Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

গণমাধ্যমকর্মীদের ভয়কে জয়ের নাবিক হবেন তথ্যমন্ত্রী!

সরোজ মেহেদী।।
প্রকাশিত: ০৭ জানুয়ারী ২০১৯, ০৪:২২ PM
আপডেট: ০৭ জানুয়ারী ২০১৯, ০৪:২২ PM

bdmorning Image Preview
ছবিঃ বিডিমর্নিং


সরোজ মেহেদী।।

গত ২৫ ডিসেম্বর আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন মাটি ও মানুষের কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। কবি তার অমলকান্তি কবিতায় বলেছেন, 'অমলকান্তি আমার বন্ধু,/আমরা কেউ মাস্টার হতে চেয়েছিলাম,/কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।/অমলকান্তি সে-সব কিছু হতে চায়নি।/সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল!'

সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর নতুন মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করা হয়ে গেছে রোববার। এই নতুন সরকার, নতুন মন্ত্রীদের কারো কাছে কি আমার কিছু চাওয়ার আছে! শিল্পী কবীর সুমন বলেছেন, ‘অমরত্বের প্রত্যাশা নেই, নেই কোনো দাবি দাওয়া...’। আমারও মনে হয় তাদের কাছে চাওয়ার কিছু নেই! আমার না আছে দলদাস বুদ্ধিজীবী হওয়ার মতো নির্লজ্জতা, না আছে বিপ্লবী বনে যাওয়ার সাহস। আমি কেবল আমার মতো, আমার ছোট্ট জায়গাটুকু নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। আমার মতো করে আমার কাজটা করতে চাই। 'রাজাদের' কাছে তাই প্রত্যাশা রাখি না।

অনলাইনে নতুন মন্ত্রীদের নামগুলো পড়তে পড়তে এক জায়গায় এসে আটকে গেলাম। তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ড. হাছান মাহমুদ। এ খবরটা যতটা চমকের তারচেয়েও বেশি বিস্ময়কর হচ্ছে হাসানুল হক ইনুর মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার খবরটি। অন্তত তার সরস মুখটির জন্য হলেও তাকে মন্ত্রিসভায় রেখে দেওয়া হবে ভেবেছিলাম।

হাছান মাহমুদ এবারের সভায় নতুন মুখ। তবে তিনি মন্ত্রী হিসেবে নতুন নন। এর আগে বর্তমান সরকারেরই বন ও পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তাকে নিশ্চয়ই অনেক কিছু বিবেচনা করেই তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যারা সরকার চালান, যারা সরকারে আছেন তারা আমাদের চেয়ে ভালো বোঝেন, বেশিও বোঝেন। বোঝেন বলেই ১৬ কোটি বাঙালির মনোরঞ্জন করে ক্ষমতার শক্ত হাতকে আরও পোক্ত করেন।

অবশ্য বাংলাদেশ-ভারতের মতো দেশগুলোতে মন্ত্রী হওয়ার একমাত্র মাপকাঠিই হচ্ছে দলীয় আনুগত্য। এখানে বিশেষ যোগ্যতার জন্য অদলীয় বা কম-দলীয় কাউকে এনে মন্ত্রণালয়ে বসানো হবে, তা চিন্তাও করা যায় না।

ফিরে যাই নচিকেতার কাছে, 'আজকে যিনি কয়লা মন্ত্রী/কালকে দেখেন শিক্ষা/তাই, কয়লা কালো শিক্ষা নিয়ে/মানুষ করে ভিক্ষা।' প্রতিবেশী দেশ ভারত বা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের চিত্র তুলে ধরতে নচিকেতা শব্দের যে খেলা খেলেছেন তা অনায়াসে খেলে দেওয়া যায় বাংলাদেশের বেলা। আমরা বরং ভারতের তুলনায় এক কাঠি সরস।এখানে বিশেষ কারণ ছাড়াই হাওয়া ভবন হয়, সে ভবনের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষেরও অভাব হয় না! এখানে আজ যিনি মন্ত্রী হিসেবে ব্যর্থ হয়ে বিদায় নেন, কাল তাকে বসানো হয় আর‌ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে।

