Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আশাশুনিতে অনুমোদনবিহীন বই পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্তের অভিযোগ

রাহাত রাজা, সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারী ২০১৯, ০৫:৪৭ PM
আপডেট: ১৫ জানুয়ারী ২০১৯, ০৫:৪৭ PM

bdmorning Image Preview


জেলা প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে অনুমোদনবিহীন পাঞ্জেরী প্রকাশনীর গাইড বই এবং অক্ষরপত্র প্রকাশনীর গ্রামার ও ব্যাকরণ বই আবারও পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত করার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা শিক্ষক সমিতির বিরুদ্ধে। আর এর বিনিময়ে বই প্রকাশনীর নিকট থেকে তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। 

তবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলছেন, এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চিঠি দিয়ে আগেও সতর্ক করা হয়েছে এবং আবারো সতর্ক করা হবে। 

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের মে মাসের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেলা প্রশাসনের নির্দেশ জেলা শিক্ষা অফিসের জেশিঅ/ ২০১৮/ ৬৪০৪ নং স্মারক মোতাবেক মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস বিকৃত করে রচিত নিম্নমানের গাইড বই (বিশেষ করে পাঞ্জেরী, অক্ষরপত্র, স্কয়ার, অক্সফোর্ড প্রকাশনীর) বই বাজারজাত না করে শিক্ষা অফিসে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে আশাশুনি উপজেলা শিক্ষক সমিতি আবারও এই বই বাজারজাত করছেন।

জানা যায়, গত ১১ ডিসেম্বর আশাশুনির গাবতলা হাইস্কুলে উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অধিকাংশ সদস্যদের মতামত উপেক্ষা করে উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির বই পাঠ্য করতে পাঞ্জেরী পাবলিকেশনের সাথে চুক্তি বদ্ধ হন। এই পাবলিকেশনেরই বই হলো অক্ষরপত্র। পাঞ্জেরী পাবলিকেশনের কাভার পৃষ্টা পাল্টানো অক্ষরপত্র বই ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির বই বাংলা গ্রামার নান্দনিক বাংলা ব্যাকরণ, যার লেখক মমিনুল মোমেন, আমিরুল ইসলাম এবং ইংরেজি গ্রামার লেখক জামাল হোসেন ও স্বপন বড়ুয়া।

বইটি বাজারজাত করছেন, কালিগঞ্জ উপজেলার শেখ আনজারুল ইসলামের মালিকানাধীন মর্ডাণ বুক ডিপো। তবে, তিনি জানান, শুধু তার প্রতিষ্ঠান নয়, সাতক্ষীরা শহরের আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও এই বই বাজারজাত করছেন।

এদিকে, জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় থেকে গত ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে জেশিঅ/সাত/২০১৮/৬৮১৯ স্বারক মোতাবেক এনসিটিবি কর্তৃক অনুমোদনবিহীন নোট/গাইড বই মজুদ, বিক্রি বা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত না করতে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে এই সংক্রান্ত বই যাতে শিক্ষকরা সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত না করতে পারে সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়। কিন্তু জেলা প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে অনুমোদনবিহীন পাঞ্জেরী প্রকাশনীর বই জোরপূর্বক পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত করছে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় শিক্ষক সমিতি।

এর বিনিময়ে তারা লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর এই বই পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত না করতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা দাবি  জানিয়েছেন এবং জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অনুমোদনবিহীন এসব বই যারা পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত করেছেন তাদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সচেতন অভিভাবক মহল। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশাশুনি উপজেলার এক বইয়ের দোকানদার জানান, আশাশুনি উপজেলার গাবতলা, স্বরাপপুর, বড়দল, গোয়ালডাঙ্গা, খাজরা, কামালকাটি, পুইজালা, শ্রীউলা, গুনাকরকাটি, কাদাকাটি ও কুন্দড়িয়াসহ উপজেলা অধিকাংশ হাইস্কুলে অনুমোদনহীন পাঞ্জেরী গাইড এবং অক্ষরপত্র প্রকাশনীর গ্রামার ও ব্যাকরণ বই তাদের পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

আশাশুনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আশাশুনি উপজেলার গাবতলা, স্বরাপপুর ও কুন্দড়িয়াসহ কয়েকটি হাইস্কুলের পাঠ্যসূচীতে পাঞ্জেরী প্রকাশনীর গাইড বই এবং অক্ষরপত্র প্রকাশনীর গ্রামার ও ব্যাকরণ বইয়ের এর নামসহ সিলোবাস শিক্ষার্থীদের মাঝে ছাড়া হয়েছিল। পরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। 

আশাশুনি উপজেলা শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি অরুন কুমার গাইন এ বিষয়ে তাদের সভাপতি ও সাধারণ  সম্পাদকের কাছে জানার জন্য অনুরোধ জানান।

আশাশুনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, আপাতত পাঠ্যসূচী ছাড়া বন্ধ করা হয়েছে।

আশাশুনি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বাকী বিল্লাহ জানান, আমি ছুটিতে আছি। এসেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। 

সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস.এম আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এ ধরনের বই যদি কোন প্রতিষ্ঠান তাদের পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরো জানান, এ ব্যাপারে বুধবার (১৬ জানুয়ারি) আবারও সতর্কমূলক আরেকটি নোটিশ ছাড়া হবে।  

Bootstrap Image Preview