একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইশতেহারে করা অঙ্গীকারগুলো অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মানুষের ভোটের মর্যাদা রক্ষা করে তাদের জীবনমান উন্নত করার জন্য প্রয়োজনে আমিও আমার বুকের রক্ত দিতে প্রস্তুত। আমি সেই ওয়াদাই আজকে করে যেতে চাই।’
‘আমি এইটুকু বলবো, দেশের মানুষ যে বিশ্বাস রেখেছে, তার মর্যাদা আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবো।’
শনিবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্বাচন পরবর্তী আওয়ামী লীগের ‘বিজয় সমাবেশে’ এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় উপস্থিত লাখো জনতাকে সামনে রেখে সব মানুষের জীবনমান উন্নত করার ওয়াদাও করেন তিনি।
লাখো মানুষের বর্ণিল এ মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে, সেই ভোটের সম্মান আমি রক্ষা করবো।’
শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকের জন্য আমরা কাজ করবো, প্রত্যেকের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করবো। প্রত্যেকের জীবনমান উন্নত করবো। সেখানে কোন দল বা মত দেখা হবে না।
তিনি বলেন, প্রতিটি নাগরিক আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যারা ভোট দিয়েছে বা যারা ভোট দেননি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলবে, আমরা সবার তরে, সবার জন্য কাজ করবো।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা দিয়েছে সেই ইশতেহারের পক্ষে জনগণ রায় দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভোট দিয়েছে, সেই ভোটের সম্মান যাতে থাকে সেই বিষয়টা আমরা অবশ্যই সব সময় মাথায় রেখে সার্বিকভাবে সুষম উন্নয়ন করে যাবো দেশের জনগণের স্বার্থে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যে অঙ্গীকার করেছি, সেই অঙ্গীকার আমরা অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করবো।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমার পিতা এই দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে গিয়ে জীবন দিয়ে গেছেন, জীবন দিয়ে গেছেন আমার মা, আমার ভাইয়েরা। দেশের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন বহু মানুষ।’
অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচনকে অর্থবহ করায় সব রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের যত রাজনৈতিক দল, যারা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে সব রাজনৈতিক দলকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি- যে তারা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচনকে অর্থবহ করেছে।’
সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবার তরে, সবার জন্য। রাষ্ট্র ক্ষমতা পেয়ে যখন দায়িত্ব পেয়েছি জনগণের সেবা করার, দায়িত্ব পেয়েছি মানুষের জন্য কাজ করার তখন দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য আমাদের সরকার কাজ করে যাবে।
জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিজয় পাওয়া যত কঠিন, সেই বিজয় রক্ষা করে জনগণের সেবা করা সেটা আরো কঠিন কাজ। সেই কঠিন দায়িত্ব আমরা পেয়েছি, সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। এটা সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই।’
‘জনগণ উন্নয়নের পক্ষে, তারা শান্তি চায়, বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাক তারা তা চায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলার মাটিতে স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী তাদের কোন স্থান হবে না। দুর্নীতিবাজ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকাসক্তের কোন স্থান হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত দেশ আমাদের গড়তে হবে। মানুষের শান্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ যে রায় দিয়েছে সে রায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রায়, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রায়, মাদকের বিরুদ্ধে রায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে রায়। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মনে রাখতে হবে দেশের মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা আমাদের কর্তব্য’।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের ওয়াদা বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত করে গড়ে তুলবো। জনগণের এই রায় ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার রায়। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি, এই রায় ডিজিটাল বাংলাদেশে গড়ে তোলার পক্ষে রায়, এই রায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রায়।’
সমৃদ্ধ শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সুকান্তের ঐতিহাসিক দু’টি কথা আবারো বলে যেতে চাই- চলে যাব, তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি- নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’
সবাই মিলে দেশ গড়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন সবাই মিলে সেই প্রতিজ্ঞা করি যেকোন ত্যাগের বিনিময়ে এই বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলি।’
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে আওয়ামী লীগ। এ বিজয় উদযাপনে এ মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে অভিনন্দনপত্র তুলে দেন তিনি।
অভিনন্দন বার্তায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে গেয়েছেন জীবনের জয়গান। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে উড়িয়েছেন সৃষ্টির পতাকা। বাংলার বাতিঘর আপনাকে অভিবাদন।
কাদের বলেন, সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে বঙ্গবন্ধু মুজিবের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। আপনি জেগে থাকেন বলে বাংলাদেশ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নবাহক আপনি এই দেশমাতৃতাকে আপন সত্তায় ফিরিয়ে এনেছেন।
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৫৭টি আসনে জয় পায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করেছে দলটি। শেখ হাসিনা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
ভোটের ১৯ দিন পর আজ বিজয় উৎসব উদযাপন করছে আওয়ামী লীগ।
এদিন বেলা ১২টা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন শুরু হয়। কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী, সালমা ও জলের গান ব্যান্ড সঙ্গীত পরিবেশন করে।
এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়।
আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন সমাবেশের আলোচনা পর্ব সঞ্চালন করছেন।
এদিকে সভাস্থলে যারা এসেছেন তাদের অনেকের গায়েই রয়েছে লাল-সবুজ টি–শার্ট, মাথায় সবুজ, হলুদ আর লাল টুপি। সমাবেশস্থলে ঢোকার একাধিক ফটকে দেখা গেছে ব্যাপক ভিড়।