সংবাদকর্মীদের পকেট ভরা থাকুক আর ফাঁকা থাকুক, এ কথা বলতেই হয় সংবাদ অফিসগুলো একটা কর্পোরেট রূপে দাঁড়িয়েছে সম্প্রতি। জাতি হিসেবে বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন নিঃসন্দেহে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ। এ যুদ্ধে পেশাজীবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখনেওয়ালাদের কাতারে সাংবাদিকরা থাকবেন। সে সময় সাংবাদিকতা ছিল আমানতের মতো একটা ব্যাপার। পুরো জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন সাংবাদিকেরা। সময়ের ব্যবধানে আজ আর সাংবাদিকদের সে অবস্থান নেই। এতে কার কী লাভ-ক্ষতি হিসেব না করলেও চলবে। তবে একটি জাতি ও দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ কোনো মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রী করবেন না। সাংবাদিকদের আত্মোপলব্ধিই তাদের ‘জাতির বিবেকে’র মর্যাদা ফিরিয়ে দেবে।

ধারণা করি স্বল্প সময়ের মধ্যেই সংবাদপত্র কর্মীদের জন্য নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করা হবে। এ সরকারের শেষ আমলে ৮ ওয়েজবোর্ড গঠন করাসহ সাংবাদিকদের জীবনমান উন্নয়নে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে ঘোষণা করলে হবে না। ক’টি সংবাদপত্রের কর্মীরা ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন তা নিশ্চিত করতে হবে। দু'একটি পত্রিকা ছাড়া আর কেউই কর্মীদের ঠিকভাবে ওয়েজবোর্ড দিচ্ছে না। তবে কাগজে সাইন করিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অপেক্ষায় থাকবো তথ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেন দেখার জন্য। সংবাদপত্র কর্মীদের জন্য ওয়েজবোর্ড থাকলেও টেলিভিশন-অনলাইন-রেডিও কর্মীরা চলছেন ‘আল্লাহর নামে চলিলাম’ এর মতো করে। আশা করি তাদের খুব দ্রুত সময়ে একটি নির্দিষ্ট বেতন কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা হবে।নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পরিবর্তন আনবেন। আশা করি তথ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন।

সম্প্রতি অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার এক কলামে লিখেছেন, ‘একটা জিনিস স্পষ্ট এই দেশে এখন মানুষ মন খুলে কথা বলতে ভয় পায়, পত্রপত্রিকাও যথেষ্ট সতর্ক।’ অধ্যাপক ইকবাল এ সরকারের সবচেয়ে বিশ্বস্ত, অনুগত বুদ্ধিজীবীদের একজন বলে পরিচিত। এই লেখক ও শিক্ষাবিদের বর্তমান সময় নিয়ে যে মূল্যায়ন তা কি অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন তথ্যমন্ত্রী?

ভয় কেবল অন্ধকারেরই জন্ম দেয়। অন্ধকার জন্ম দেয় গুজবের, অশুভ কিছুর। আশা করি, ক্ষমতা ধরে রাখা ক্ষমতাবান সরকারের কর্তা মশাইয়েরা সমাজ থেকে ভয় দূর করতে সচেষ্ট হবেন। আর তথ্যমন্ত্রী হবেন তার প্রধান সৈনিক।

লেখক: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও গবেষক।

বাংলাদেশ প্রধান, ফিফথ ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশন (মেডকম-২০১৯), কলম্ব-কুয়ালালামপুর।

যোগাযোগ: [email protected]

বি.দ্র: এই লেখার দায়ভার লেখকের একান্তই নিজস্ব। তাই প্রকাশিত লেখার জন্য বিডিমর্নিং কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

Bootstrap Image Preview