Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

পাটগ্রামে থামছে না বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন 

আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০৩ জানুয়ারী ২০১৯, ০৩:২৩ PM
আপডেট: ০৩ জানুয়ারী ২০১৯, ০৩:২৪ PM

bdmorning Image Preview


পাটগ্রাম উপজেলার ধরলা নদীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধ বোমা মেশিনের মাধ্যমে বালু ও পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমি, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বসতবাড়ি। বালু ও পাথর উত্তোলনের কাজ প্রকাশ্যে চললেও স্থানীয় প্রশাসন তা দেখেও না দেখার ভান করে চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে রাজনৈতিক ছত্রছায়াতে চলছে পাথর উত্তোলনের জমজমাট ব্যবসা।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী বোমা মেশিন মালিকের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করে পাথর উত্তোলনের মৌখিক অনুমতি দিচ্ছে। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পাটগ্রাম উপজেলার জোংরা ইউনিয়নের ডাঙ্গিরপাড় বগুড়াপাড়া এলাকায় ১৮টি, অদূরের ঘাট এলাকায় ১৫টি ও পাটগ্রাম সদর ইউনিয়নের বেলতলী এলাকায় ১০ টিসহ ওই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক বোমা মেশিন দিয়ে প্রতি নিয়ত পাথর ও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। 
  
জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে উচ্চ আদালত 'বোমা মেশিন' ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাটগ্রামে ধরলা নদীতে পাইপ বসিয়ে উচ্চক্ষমতাপূর্ণ ছয় সিলিন্ডারযুক্ত পাওয়ার পাম্প ব্যবহার করে এযন্ত্র দিয়ে মাটির ১০০ থেকে ২০০ ফুট তলদেশ থেকে পাথর ও বালু উত্তোলন করছেন মেশিনের মালিকেরা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই সব এলাকায় অর্ধশতাধিক বোমা মেশিন দিয়ে গত ২ মাস ধরে চলছে পাথর ও বালু উত্তোলন। প্রশাসনের লোকজন অভিযানের আসার আগেই মেশিন মালিকরা অভিযানের খবর পেয়ে যায়। প্রশাসনের কতিপয় আসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী মেশিন মালিকদের অভিযানের আগাম খবর দিয়ে থাকে। ফলে মেশিন মালিকরা পাথর শ্রমিকদের সহায়তায় মুহুর্ত্বের মধ্যে মেশিন সরিয়ে ফেলে। তারপর দুই-একদিন পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকে। পরিবেশ শান্ত হলে আবারও শুরু হয় বালু ও পাথর উত্তোলন। অনেক সময় কৌশল পাল্টায় 'বোমা মেশন' এর মালিকেরা। তাঁরা 'রাতচোরা' কৌশল নিয়ে থাকে। দিনে বন্ধ থাকলে রাতে ১০ টার পর ভাসমান স্থাপনা বসিয়ে শুরু হয় তাদের পাথর উত্তোলন। 

পাথর ব্যবসায়ী সেজে কথা হয় কয়েকজন মেশিন মালিক ও পাথর উত্তোলন শ্রমিকের সঙ্গে। তাঁরা জানান, দিনের চেয়ে রাতে নিরাপদ বেশি, তাই রাতে চলে বেশির ভাগ মেশিন। আর স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে একজন লাইনম্যান রয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই মেশিন প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা দিতে হয় লাইনম্যানকে। প্রতি রাতের আদায়কৃত প্রায় ৬ লক্ষ টাকা হিস্যা অনুযায়ী চলে যায় স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্যাকেটে। এভাবেই অবৈধ বোমা মেশিনের জমজমাট ব্যবসার বৈধতা মিলছে। 

শ্রমিকদের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, প্রশাসনের অভিযান এড়াতেই নদীতে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন দুটি কৌশলে চলে। একটি হলো অভিযান শুরু হলে মেশিন রক্ষার কৌশল। সেই জন্য ভাসমান মেশিন স্থাপনা তৈরি। আরেকটি, বালুচরে মেশিন লুকিয়ে রাখার কৌশল। নদীর জলমগ্ন একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্থাপনা তৈরি করে বসানো হয় একাধিক মেশিন।

এতে শ্রমিকের সংখ্যা থাকে তিন-চারজন। ঘুরে ঘুরে মেশিন চলে। অভিযানের খবর পেলে ওই মেশিন পানিতে ফেলে রাখা হয়, তা না হলে নদীর পানির মধ্যবর্তী স্থানে বা উত্তোলিত বালুচরে (স্তুপ) লুকিয়ে রাখা হয়। পরে লোকবল সরিয়ে ফেলা হয়। মেশিনের সাইলেন্সার (শব্দ) পাইপ পানিতে ফেলে রাখা হয়। ফলে অভিযানের সময় মেশিনটি হাতের নাগালে না পাওয়ায় প্রশাসন তা ধ্বংস করতে পারে না। অভিযান শেষে মেশিনের মালিকেরা ফের পাথর ও বালু উত্তোলন শুরু করেন।

পাটগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরজু মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, প্রতিনিয়ত বোমা মেশিন ধ্বংস করা হয়েছে। যারা চালাচ্ছে তাদের অধিকাংশ চলছিল নানা কৌশলে। যতই কৌশল করুক মেশিনের মালিক ও ব্যবসায়ীরা। আমরাও কৌশল পাল্টিয়ে এখন অভিযান চালিয়ে নদী থেকে সব মেশিন উচ্ছেদ করছি।

পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল করিম সাংবাদিকদের জানান, ভোটের ব্যস্ততার কারণে  কয়েকদিন অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। এখন থেকে নিয়মিত অভিযান চলছে। যে কোনো মুল্যই অবৈধ এ পাথর উত্তোলন বন্ধ করা হবে।  
 

Bootstrap Image Preview