Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদের কাছে যে প্রত্যাশা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ জানুয়ারী ২০১৯, ০৬:২৩ PM
আপডেট: ০৭ জানুয়ারী ২০১৯, ০৬:২৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর টানা তৃতীয়বারের মতো মন্ত্রিসভা গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আধুনিক ও উন্নত রাষ্ট্র গড়ার অঙ্গীকারে আজ সোমবার (০৭ জানুয়ারি) শপথ নিয়েছে নতুন মন্ত্রিসভা।এবারের মন্ত্রী পরিষদে তথ্যমন্ত্রী হয়েছেন চট্রগ্রাম-৭ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি হাছান মাহমুদ চৌধুরী। এর আগে মন্ত্রনালয়টির দায়িত্বে ছিলেন হাসানুল হক ইনু।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত এই রাজনীতিবিদ ১৯৬৩ সালের ৫ জুন জন্মগ্রহণ করেন। এর আগে তিনি একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একজন সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন হাসান মাহমুদ। চট্টগ্রামে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। সাংবাদিক মহল ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে তার বেশ গ্রহণযোগ্যতা আছে। তিনি আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবে প্রচার-প্রচারণায় বেশ জোরালো ভূমিকা রেখেছেন।

আলোচিত সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্বা আইনের এ বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ সহ মোট ৫টি ধারা বিলুপ্ত করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ পাস হয়। এ আইনটি প্রস্তাবের পর গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমের কর্মীসহ বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচনা করে।

তবে গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ এসব বিষয়ে সদ্য দাযিত্ব পাওয়া তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের বিষয়ে তার কাছ থেকে কেমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা এবং তার এই দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে বিডিমর্নিয়ের সাথে কথা হয় তরুণ ও সাংবাদিক অঙ্গনের একাধিকজনের সঙ্গে।

প্রত্যাশা পূরণ হবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান গণমাধ্যমকর্মী শাহরিয়ার বাবু। তিনি বিডিমর্নিংকে বলেন, আমি চাই অবাধ এবং মুক্ত গণমাধ্যম। সেই সাথে আমার ব্যক্তিগত চাওয়া গণমাধ্যমগুলোকে যেন সরকার একটা নীতিমালার মধ্যে নিয়ে আসে এবং এখানে যারা কাজ করবে তাদের চাকরির নিরাপত্তা, মূল্যায়ন দেয়া হোক।

ঢাকা কলেজে পড়ুয়া মুন্না নিশান যেকোনো বিষয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা শতভাগ বাস্তবায়ন চান। তিনি বলেন, টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ, পত্রিকাসহ যতো গণমাধ্যম আছে তাতে সত্যটা হাইলাইটস করা এবং মিথ্যা সংবাদও বন্ধ করতে উদ্যোগ নিবে, তা যদিও কখনো সরকারের বিপক্ষে হয়। এছাড়া গণমাধ্যমের উপর বাড়তি চাপ যেন না থাকে, যেমন এবারের নির্বাচনে অনেক স্থানে ভোট কারচুপির সংবাদ প্রকাশে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে গণমাধ্যম।

ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী শারমিন জাহান বলেন, ‘বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে কোনো সরকার কাজ করেছে কিনা আমার জানা নেই উল্টে সংবাদকর্মীদের উপর চাপ হামলা মামলার ঘটনা অহরহই হয়েছে। এবার আশা করি শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সদ্য দায়িত্ব পাওয়া তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ গণমাধ্যমের স্বপক্ষে কাজ করেবেন। যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবাধ মত প্রকাশের স্বাধীনতা চান বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান কলেজের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান। তিনি বলেন, আমাদের দেশে তথ্যপ্রযুত্তির ব্যাপক প্রসারের সাথে বেড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মত প্রকাশের প্রবণতা। কিন্তু বিগত সময়ে তা রুদ্ধ হয়েছে নানা কারণে। আমি চাই এবারের মন্ত্রীসভায় এসব বিষয়ে বিস্তর আলোচনা করে সঠিক সমাধানে পৌছাবেন ড. হাছান মাহমুদ।

স্টেট ইউনিভার্সিটির সংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ মন্ডল বলেন, ‘ড. হাসান মাহমুদ সম্পর্কে যতোদূর জানি তিনি প্রগতিশীল লোক। এর আগে বন ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। বৃটিশদের থেকে নেওয়া কালো আইন সংজোযন হইছে এর আগেই যেখানে সরকারি কোন তথ্য অনুমোদন ছাড়া প্রকাশ করা যাবে না। যেহেতু সরকার রেকর্ড পরিমান ভোট পেয়ে সরকার গঠন করেছে তাই সে চেষ্টা করবে সবসময় নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখতে। তাই সরকার এর উপর বর্তায় এমন কোন কিছু যাতে না হয় তার সম্পর্কে সরকার এর নজরদারি আগের থেকে কঠোর হবে। কেননা আজ দেখলাম গুজব ছড়ালে বিদেশ থেকেও লাভ নাই কেননা পুলিশের থেকে যে সকল দেশে প্রবাসীরা থাকে তাদের ওয়ার্ক পারমিট কেটে দেওয়া হবে। এতো সব অবরোধ স্বাধীন মত প্রকাশে কতটুকু সাহায্য করবে তা নিয়ে আমি সন্দিহান’।

বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক ও গবেষক সরোজ মেহেদী বিডিমর্নিংয়ে প্রকাশিত তার এক মতামতে বলেন, ‘ধারণা করি স্বল্প সময়ের মধ্যেই সংবাদপত্র কর্মীদের জন্য নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করা হবে। এ সরকারের শেষ আমলে ৮ ওয়েজবোর্ড গঠন করাসহ সাংবাদিকদের জীবনমান উন্নয়নে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে ঘোষণা করলে হবে না। ক’টি সংবাদপত্রের কর্মীরা ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন তা নিশ্চিত করতে হবে। দু'একটি পত্রিকা ছাড়া আর কেউই কর্মীদের ঠিকভাবে ওয়েজবোর্ড দিচ্ছে না। তবে কাগজে সাইন করিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অপেক্ষায় থাকবো তথ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেন দেখার জন্য। সংবাদপত্র কর্মীদের জন্য ওয়েজবোর্ড থাকলেও টেলিভিশন-অনলাইন-রেডিও কর্মীরা চলছেন ‘আল্লাহর নামে চলিলাম’ এর মতো করে। আশা করি তাদের খুব দ্রুত সময়ে একটি নির্দিষ্ট বেতন কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা হবে।নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পরিবর্তন আনবেন। আশা করি তথ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন’।

সাংবাদিক সমাজ, সুশীল সমাজ ও সাংস্কৃতিক সমাজ মনে করে নতুন তথ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি আন্তরিকভাবে বিভিন্ন সমস্যাদি সমাধান করতে সক্ষম হবে। সাংবাদিক মহলে ও তথ্য সম্পর্কিত বিষয়াদি সম্পর্কে যেসব বিষয়ে সাংবাদিকদের অসন্তুষ্টি ছিল সেসব বিষয়ে তিনি সঠিক সমাধান করবেন বলে সাংবাদিক সমাজ মনে করে।

মন্ত্রিসভায় ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রী থাকছেন ৩ জন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ ছাড়াও দায়িত্ব পাচ্ছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন। তবে বাদ পড়ছেন পুরনোদের অনেকেই। পাশাপাশি ঠাঁই পেতে যাচ্ছেন অনেক নতুনরা।

২৪ জন মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন, আ. ক. ম মোজাম্মেল হক -মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী, ওবায়দুল কাদের -সড়ক ও সেতুমন্ত্রী, ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক -কৃষি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল -স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, তথ্যমন্ত্রী আনিসুল হক, আইনমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, এলজিআরডিমন্ত্রী, দীপুমনি -শিক্ষামন্ত্রী, এ কে আব্দুল মোমেন -পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম এ মান্নান -পরিকল্পনামন্ত্রী, নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন -শিল্পমন্ত্রী, গোলাম দস্তগীর গাজী -পাট ও বস্ত্র, জাহেদ মালেক -স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সাধন চন্দ্র মজুমদার -খাদ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী -বাণিজ্যমন্ত্রী, নুরুজ্জামান আহম্মেদ -সমাজকল্যাণ মন্ত্রী, শ ম রেজাউল করিম -গণপূর্ত মন্ত্রী, শাহাব উদ্দীন -পরিবেশ ও বন মন্ত্রী, বীর বাহাদুর উ শে সিং -পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ -ভূমিমন্ত্রী, নুরুল ইসলাম সুজন -রেলমন্ত্রী, স্থপতি ইরাফেস ওসমান -বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী, মোস্তফা জব্বার -আইসিটি মন্ত্রী।

প্রতিমন্ত্রী ১৯ জন, কামাল আহমেদ মজুমদার -শিল্প প্রতিমন্ত্রী, নসরুল হামিদ -বিদ্যু প্রতিমন্ত্রী, খালিদ মাহমুদ চৌধুরি -নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী, জাহিদ আহসান রাসেল -যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, জুনায়েদ আহমেদ পলক -আইসিটি প্রতিমন্ত্রী, ইমরান আহমেদ -প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী, আশরাফ আলী খান খসরু -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, জাকির হোসেন -প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী, ফরহাদ হোসেন -জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য -এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী, জাহিদ ফারুক -প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, মুরাদ হোসেন -স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, শরীফ আহমেদ -সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী কে. এম খালিদ -সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মাহবুব আলী -বিমান প্রতিমন্ত্রী, শেখ মো. আব্দুল্লাহ -ধর্ম প্রতিমন্ত্রী, শাহরিয়ার আলম -পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, মুন্নুজান সুফিয়ান -শ্রম প্রতিমন্ত্রী, ডা. এনামুর রহমান -ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী।

উপমন্ত্রী ৩ জন, বেগম হাবিবুন নাহার -পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী, এনামুল হক শামীম -পানিসম্পদ উপমন্ত্রী, মুহিবুল হাসান নওফেল -শিক্ষা উপমন্ত্রী।

Bootstrap Image Preview