Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বছরের শুরুতেই ঊর্ধ্বমুখী চালের দাম

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ জানুয়ারী ২০১৯, ০৩:১৮ PM
আপডেট: ০৮ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:৪৯ AM

bdmorning Image Preview


দীর্ঘদিন চালের দাম স্থিতীশীল থাকলেও বছরের শুরুতে হঠাত করে বাড়তে শুরু করেছে চালের দাম। সব ধরেনের চালের দাম ৪-৬ টাকা বেড়েছে। এতে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছেন।

দাম বৃদ্ধির পেছনে মিলারদের কারসাজি রয়েছে, অভিযোগ বাজার সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের পর মিল পর্যায় থেকে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বাজার মনিটরিং নেই। এ সুযোগে মিলাররা এক হয়ে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে।

সোমবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এবং দিনাজপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিল পর্যায়ে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫১ টাকা কেজি। সে চাল পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৫৩ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে মিনিকেট চাল মিল পর্যায়ে বিক্রি হয় ৪৮ টাকা। আর রোববার এ চাল কেজিতে ৪ টাকা বেশি দামে বিক্রি করেন মিল মালিকরা। এক সপ্তাহ আগে একই চাল পাইকারি বাজারে বিক্রি হয় ৪৯ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ে ৪ টাকা। এক সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হয় ৪৮-৫০ টাকা। আর রোববার খুচরা বজারে এই চালের দাম কেজিতে ৫-৬ টাকা বেড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, হঠাৎ চালের দাম বাড়া অযৌক্তিক। নির্বাচনের সময় পরিবহন চলাচলে বাধা ছিল। সে সময়ে দুই-একদিন চাল সরবরাহে বাধা পড়তে পারে। এজন্য দাম বাড়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার পর চালে দাম স্বাভাবিক থাকার কথা। কিন্তু এরপরও যেহেতু দাম কমছে না, তাই সরকার সংশ্লিষ্টদের এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। এছাড়া দাম যেন আর না বাড়ে, সে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

মিলাররা রোববার বিআর-২৮ চাল প্রতি কেজি ৩৫ টাকা বিক্রি করে। এক সপ্তাহ এ চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৩০ টাকা। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি বিআর-২৮ চাল বিক্রি হয় ৩৭ টাকা। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৩২ টাকা। মিল পর্যায়ে এই চালে দাম বাড়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে কেজিতে দাম বেড়েছে ৬ টাকা। এদিন খুচরা পর্যায়ে একই চাল বিক্রি হয়েছে ৪২-৪৪ টাকা কেজি। আর এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৩৮-৪০ টাকা।

এছাড়া মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা মিল পর্যায়ে রোববার বিক্রি হয় ৩৩ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে এ চাল বিক্রি হয় ৩০ টাকা কেজি। পাইকারি বাজারে একই চাল রোববার বিক্রি হয় ৩৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এ চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৩২ টাকা। রোববার খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৩৮ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৩৪-৩৬ টাকা। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে এই চালের দাম বাড়ে কেজিতে ২-৪ টাকা।

 

জানতে চাইলে রাজধানীর মালিবাগ বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা খালেক রাইস এজেন্সির মালিক দিদার হোসেন বলেন, নির্বাচনের আগে যদি নিয়মিত বাজার তদারকি করা হতো; মিল পর্যায় থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা বাজারে নিয়মিত মনিটরিং করা হতো। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের পর বাজার তদারকি হচ্ছে না। যে কারণে মিল মালিকরা সুযোগ বুঝে এক হয়ে সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, শুনেছি মিল মালিকরা এক মাস আগে একটি বৈঠক করেন। সেখানে তারা সিদ্ধান্ত নেন সরকার যেন আর চাল আমদানি না করে। কারণ চাল আমদানির কারণে তারা লসের মধ্যে আছে। তাই এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সুযোগ বুঝে সব ধরনের চালের দাম বাড়াতে হবে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ধানের দাম বেশি, এই অজুহাতে মিল মালিকরা হঠাৎ চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা বলছেন, ধানের দাম বাড়ার কারণে চাল তৈরিতে খরচ বেশি হচ্ছে। যে কারণে চালের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে দেশে যে পরিমাণে চাল আছে তাতে চালের দাম বাড়ার কথা না।

একই বাজারের খুচরা পর্যায়ে থেকে চাল কিনতে আসা দিনমজুর সিকান্দার আলী বলেন, কিছুদিন সরকারের তৎপরতায় চালের দাম হাতের নাগালে ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বছরের শুরুতেই চালের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। যে কারণে আমাদের মতো দিনমজুরদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই সরকারের উচিত তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেয়া। তা না হলে আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হবে। মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। বেশি দামে ধান কিনে মিলে আনুষঙ্গিক খরচ ধরেই চালের দাম নির্ধারণ করতে হয়। এতে বর্তমানে চালের দাম কিছুটা বাড়তি রেখে বিক্রি করতে হচ্ছে।

দিনাজপুর জেলা চালকল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা হুমায়ুন ফারুক চৌধুরী শামীম জানান, বাজারে ধানের দাম অনেক বেশি। এরপরও ধান পাওয়া যাচ্ছে না। বেশি দামে ধান কেনায় চাল উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই চালের দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, বাজারে সবচেয়ে বেশি চালের চাহিদা রয়েছে বিআর-২৮ ও মিনিকেট জাতের চালে। আর এ জাতের ধানের উৎপাদন হয় এপ্রিলের দিকে। এ সময়ে এই জাতের ধান না পাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে।

Bootstrap Image Preview