প্রাণীদের মধ্যে কুকুর খুবই প্রভুভক্ত। কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করে না। এমনকি বিপদের মুহূর্তে কখনও ছেড়ে চলে যায় না। প্রভুর জন্য এরা যেমন প্রাণ দিতে পারে তেমন কারও প্রাণ নিতেও পারে। অতীতে এমন দৃষ্টান্ত একেবারে কম নেই। তাদের প্রভুভক্তি অনেক সময় গল্পকেও হার মানায়। তেমনি এক ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ অধিদফতর এলাকায়।
তবে এই ঘটনা শুধুই বন্ধুত্বের। এখানে প্রভুর থেকে পাওয়ার কিছুই নেই তাদের। কারণ প্রভু বড়ই গরিব, শুধুই ভবঘুরে। তার কাছে বন্ধুত্ব ছাড়া চদুস্পদ প্রাণীদের দেওয়ার মতো খাবারও নেই। কিন্তু তাতে কী? বন্ধুত্ব তো আছে, কুকুরগুলো তাতেই খুশি। প্রিয় বন্ধুর জন্য তারা সবই করতে পারে।
শেরপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ অধিদফতরের ভেটেরিনারী সার্জন ডা. রায়হান আলী জানান, প্রায় ১৫ দিন আগে তার অফিস এলাকায় পিয়াস নামে এক যুবকের আবির্ভাব ঘটে। পিয়াস নাম ছাড়া কোন কিছুই বলতে পারে না। তার সাথে রয়েছে বেওয়ারিশ ৩০টি কুকুর। কুকুরগুলোর চলাফেরায় মনে হয় পিয়াস ওদের প্রভু। এসব কুকুরকে সাধ্যমত সেবাযত্ন করে পিয়াস।
মানবিক দিক বিবেচনা করে তার দফতরের একটি পরিত্যক্ত ঘরে পিয়াস ও কুকুরগুলোর থাকার ব্যবস্থা করে দেন তিনি। তাদের শীত নিবারনের জন্য গরম কাপড়ের ব্যবস্থাও করেন। এ ছাড়া প্রতিদিন পিয়াস ও কুকুরের খাবারের জন্য সামান্য পরিমান টাকা দেন। পিয়াসও সারাদিন বাইরে ঘুরে চেয়ে চিন্তে টাকা সংগ্রহ করে। সেই টাকায় খাবার কিনে ঘরে ফিরে নিজে খায় এবং কুকুরগুলোকেও খাওয়ায়।
সরেজমিন দেখা যায়, মাটিতে বাবু মেরে বসে আছে পিয়াস। আর কুকুরগুলো তার চারপাশে। পিয়াস কুকুরের মুখে ঠোঁট লাগিয়ে আদর করছে, মাঝে মধ্যে কুকুরগুলোর সঙ্গে হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠছে। এভাবেই কুকুরগুলোর সঙ্গে চলছে পিয়াসের খুনসুটি।
পিয়াস ঘরে থাকলে ওরাও ঘরে থাকে। বাইরে বের হলে ওরাও পিয়াসের পিছু চলে। তবে খাবার সংগ্রহের প্রয়োজনে অনেক সময় ওদের ঘরে আটকে রেখে বাইরে বের হয় পিয়াস।
এ বিষয়ে কলামিষ্ট রেজাউল হক মিন্টু বলেন, পোষা প্রাণীর প্রতি মানুষের ভালোবাসা নতুন নয়। আদিম যুগ থেকে মানুষ যখন বন্যপশুকে পোষ মানিয়েছে, তখন থেকেই এ সম্পর্কের শুরু। তবে মানুষের মতো কৌশলী নয় বলেই ভালোবাসার প্রতিদানে পোষা প্রাণীর নিবেদন বা আত্মত্যাগের কাহিনিগুলো হৃদয় ছুঁয়ে যায়।