Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বকর ভাই, আপনি সাংবাদিক থেকে সম্পাদক

আসাদুজ্জামান সাজু:
প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারী ২০১৯, ০৭:৩০ PM
আপডেট: ১৬ জানুয়ারী ২০১৯, ০৭:৩০ PM

bdmorning Image Preview


মানবকণ্ঠ থেকে ফোন আসতো। বলা হতো নিউজরুম থেকে কথা বলবেন। ফোনের ওপার থেকে বলতো কি সাজু, কেমন আছো? কি খবর তোমার? তুমি এত বড় নিউজ দিয়েছো, তোমার নিউজ ছাপার এত জায়গা কি পত্রিকায় আছে? এক কথা কত দিন বলতে হবে? নিউজটা ছোট করে দাও। ছবিগুলোতে ক্যাপশন নাই কেন? এগুলো ছবি চলবে না, কোনো কথা শুনবো না ভালো ছবি দাও। ওকে ভালো থেকো। এভাবেই প্রায় সময় কথা বলতেন আমার প্রিয় অভিভাবক দৈনিক মানবকণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবু বকর চৌধুরী।

কয়েক দিন আগে আমাকে ফোন করে বলেছেন, সাজু ঢাকা কবে আসবা? এবার আসলে কমলা ও মালটার চারা নিয়ে আসবা। তিনি পদে পত্রিকার একজন সম্পাদক হলোও সারা দিন পড়ে থাকতেন নিউজরুমে। সকাল সকাল অফিসে ছুটতেন, গভীর রাত পর্যন্ত নিউজরুমে মগ্ন থাকতেন। সংবাদের শিরোনাম, ছবির ক্যাপশন আর নিউজ রুমের মানুষগুলোই ছিল তার আপনজন। নিজের জন্য কোনো সময়ই ছিল না কাজ পাগল এই মানুষটির।

গত প্রায় আট বছরে একদিনও ছুটি নেননি তিনি। প্রতিদিন অফিসে না আসলে যেন তার ঘুমই আসত না। সম্পাদক হয়েও সবার সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশেছেন, হৈচৈ করেছেন। পরম মমতায়-ভালোবাসায় নিউজ রুমের সবাইকে আগলে রেখেছেন। তিনি সাংবাদিক থেকে সম্পাদক হয়েছেন।

আমাদের দেশের অনেকেই রাতারাতি পত্রিকা বের করে সম্পাদক হয়েছেন। একটি আলোচনা সভার নিউজ লেখতে না পারলেও ভাব দেখে মনে হয় তিনি বাঘা সস্পাদক। ওই সম্পাদকের দেখা পওয়া মফস্বল সাংবাদিকদের জন্য অনেক কষ্টকর। আবার তাকে স্যার বলে সম্মাধন করতে তো হবেই। স্যার না বললে প্রতিনিধিত্ব নেই।

কিন্তু আমাদের সম্পাদক আবু বকর চৌধুরী ছিলেন ভিন্ন একজন। নিউজরুমের সাথেই তার বসার চেয়ার টেবিল। তিনি সারা দিনে নিউজ নিয়ে বার্তা বিভাগ, মফস্বল বিভাগ ছুটাছুটি করতেন। সবাই বকর ভাই, বকর ভাই বলে ডাকতাম।

আমরা মফস্বল সাংবাদিকরা অফিসে গেলেই সবার আগে বকর ভাই বলতেন, কি খবর? আসতে কত ঘণ্টা লাগলো। সেই মানুষটিকে মানবকণ্ঠ নিউজরুম মিস করছে। আর কোনদিন বকর ভাই বলবে না সাজু তোমার আসতে কত ঘণ্টা লাগলো। আর বলবে সাজু এবার ঢাকা আসলে কমলা চারা নিয়ে আসবা।

আবু বকর চৌধুরী গত মঙ্গলবার ভোরে তার ধানমন্ডির বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এরপর নিভে যায় মানবকণ্ঠের বাতিঘরের জীবন প্রদীপ। দ্রুত ইবনে সিনা হাসপাতালে নেয়া হলেও চিকিৎসকদের আওতার বাইরে চলে যান তিনি। চিকিৎসকরা ঘোষণা করেন। তিনি আর নেই।

Bootstrap Image Preview