দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে এক সময় অতিথি পাখির নিরাপদ আশ্রয় ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাওরটি অতিথি পাখির জন্য ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। বিষটোপ দিয়ে, বিভিন্ন ফাঁদ তৈরি করে অব্যাহত শিকারের ফলে অতিথি পাখিরা ভীত সম্ভ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এই অঞ্চল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে তারা। এরইমধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে পাখির সংখ্যা। তাই কোন পদক্ষেপ না নিলে হুমকিতে পড়বে জীববৈচিত্র্য।
সুদূর সাইবেরিয়া থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে প্রতিবছর ৫০-৬০ প্রজাতির অতিথি পাখি আসতো। এবার ৩০-৩৫ প্রজাতির পাখি এসেছে।
স্থানীয়দের ক্ষোভ, পাখি শিকারিদের বেপরোয়া তৎপরতায় নিধন হচ্ছে অতিথি পাখি। এছাড়াও হাকালুকিতে বেশুমার মহিষ চরানোর ফলে বিনষ্ট হচ্ছে সোয়াম্প ফরেস্ট (জলজ বন)। এতে জীববৈচিত্র্য হারাচ্ছে এই হাওর।
জানা যায়, ২৩৮টি বিল, ১০টি নদী নিয়ে গঠিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার ৫টি উপজেলায় বিস্তৃত হাকালুকি হাওর। শীতকাল শুরুর সঙ্গে শীতপ্রধান দেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করে ৫০-৬০ প্রজাতির অতিথি পাখি। সুদূর সাইবেরিয়া ও হিমালয়ের পাদদেশ লাদাখ থেকে অতিথি পাখি আসে হাকালুকি হাওরে। ঐসব দেশে যখন শীতের তীব্রতা দেখা দেয়, তখন এদেশের আতিথ্য গ্রহণ করতে লাখো অতিথি পাখি ছুটে আসে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। ভীনদেশি বিচিত্র রঙের এসব পাখি হাকালুকি হাওরে আসা শত শত পর্যটকদের বিনোদনের অন্যতম খোরাক।
অতিথি পাখিরা হাকালুকি হাওরের চকিয়া, কাংলি, গোবরকুড়ি, গৌড়কুড়ি, জল্লা, হাওরখাল, পিংলা, কালাপানি, মালাম, বাইয়াগজুয়া, নাগুয়ালরীবাই, ফুটবিল ও কৈয়াকোনা বিলে আশ্রয় নেয়।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাকালুকিতে অনেক দুষ্প্রাপ্য মাছ ফিরে আসার পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু হাওরে মহিষ চরিয়ে জলজ বন (সোয়াম্প ফরেস্ট) ধ্বংস এবং বিষটোপ দিয়ে পাখি শিকারের কারণে অতিথি পাখিরা আগের মত আর আসছে না। আগে ৫০-৬০ প্রজাতির পাখি আসলেও এবার বড়জোর ৩০-৩৫ প্রজাতির পাখি এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে হাওর একসময় পাখিশুন্য হয়ে পড়বে। অবিলম্বে হাওরের জলজ বনে মহিষ চরানো বন্ধ ও পাখি শিকার বন্ধ করা না গেলে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে হাওর এলাকার জীববৈচিত্র্য।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুছ আকন্দ এবং কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সুলতান মাহমুদ শুক্রবার (৪ জানুয়ারি) বিলুপ্ত প্রায় মাছের প্রাপ্যতা সমীক্ষার জন্য হাকালুকিতে যান। এসময় বিভিন্ন স্থানে পানিতে ও ডাঙায় এলোপাতাড়ি অসংখ্য মৃত অতিথি দেখতে পান তারা। ধারণা করা হচ্ছে- ওগুলো বিষটোপে মারা গেছে।
কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, মৃত অতিথি পাখি দেখে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের আশু পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মত প্রকাশ করি। এরইমধ্যে বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেছেন। প্রয়োজনে যৌথ উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। তিনি পাখি শিকার চক্রকে ধরিয়ে দিতে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।