Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

লোকালয়ে আসা বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে অবমুক্ত করেন তিনি

হৃদয় দেবনাথ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:৩১ PM
আপডেট: ১২ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:৩১ PM

bdmorning Image Preview


ব্যক্তি উদ্যোগে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গড়ে উঠেছে বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন। আহত ও অসুস্থ বন্য প্রাণীদের উদ্ধার করে চিকিৎসা ও সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয় এই ফাউন্ডেশনে।

সুস্থ হওয়ার পর তাদের আবার ছেড়ে দেয়া হয় বনে। প্রায় ২ শতাধিক প্রাণীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করছে সেবা ফাউন্ডেশন।বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের প্রবেশদ্বার পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই শুনতে পাবেন পশুপাখির কিচিরমিচির শব্দ। তাদের দেখানো পথে এগিয়ে গেলে একের পর এক দেখতে পাবেন বিরল প্রজাতির সোনালি হনুমান, সজারু, হিংস্র মেছো বিড়াল, চারপাশে আতপ চালে গন্ধ ছড়ানো গন্ধগোকুল, পাহাড়ি বক, নিশি বক, সোনালি কচ্ছপ ও অসংখ্য বিরল প্রজাতির পাখি।

এ ছাড়া আছে বাংলা লজ্জাবতী বানর, উড়ন্ত কাঠবিড়ালি, অজগর সাপ, হনুমান, মায়া হরিণসহ প্রায় দেড়শ প্রজাতির জীবজন্তু। রয়েছে কালো-হলুদ ডোরাকাটা ত্রিভুজাকৃতির বিলুপ্তপ্রায় শাকিনী সাপ (শংখিনী)। আছে হিমালয়ান সিভিটকেট, মথুরা, সোনালি কচুয়া, বন্য খরগোশ, বন্য রাজহাঁস, লেঞ্জা, বালিহাঁস, প্যারিহাঁস, কোয়েল, লাভবার্ড, চিত্রা হরিণ, বনরুই, বিভিন্ন রঙের খরগোশ, সোনালি খাটাশ, গুইসাপ, ধনেশ, হিমালয়ান টিয়া, ময়না, কাসে-চড়া, কালিম, বাজিরিক, শঙ্খচিল, তোতা, সবুজ ঘুঘু, হরিয়াল প্রভৃতি।

বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার সীতেশ বাবু স্থানীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে তিন দশক ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রায়ই তিনি বিভিন্ন লোকালয়ে মানুষের হাতে ধরা পড়া বন্যপ্রাণীদের উদ্ধার করে সেবা-শশ্রুসা দিয়ে আবার জঙ্গলে ছেড়ে দেন।

এ পর্যন্ত তার এভাবে শশ্রুসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া প্রাণিকুলের মধ্যে আছে অজগর, বিলুপ্তপ্রায় শকুন, বিলুপ্তপ্রায় ফ্যায়র্স লাঙ্গুরের বাচ্চা, বিভিন্ন রকমের অতিথি পাখি, বনবিড়াল, লজ্জাবতী বানর, বাদামি বানর, ধনেশ পাখি, বিরল প্রজাতির হিমালয়ান পাম সিবেট প্রভৃতি।

১৯৬২ সালের দিকে সিশ রঞ্জন নামে এক ব্যক্তি শখের বশে মৌলভীবাজারের নোয়াগাঁও গ্রামে গড়ে তুলেন বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন নামে একটি মিনি চিড়িয়াখানা। মুক্তিযুদ্ধের সময় সেই চিড়িয়াখানা ধ্বংস করে দেয় পাকিস্তান বাহিনী। স্বাধীনতার পরপরই সিশ রঞ্জনের ছেলে সীতেশ রঞ্জন শ্রীমঙ্গলে তার বাড়ির আঙ্গিনায় নতুন করে চালু করেন চিড়িয়াখানাটি।

দিনে দিনে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে ২০০৮ সালে শ্রীমঙ্গলের রুপশপুর এলাকায় সাড়ে ৬ বিঘা জমির ওপর সরিয়ে নেয়া হয় চিড়িয়াখানাটি। এখানে এখন মুখপোড়া ও চশমা পড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানর, বিলুপ্ত প্রজাতির শকুন, সাপ, পাখিসহ দুই শতাধিক দুর্লভ প্রজাতির বন্যপ্রাণী চিকিৎসা সেবা পেয়ে সুস্থভাবে বেড়ে উঠছে। আর এসব প্রাণী দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।

জঙ্গলে আবাসন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রাণীর সংখ্যা কমে গেছে বলে জানান বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক। আর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মিহির কুমার দো আহ্বান জানালেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সবাইকে এগিয়ে আসার।

গত কয়েক মাসে অর্ধশতাধিক দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী জাতীয় উদ্যান লাউয়াছড়াসহ বিভিন্ন স্থানে অবমুক্ত করেছে বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন।

Bootstrap Image Preview