ভাবুন তো, একটি বার্গার, ফ্রাইস এবং কোক কেনার জন্য সাধারণ মানুষদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়েছেন বিল গেটস। যিনি কি না এই মুহূর্তে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী। তার মোট সম্পদের আর্থিক মূল্য ৯ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যা ৭ লাখ ৯৯ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। বাংলাদেশের দুই বছরের মোট জাতীয় বাজেটের সমান প্রায়। তিনি চাইলে দুটো বাংলাদেশে কিনে ফেলতে পারবেন। হ্যা, অবাক হবার মতো ঘটনা হলেও এটিই সত্যি। বলছি তবে গল্পটা।
মানবেতিহাসের সবচেয়ে বড় দাতব্য প্রতিষ্ঠান বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনও তারই। সে হিসেবে তিনিই সবচেয়ে বড় দানবীরও বটে।
অথচ সেই তিনিই কিনা সামান্য একটি বার্গার, ফ্রাইস এবং কোক কেনার জন্য সাধারণ মানুষদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়েছেন!
আসলে সত্যিকার ধনী অর্থাৎ যারা সম্পদ ও মন উভয় দিকে থেকেই বড়লোক বা অভিজাত তাদের আচরণ এমন বিনয়মূলকই হয়। কারণ এরা মূলত জ্ঞান-বিজ্ঞান, পরিশ্রম, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের মধ্যদিয়েই শুধু বড়লোক বা অভিজাত হয়েছেন; অন্য কোনোভাবে নয়।
সত্যিকার বড়লোক বা অভিজাতরা কখনো সোনা দিয়ে মোড়ানো টয়লেট সিট বানিয়ে নিজের ‘বড়লোকি’ প্রদর্শণ করেন না। জনগণ তথা সরকারি সম্পদের অপব্যবহার করে ‘বড়লোকি’ দেখান না। সরকারের দেয়া গাড়ি, বাড়ি, কর্মচারি এবং ভিআইপি প্রটোকল নিয়ে ‘বড়লোকি’ দেখান না। এবং সুখি হওয়ার ভুয়া হাসি হাসেন না।
অথচ এমন সব ‘নিম্নরুচি’র ‘বড়লোকিই’ বেশি প্রদর্শণ করতে দেখা যায় তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশে। বিশেষ করে যেসব দেশ এখনো মধ্যযুগীয় ধরনের রাজতন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্র থেকে মুক্তি পায়নি। যেসব দেশে এখনো সত্যিকার গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
বিল গেটসদের মতো বড়লোকরা নিজেদের সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেন। অন্যদিকে, তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই এখনো বড়লোকদের একটা বিশাল অংশ শুধু তাদের নিজেদের জনগণকে অন্যায্যভাবে শোষণ-নিপীড়ন করেই আরো ‘বড়লোক’ হয়ে ওঠেন; জ্ঞান-বিজ্ঞান, পরিশ্রম, দক্ষতা, পেশাদারিত্বের মধ্য দিয়ে নয়।