেক্ষ অনুসন্ধানে সে-যাত্রা বেঁচে গেলেও কিছুদিন পরেই বিএনপি’র করা কালো-আইন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তাকে বেআইনিভাবে আটক করা হয়।

১৯৯৬-এর জাতীয় নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে গোলযোগের সময় বিএনপির গুন্ডাদের ইটের আঘাতে আমার স্বামীর মাথা ফেটে সারা শরীর রক্তে ভিজে যায়। সেবারে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খোন্দকার মোশাররফ হোসেন সাহেব তাকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স পাঠোলেও আমার স্বামী ভোটকেন্দ্র ছেড়ে হাসপাতালে যাননি।

২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলের পুরোটা সময়ই অসংখ্য মিথ্যা মামলায় জর্জরিত ছিল আমার পরিবার। এর মধ্যে ফরিদপুর শহরের কমলাপুরে দিনে-দুপুরে দুর্বৃত্তদের অন্তঃকোন্দলে সংঘটিত মনির হত্যার ঘটনায় আমার স্বামীসহ আমাদের পরিবারের ১০ জন সদস্য ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম হাসিবুল হক লাভলুর বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা উল্লেখযোগ্য।

দিনের পর দিন মাসের পর মাস বাড়ির বাইরে পালিয়ে থাকতে হতো আমার স্বামী, দেবর, ভাই, ভাতিজা এমনকি আমার বৃদ্ধ পিতাকে পর্যন্ত। সেই সময় আমার স্বামী কখনও বাড়িতে এসে খেতে বসলে আমাদের কাউকে বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে পাহারা দিতে হতো কখন আবার পুলিশ এসে পড়ে। জীবনের কতো দিন যে আমার স্বামীকে সামনের খাবার ফেলে বাড়ি ছাড়তে হয়েছে তা হিসাব করে বলতে পারব না। আমার মরহুম বৃদ্ধ পিতাকে খাবার খাইয়ে আদালতে পাঠিয়েছি মামলায় হাজিরা দেয়ার জন্য। আমার দুই ছেলেকে সাজিয়ে যখন মিথ্যা মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাওয়ার জন্য পাঠিয়েছি তখন ছোট ছেলে বর্তমানে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টর আইনজীবী মু. আমিরুল হক তুহিন মাত্র ক্লাস এইটে পড়ে। দুই জনই ফরিদপুর জিলা স্কুলের ছাত্র।

আমার বড় ছেলে ড. আমিনুল হক শাহীন বরিশাল মেডিকেল কলেজে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছাত্রলীগ নেতা ছিল। এ কারণে ২০০১-এর নির্বাচনের পর বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে কলেজে ঢুকতে না পারায় তার একটি বছর নষ্ট হয়। বাকি সময় তার বরিশাল শহরে বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়।

দুর্দিনের সেই সময়গুলোতে আমি বোনের মতো, মায়ের মতো করে এলাকার আওয়ামী লীগের কর্মীদের আগলে রেখেছি। আমার এখনো মনে আছে আমার স্বামী তখন ফেরারি। আওয়ামী লীগের কর্মী হারুন সর্দারকে বিএনপির দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে শুনে আমি দৌঁড়ে গিয়ে ওঁকে টেম্পুতে নিয়ে ছুটে গিয়েছি হাসপাতালে। সেখানে তাকে ভর্তি করিয়ে আমি যখন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বিপুল ঘোষের বাড়ি যাই থানায় মামলা দেয়ার ব্যবস্থা করার জন্য। তখন খেয়াল করে দেখি আমার পায়ে কোন স্যান্ডেল বা জুতা নাই। আমি আসলে বাড়ি থেকে খালি পায়েই বেরিয়ে পরেছি।

আমি এলাকার স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে একাধিকবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলাম। ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে মেম্বার ছিলাম। স্বামী বা পরিবারের অন্যদের কথা বাদ দিলাম; নিজের জমি দান করেছি জননেত্রী শেখ হাসিনা’র কমিউনিটি ক্লিনিকে, জমি দান করেছি গোরস্থানে, মসজিদ প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আরও অনেক দাতব্য উদ্দেশ্যে। গরীব মানুষের চিকিৎসার জন্য ফ্রি ফ্রাইডে ক্লিনিক চালিয়েছি ফরিদপুর শহরে আমাদের বাসস্থান ‘মাস্টার বাড়িতে'। ফরিদপুর শহরের হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে আমার ছিল নিত্য বিচরণ। এলাকার গরিব-দুঃখী মানুষের রোগে শোকে সহায়তা করতে। থানা-পুলিশ, জজ কোর্ট, হাইকোর্ট সবই করতে হয়েছে এলাকার আওয়ামী লীগ কর্মীদের আইনগত প্রয়োজনে। জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের খুব কম কেন্দ্রীয় নেতাই আছে দুর্দিনে যার শরণাপন্ন হইনি।

আদর্শ প্রতিষ্ঠা সহজ নয়, তার জন্য আগে আদর্শকে বুকে ধারণ করতে হয়, নিজে দীক্ষিত হতে হয়। কে না জানে আমার স্বামীকে কতোবার কামাল-ইবনে-ইউসুফের গুন্ডারা হত্যার চেষ্টা করেছে? তবু স্বামী-সন্তানদের পিছু টানিনি। সামনে এগিয়ে দিয়েছি। কারণ আমিও যে বঙ্গবন্ধুকে, বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের মহান আদর্শকে ভালোবাসি। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে নিজের, নিজের পরিবারের শ্রেষ্ঠ সময়কে অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছি। দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রতি অবিচল আস্থাশীল থেকে, জীবনের অনেক সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে, জীবন বাজি রেখে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগকে ফরিদপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত করতে ভূমিকা রেখেছি। অসংখ্য মনোনয়ন প্রত্যাশীর ভিতর থেকে কারা মনোনয়ন পাবেন তা নেত্রীই ভালো বলতে পারেন।

Bootstrap Image Preview