একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চান লায়লা পারভীন সেঁজুতি। কারণ নারী আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হলে সাতক্ষীরাকে ঢেলে সাজানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করতে জেলার প্রতিটি অঞ্চলে ছুটে চলেছেন তিনি। পাশাপাশি জেলাবাসীর কাছে সমাদৃত পত্রিকা দৈনিক পত্রদূতের সম্পাদক হিসেবে লেখনীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পক্ষে জনমত তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তিনি।
লায়লা পারভীন সেঁজুতি তালার নগরঘাটায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এছাড়া জেলা স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদেরও সহ-সভাপতি তিনি।
এদিকে সেজুতির বাবা বীরমুক্তিযোদ্ধা স ম আলাউদ্দিন। এক নামেই সারাদেশে অনেকের কাছে পরিচিত। তিনি ১৯৭০ সালের পার্লামেন্টের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যও ছিলেন। রণাঙ্গনে সরাসরি অস্ত্র হাতে যে কয়েকজন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। সাতক্ষীরার তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের জেলা শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এছাড়াও তিনি সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও এফবিসিসিআই এর পরিচালক ছিলেন।
তা ছাড়াও আরো অনেক পরিচয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সাতক্ষীরার দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার সম্পাদক। ওই পত্রিকা অফিসেই কর্মরত অবস্থায় ১৯৯৬ সালের ১৯ জুন ঘাতকের গুলিতে প্রাণ হারান এই বীরমুক্তিযোদ্ধা। দেশে কোন পত্রিকার সম্পাদক হত্যাকান্ডের এটিই প্রথম ঘটনা। পুলিশের তদন্তে সাতক্ষীরার সবচেয়ে প্রভাবশালীদের নাম উঠে আসে এই হত্যা মামলার আসামি হিসেবে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চেলের বিভিন্নস্থানে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে উঠে। সেই থেকে লায়লা পারভীন সেঁজুতির সংগ্রামী জীবন শুরু। একদিকে বাবার হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি নিয়ে সংগ্রামী জনতার সাথে রাজপথে থাকা। অপরদিকে তার বাবার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেওয়া।
জানা গেছে, লায়লা পারভীন সেঁজুতি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০১৩ সালে নগরঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এবং ২০১৬ সালে জেলা মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সদস্য সচিব হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
আরো জানা গেছে, লায়লা পারভীন সেঁজুতি ২০১৩-১৪ সালে যুদ্ধাপারাধীদের বিচারের রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা প্রতিরোধে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী হিসেবে আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়ে জেলা স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সহ-সভাপতির দায়িত্ব, সাতক্ষীরা পাবলিক লাইব্রেরির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও দৈনিক পত্রদূতের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের জন্য তৃণমূলে কাজ করে মানুষের আস্থা অর্জনে সমর্থ হয়েছেন। তাই একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের লায়লা পারভীন সেঁজুতি বলেন, আমার বাবা স.ম আলাউদ্দিনের বৃহৎ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডই আমাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে রাজনীতিতে আসতে। বাবা সব সময় একটি জিনিস বোঝানোর চেষ্টা করতেন- একমাত্র রাজনীতির মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি মানুষকে সেবা দেওয়া সম্ভব। তিনি সাতক্ষীরার সামগ্রিক উন্নয়ন, নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, কৃষি ও শিল্প সম্প্রসারণে জন্য কাজ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করে তিনি দেখিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার ভালবাসা ও দর্শন। মানুষের অধিকারের কথা বলতে ১৯৯৫ সালের ২৩ জানুয়ারি দৈনিক পত্রদূত পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সাতক্ষীরাকে বাণিজ্য নগরীতে পরিণত করার লক্ষ্যে তিনি চেম্বার অব কমার্স, ভোমরা স্থল বন্দর প্রতিষ্ঠা করেছেন। সাতক্ষীরার মানুষের উন্নয়নে যে চিন্তা ভাবনা- তা তিনি নিজ কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়েই রেখে গেছেন।
সেঁজুতি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী। দলের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করছি।
সাতক্ষীরা থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে ডজনের অধিক প্রার্থীর মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা মনোনয়ন চাচ্ছেন তারা অবশ্যই যোগ্য। এতগুলো যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ একসাথে কাজ করলে আগামীতে সাতক্ষীরার নারী সমাজ মৌলবাদী অপশক্তিকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে পারবে।