ভেনিজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতাকে দেশটির ‘বৈধ প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার কথা বিবেচনা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে চাপের মুখে ফেলতেই ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির প্রেসিডেন্ট জোয়ান গুয়েদোকে দেশটির ‘প্রকৃত নেতা’র মর্যাদা দিতে চান ট্রাম্প।
বিরোধীদের প্রত্যাখ্যান, আন্তর্জাতিক সমালোচনা সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে ১০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন মাদুরো। কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলো স্বীকৃতি দিলেও তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে এখনও স্বীকৃতি দেয়নি বিরোধী দল, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের আরও কয়েকটি দেশ।
ট্রাম্প প্রশাসনের অন্তত তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার এ খবর জানিয়েছে সিএনএন।
২০১৮ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচন বয়কট করেছিল বিরোধী দল। অভিযোগ উঠেছিল ভয়াবহ কারচুপির। আন্তর্জাতিক মহল থেকে একের পর এক সমালোচনা ছুটে এসেছে।
সর্বশেষ গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রসহ আমেরিকার ১৩টি দেশের নেতারা মাদুরোর প্রেসিডেন্সিকে স্বীকৃতি দেবেন না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন। তবে কারাকাসে অনুষ্ঠিত শপথ অনুষ্ঠান নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট ডেনিয়েল ওর্তেগা ও বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাদের এ সমর্থন মাদুরোকে কতটা গ্রহণযোগ্য করবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
মাদুরোর এ শপথ অনুষ্ঠান ভেনিজুয়েলার সংবিধান অনুসরণ করে হয়নি। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্টকে জাতীয় আইনসভায় শপথ নিতে হবে। কিন্তু অনুষ্ঠানটি হয়েছে সুপ্রিমকোর্টে। কারণ আইনসভার নিয়ন্ত্রক বিরোধী দল মাদুরোর নির্বাচিত হওয়াকে ‘ভুয়া’ ও ‘বেআইনি’ বলে বর্ণনা করে আসছে। ‘স্বাধীন’ ভেনিজুয়েলার আদালত এখনও মাদুরোর অনুগত।
এ বিরোধিতা এতটাই যে মাদুরোকে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নিতে হয়েছে রীতিমতো নিরাপত্তাবলয়ে ঢুকে। বিবিসি জানাচ্ছে, এত সতর্কতার পরও মাদুরোবিরোধীরা পথে ছিলেন।
এদিকে তেলসমৃদ্ধ এ দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি অকল্পনীয় হারে বেড়েছে। বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা প্রায় ২০ লাখ ভাগ। এ কারণে সর্বনিু বেতন শতকরা ৩০০ ভাগ বৃদ্ধি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। বৃদ্ধির পর সর্বনিু বেতন দাঁড়িয়েছে মাসে ১৮ হাজার বলিভারস।
ডলারের হিসেবে যা ৫.২০ ডলারের সমান। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। অনেক দিন ধরেই লাতিন আমেরিকার এ দেশটিতে অর্থনীতির প্রচণ্ড খারাপ অবস্থা। অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে, এক রোল টয়লেট পেপারের দাম পৌঁছেছে ২৬ লাখ বলিভারে।
আলু থেকে গাড়ি সবই অগ্নিমূল্য। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। ভেনিজুয়েলার অর্থনীতির এ পড়ন্ত অবস্থা এতই খারাপ যে, সন্তান প্রসবের জন্য যেতে হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশে। মুদ্রাস্ফীতি এরকম পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, দুই কেজি চারশ’ গ্রাম ওজনের একটি মুরগি কিনতে গুনতে হয় সেখানকার মুদ্রায় ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
ভেনিজুয়েলার মুদ্রাকে বলা হয় বলিভার। মাত্র দুই সপ্তাহ আগেও ভেনিজুয়েলা ভুগছিল এই হাইপার ইনফ্লেশনে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গেল ২০ আগস্ট থেকে নোটের শেষ পাঁচটি শূন্য বাদ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো।