Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চালের দাম বাড়েনি দাবি মিল মালিকদের

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারী ২০১৯, ০৯:৫২ AM
আপডেট: ১১ জানুয়ারী ২০১৯, ০৯:৫২ AM

bdmorning Image Preview


চালকল মালিক, চাল ব্যবসায়ী এবং সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, বাজারে ধান ও চালের দাম বাড়েনি। যেটুকু দাম বেড়েছে তা স্বাভাবিক। মাঝে সাময়িক দাম বৃদ্ধি ছিল ভোটের সময় সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে।

নির্বাচনের পরপরই চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষাপটে নতুন সরকারের খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বৃহস্পতিবার খাদ্য ভবনে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেন।

চালকল মালিক সমিতি ও চাল ব্যবসায়ী সমিতিকে নিয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সারাদেশ থেকে আসা চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা চালের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।

বাংলাদেশ অটোমেইল অ্যান্ড হাস্কিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, ধানের দামও বাড়েনি, চালের দামও বাড়েনি।

তিনি বলেন, 'ভোটের সময় একটু গ্যাপ ছিল। সবাই ভোটের মাঠে ছিল। সেই সময় হয়ত ধানের আমদানি কমেছে, চাল উৎপাদন কমেছে। এটা এক দিনের বা দুই দিনের হতে পারে।'

খাদ্যমন্ত্রী মতবিনিময় সভায় বলেছেন, চাল সংগ্রহের দাম নির্ধারিত সময়ের পর নির্ধারণ করা হলে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবেন না। নভেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে কৃষকের আমন সংগ্রহ শেষ হয়ে যায়। অথচ সরকার আমন ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে ১ ডিসেম্বর থেকে। এ কারণেই প্রান্তিক চাষীরা ন্যায্য দাম পায় না। মিলাররাও যদি আগে বরাদ্দ পান তাহলে তারা বাজারে নামলে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবেন। নির্বাচনী প্রচারাভিযানে যাওয়ার পরও কৃষকরা বলেছেন, তারা ধানের দাম পায়নি। উত্তরাঞ্চলে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৭ টাকা ৮০ পয়সা দরে। ঢাকায় এসে সেই চাল যখন ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় তা দুঃখজনক।

তিনি বলেছেন, আমি উত্তরাঞ্চলের এবং বাণিজ্যমন্ত্রীও উত্তরাঞ্চলের। দুই মন্ত্রীই আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। চালের দাম কমিয়ে আমাদের সম্মান রাখুন। এ সময় মিলাররা চিৎকার করে এবং দুই হাত তুলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার ঘোষণা দেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, শপথের পর দফতরে যাওয়ার আগেই চালের দাম বৃদ্ধির খবরে খাদ্যমন্ত্রী চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এ কারণেই আপনাদের ডেকেছেন। খাদ্য নিয়ে যেন ভোগান্তি না হয়। ব্যবসায়ীরা সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা করতে পারবেন। কারণ ব্যবসায়ীরা হচ্ছেন অর্থনীতির লাইফ লাইন।

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, খাদ্যমন্ত্রী একজন কৃষক। তার একটি চালকলও রয়েছে। সুতরাং তিনি বিষয়গুলো বুঝবেন। কৃষকরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। আর মিলাররাও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নওগাঁ জেলার ৪৭ রাইস মিল ঋণখেলাপি। আমরা রক্তচোষা নই।

চালকল মালিক সমিতির উপদেষ্টা শেখ আবদুল হামিদ বাবু বলেন, চালের দাম দু-চার টাকা বৃদ্ধির কারণে হৈচৈ হচ্ছে। যা ঠিক নয়। খাদ্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। আমরা সাধারণ মানুষের জন্যই চাল প্রক্রিয়া করে থাকি। সরকার মোট চাহিদার মাত্র চার শতাংশ চাল কেনে। অবশিষ্ট ৯৬ শতাংশ চাল কেনে সাধারণ মানুষ। অযথা চালের দাম বাড়িয়ে আমরা এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে বিপদে ফেলতে পারি না। তবে সরকারকে সময়মতো ধান-চাল কিনতে হবে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সচেতন থাকতে হবে। বাজারে মোটা চালের দাম বাড়েনি। তবে মিনিকেটের মতো চিকন চালের দাম বাড়তে পারে।

নওগাঁ আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরদ বরণ সাহা বলেন, চালের বাজার যেটুকু চড়েছে সেটা নির্বাচনের জন্য। চালকল মালিকরা কৃষকের ওপর নির্ভরশীল। কৃষকের সঙ্গে তাদের যে দূরত্ব তার সুযোগ নেয় অসৎ ব্যবসায়ীরা। ধানের দাম কমে গেলে সাত কোটি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর দাম বাড়লে চিৎকার করে অবশিষ্টরা। চালের বাজারে যে সংকট তৈরি হয় তা অনেক সময় তথ্য বিভ্রাটের কারণে হয়ে থাকে। ২০১৭ সালে হাওরে বন্যায় ৩০ লাখ টন চাল নষ্ট হয়েছিল। অথচ সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, মাত্র ১০ লাখ টন চাল নষ্ট হয়েছে। এরপর যে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছিল তা সময়মতো প্রত্যাহার করা হয়নি।

রাজধানীর বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজামউদ্দিন বলেন, নির্বাচনের আগে লোকসান দিয়ে চাল বিক্রি হচ্ছিল। এখন যেটুকু বেড়েছে তা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। বরং কৃষক লাভবান হচ্ছে। রশিদ, লায়েক আলী, বেলাল এসব মিল মালিকদের নাম উল্লেখ করে নিজামউদ্দিন বলেন, বড় বড় চালকল মালিকরা যদি সরকারকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে চালের দাম বাড়াবেন না তাহলে সেটা বাস্তবায়ন করা তাদের পক্ষে সম্ভব।

Bootstrap Image Preview