Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সদরপুরে পানি সংকট থাকলেও থেমে নেই বোরো চাষিরা

সাব্বির হাসান, সদরপুর (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারী ২০১৯, ০৩:২৬ PM
আপডেট: ১৯ জানুয়ারী ২০১৯, ০৩:২৬ PM

bdmorning Image Preview


ফরিদপুরের সদরপুরে বোরো ধানের চারা রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। উষ্ণ শীত উপেক্ষা করে এখন দিনরাত জমিতে সেচ দেয়া, জমিতে চাষ দেয়া, বীজতলা থেকে চারা তোলাসহ বোরো ধান চাষের নানা কাজে এখন ব্যস্ত রয়েছে তারা। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার ও কৃষকের উপর বিভিন্ন সময়ে নানান ধরনের উদ্যোগ ব্যবস্থাগ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন, সদরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চারা সংগ্রহ, হাল চাষ, মই সেচ, রোপন কাজে মাঠে থাকছেন চাষিরা। কৃষকেরা উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইরি হাইব্রিট উচ্চ ফলনশীল ধানকে আগামী বছর বাম্পার ফলন হবে বলে আশাবাদ করছেন তারা।

জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে চাষাবাদ করে বাম্পার ফলনের মধ্যদিয়ে তারা বিগত সময়ের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান। এদিকে কয়েকবছর ধরে ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অনেক কৃষক অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকছেন।

সদরপুর উপজেলার চরকুমারিয়া গ্রামের শেখ হাসমত (৫০), সিদ্দিক বেপারী (৪৫), ভাষানচর ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামের কুদ্দুস মিয়া (৪৮), আকোটেরচর ইউনিয়নের কাজী আনোয়ার (৩৬), চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ইউনুছ খানসহ (৪০) অনেক চাষি জানান, গত ২ বছর যাবত বোরো আবাদ করছেন। এছাড়াও অনেক কৃষক ধানের মূল্য না পাওয়ায় তারা ধানের বিপরীতে বাধ্য হয়ে ভুট্টা, শাক-সবজিসহ অন্যান্য ফসল চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

আরেক কৃষক জানান, ইতোমধ্যে সদরপুর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পানি সংকট থাকার কারণে ইরি জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে বেগ পেতে হচ্ছে। প্রাকৃতিক সহায় হলে আগামী বছর ধানের বাম্পার ফলন হবে বলেও তিনি আরও জানান।
 
কৃষকরা আরও জানিয়েছেন, গত বছর রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ ও শৈত্য প্রবাহের কারণে বীজতলা নষ্ট হওয়ায় তাদের চড়া দামে চারা কিনতে হয়েছিল। তবে বর্তমানে চারা থেকে শুরু করে ডিজেল ও সারের সঙ্কট না থাকায় বিভিন্ন মাঠে ইরি ধানের চারা রোপনের কাজ অনেকে ইতোমধ্যেই শেষ করে ফেলেছেন আবার শুরু করছেন।

সরজমিনে দেখা যায়, কৃষকরা বীজতলা থেকে বোরো ধানের চারা সংগ্রহ করে পুকুরের পানিতে ভিজিয়ে রাখছেন। সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চৌচির হয়ে থাকা বোরো আবাদের জমি পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওই জমির উপর লাঙ্গল, মাটি ছাড়ানো কৃষিযন্ত্র ট্রাক্টর দিয়ে ইরি রোপনে ক্ষেত প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রস্তুতকৃত ক্ষেতে বিভিন্ন প্রকার পোকামাকড়ের হাত থেকে রোপনকৃত চারা বাঁচাতে ব্যবহার করা হচ্ছে সার-কীটনাশক। এরপর প্রস্তুতকৃত জমিতে রোপন করা হচ্ছে বীজতলা থেকে সংগ্রহ করা চারা।      

সদরপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষক মোঃ আসাদ, রনজিৎ কুমার, আবুল কালাম, বিষাই মাতুব্বর, মোসলেম পোদ্দার জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর অনেক কৃষক তাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জমিতে বোরো ধানের চারা রোপন করেও বীজতলা থেকে চারা বিক্রয় করছেন। এ বছর ইরি ধান চাষে খরচ অন্যান্য বছরের চেয়ে কিছুটা কম বলে খানিকটা উজ্জীবিত কৃষকদের আশঙ্কা শুধু ধান-চালের ন্যায্য মূল্য নিয়ে। 

বোরো ধানের খরচ সর্ম্পকে সদরপুর ইউনিয়নের নয়রশি গ্রামের শেখ হাসমত আলী জানান, তিনি ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপন করবেন বলে সব প্রস্তুতিই প্রায় সম্পন্ন করেছেন। এরই মধ্যে প্রতি বিঘা জমিতে খরচ বাবদ ধরা হয়েছে ধানের চারা বাবদ ১ থেকে দেড় হাজার টাকা, জমি চাষ করা বাবদ ২হাজার টাকা, দিনমজুর বাবদ ২ থেকে ৩ হাজার টাকা, সার কেনা বাবদ ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। এছাড়া ৩মাস পানি সেচ বাবদ ২ থেকে ৩ হাজার টাকা, নিড়ানী ও কিটনাশকসহ নানা ওষুধ বাবদ আরও প্রায় ৪ হাজার টাকাসহ ধান কাটা-মাড়াইসহ আরও প্রয়োজন ৪হাজার টাকা। এ নিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে চাষাবাদ বাবদ সর্বমোট খরচ হবে ১৫ হাজার থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হওয়াসহ দাম ভালো পাওয়া গেলে এই খরচ আর পরিশ্রম দুই সার্থক হবে। 

সদরপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সদরপুর উপজেলায় এবার জমিতে ইরি ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে  ১হাজার ৫'শ হেক্টর প্রায়। 

সদরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা বিধান রায় বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনার পাশাপাশি তাদের উৎপাদিত ধান-চালের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।

তিনি আরও জানান, কৃষকেরা গত বছর ভালো ফলন পাওয়ায় ও ধানের দাম ভালো পাওয়ায় তারা চলতি মৌসুমে অনেকটা আগে ভাগেই ইরি চাষের পুরো প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। ইতিমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার সমাপ্ত ধানের চারা রোপনের শেষ হয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সহায়তার মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ সেবা অব্যাহত আছে।

অপরদিকে সাহায্য সহযোগিতার মধ্যে বীজ, সার, কীটনাশক ইত্যাদি সহযোগিতা করছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। কৃষকেরা যাতে নিরাপত্তায় ধান ঘরে তুলতে পারে কৃষকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এবারও লক্ষ্যমাত্রায় চাষিরা ফলন পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

Bootstrap Image Preview