Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

গাজীপুরের মধু রপ্তানি হচ্ছে বহিঃবিশ্বে

রাজীব আল আরাফাত, গাজীপুর প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০৭ জানুয়ারী ২০১৯, ০২:৩৭ PM
আপডেট: ০৭ জানুয়ারী ২০১৯, ০২:৩৭ PM

bdmorning Image Preview


গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় বাঙ্গুড়ি, বাহাদুরপুর জমিদার বাড়ি এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চলছে মৌচাষ। এসব মধু দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হচ্ছে জাপান ও ভারতে।

বাংলাদেশ বি-কিপারস্ সূত্রে জানা গেছে, শুধু মনিরুল ইসলাম রিপন ও এবাদুল্লাহ আফজাল-ইনয় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এবং স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় অল্প খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় মৌচাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন অনেকেই। এসব মৌচাষিদের মধু সংরক্ষনের জন্য গড়ে উঠেছে কারখানাও। প্রতিবছর নভেম্বরের মাঝামাঝি মধু সংগ্রহের কাজ শুরু হয়।

এ কাজ চলে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত। প্রথমে সরিষা ক্ষেতের মাঝে বক্স বসিয়ে মৌ চাষ শুরু করা হয়। পর্যায়ক্রমে ধনিয়া, কালোজিরা ক্ষেত, লিচুবাগান, মিষ্টিকুমড়াসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেতের পাশে এ মৌচাষ করা হয়ে থাকে। গত মৌসুমে মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৪ হাজার মেট্রিকটন। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩ হাজার মেট্রিক টন মধু। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারতে ৫০০ মেট্রিক টন ও জাপানে ২০০ মেট্রিক টন মধু রপ্তানি করা হয়েছিল।

বাঙ্গুড়ি ও জমিদার বাড়ি এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে এ মৌচাষ করছেন মনিরুল ইসলাম রিপন। তিনি বাংলাদেশ বি-কিপারস্ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক। তার বাড়ি গাজীপুর জেলায়। ওই এলাকায় তার ১১০টি বক্স আছে।

অপরদিকে একই উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে মৌচাষ করছেন এবাদুল্লাহ আফজাল। তিনি বাংলাদেশ বি-কিপারস্ ফাউন্ডেশনের সভাপতি। তার বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। ওই এলাকায় তার ১২৪টি মৌবাক্স আছে। দু'জনের মোট ২৩৪টি মৌবাক্স আছে।

তারা জানান, প্রতিটি বাক্স থেকে সপ্তাহে ৩-৫ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। সে হিসেবে ২৩৪টি বাক্সে সপ্তাহে গড়ে ৯০০ থেকে ৯৫০ কেজি মধু উৎপাদন হয়। প্রতি কেজি মধুর মূল্য ৩০০-৪০০ টাকা। কখনো কখনো এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হয়। এতে সপ্তাহে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকার ওপরে মধু বিক্রি করেন তারা।এভাবে অল্পখরচে মৌচাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ বি-কিপারস্ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোঃএবাদুল্লাহ আফজাল বলেন, বিসিক মাধ্যমে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রায় ৬ হাজার মৌচাষি রয়েছে। এরমধ্যে ৪ হাজার মৌচাষি সক্রিয় আছে। এসব মৌচাষির মধ্যে ৬০০ মৌচাষি আমাদের বাংলাদেশ বি-কিপারস্ ফাউন্ডেশনের রেজিষ্ট্রেশনপ্রাপ্ত। এর বাইরেও দেশে ছোট-বড় অনেক মৌচাষি আছে। গত মৌসুমে আমাদের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার মেট্রিক টন। এবার মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে উৎপাদন কিছুটা কম-বেশি হতে পারে।

বাংলাদেশ বি-কিপারস্ ফাউন্ডেশন-এর সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামরিপন বলেন, আমি এমন সময় মধু চাষ শুরু করেছিলাম তখন মানুষ তাদের ফসলের পাশে মৌবাক্স বসাতে দিত না। এখন মধু চাষ করে আমরা লাভবান হচ্ছি। সেই সঙ্গে মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে সরিষার ফলন বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকও লাভবান হচ্ছেন। যার কারণে এদিকে যেমন দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে অপরদিকে মধুতে দেশের ভিটামিন-এ এর ঘাটতিপূরণ হচ্ছে।

কালিয়াকৈর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অশীষ কুমার কর বলেন, মৌমাছিরা ফুলের পরাগায়ন ঘটানোর ফলে সে সব জমিতে সরিষার ফলন ১৫- ২০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে। একইভাবে নানা ধরনের রবিশষ্যেরই ফলনবৃদ্ধি হবে। এছাড়া মধু দেশের চাহিদাপূরণ করে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে আসছে খামারিরা। মধু চাষ করে একদিকে লাভবান হচ্ছে মৌচাষিরা অপরদিকে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। মৌচাষ সম্প্রসারণ হলে ভবিষ্যতে দেশ ও জাতি আর্থিকভাবে লাভবান হবে।


 

Bootstrap Image Preview