মৌলভীবাজার জেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে দুর্লভ প্রজাতির দেশের একমাত্র 'টিক ওক' গাছটি হুমকির মুখে রয়েছে। ইতোমধ্যে বিশাল আকৃতির এ গাছটি হেলে পড়েছে। যেকোন মুহুর্তে গাছটি উপড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা।
জানা যায়, আফ্রিকান টিক ওক (African Teakoak) প্রজাতির বৃক্ষ বর্তমানে খোদ আফ্রিকাতেই হারিয়ে যেতে বসেছে। বাংলাদেশে এ প্রজাতির দুইটি বৃক্ষের অস্তিত্ব লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ছিলো। এর একটি উপড়ে পড়েছে কয়েকবছর আগে। উপড়ে পড়া গাছটির গুড়ির একাংশ এখনও উদ্যানে স্মৃতি হয়ে পড়ে রয়েছে। অপরটিও উপড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে একমাত্র গাছ হিসেবে বেঁচে থাকা এই টিক ওকটি রক্ষা করা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠেছে মানুষের মনে। একমাত্র গাছটিও যেন দৃশ্যমান থেকে স্মৃতি হয়ে না যায় সে দাবি পরিবেশবাদীদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, লাউয়াছড়া উদ্যানের মূল ফটক অতিক্রম করে ভেতরে প্রবেশ করলেই রাস্তার দুই পাশে সারিসারি বিশাল আকৃতির নানা প্রজাতির বৃক্ষের ফাঁকে এই দুর্লভ 'টিক ওক' বৃক্ষটি দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু গাছের গোঁড়া ঘেঁষে বয়ে চলা একটি খাল 'টিক ওক'টির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খালটি এই গাছের গোড়ার বেশ মাটি সরিয়ে নিয়েছে। এর ফলে ১২/১৩ ফুট পরিধি ও উচ্চতায় ৩৫ ফুটের মত বড় আকৃতির এ গাছটি খানিক হেলে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গাছটি হেলে থাকলেও সুরক্ষা দেওয়ার কোনো ব্যবস্থায় নজর নেই বনবিভাগ কিংবা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির। এছাড়া গাছের বয়স বাড়ায় পোকার আক্রমণও দেখা দিয়েছে। এর ফলে একমাত্র এই প্রজাতিকে রক্ষা করা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ট্যুর গাইড সাজু মারচিয়াং বিডিমর্নিংকে বলেন, এ বৃক্ষটিকে রক্ষায় ছড়ার পাশে গাইডওয়াল দিয়ে মাটি ভরাট করা যেতে পারে। গাছের গোড়া রক্ষা রক্ষা করা গেলে দুর্লভ প্রজাতির গাছটি টিকিয়ে রাখা যাবে। তা না হলে আমাদের কাছে এটিও স্মৃতি হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়ক আ.স.ম. সালেহ সুহেল বিডিমর্নিংকে বলেন, দেশের একমাত্র 'টিক ওক' গাছ এটি। সেটি হেলে পড়ে আছে, কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এছাড়া যে গাছ দেশে মাত্র একটি আছে সেটির বংশ বিস্তারে আজ অবধি কারো মনোযোগ আসেনি। এখন হেলে পড়ছে তাও রক্ষার উদ্যোগ নেই। আমরা অবিলম্বে বৃক্ষটি রক্ষার ব্যবস্থা দেখতে চাই।
এ বিষয়ে লাউয়াছড়া বিটের বিট অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, টিক ওক প্রজাতি এই বৃক্ষটি ঝুঁকিতে রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সামছুল মুহিত চৌধুরী বিডিমর্নিংকে বলেন, আমরা গাছটির অবস্থা জেনেছি। এটি রক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি এর বংশ বিস্তার কিভাবে করানো যায় সেটিও ভাবছেন বন বিভাগ।